নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তবে এর মধ্যেও অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রেখেছে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ (আইইউবি)। ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে বর্তমানে পাঁচটি অনুষদে সাত হাজার ৮৪৯ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। সম্প্রতি এক ভার্চুয়াল সাক্ষাৎকারে প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর মিলান পাগন জানিয়েছেন তাঁদের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের ভাবনা।
প্রফেসর মিলান পাগন বলেন, ‘অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম বাংলাদেশে নতুন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ সম্পর্কে খুব বেশি অভিজ্ঞতা নেই। আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার কিছুদিন পরই অনলাইনে ক্লাস শুরু করেছি। করোনার এই পরিস্থিতিতে আগামী জুলাইয়ে শুরু হওয়া গ্রীষ্মকালীন (সামার) সেমিস্টার পুরোপুরি অনলাইনে চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছি। সেই লক্ষ্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল তৈরি করা হয়েছে।’
অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তুতির ব্যাপারে মিলান পাগন বলেন, ‘আমরা উন্নত প্রযুক্তির স্টুডিও প্রস্তুত করার পাশাপাশি ট্রেনিং ম্যানুয়াল তৈরি করেছি। তবে ঢাকার বাইরে দূরবর্তী এলাকায় অবস্থানরতদের নিয়ে সরকারের আরো চিন্তা করা উচিত। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য বিনা মূল্যে বা কমমূল্যে ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করার বিষয়টি ভাবা দরকার।’
নতুন শিক্ষার্থীদের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে উপাচার্য আরো বলেন, ‘সামার সেমিস্টারে প্রথমে এক সপ্তাহ পরীক্ষামূলকভাবে ক্লাস নেব। এতে করে চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে জানা যাবে। অনলাইন কার্যক্রমের সঙ্গে অবকাঠামো, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথড ও বিদ্যুত্ব্যবস্থা জড়িত। প্রত্যন্ত গ্রামে এসব সুবিধার ঘাটতি রয়েছে। সে ক্ষেত্রে ঢাকার বাইরে অবস্থান করা শিক্ষার্থীরা বেশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। তবে সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করার দিকে আমাদের দৃষ্টি থাকবে।’
আইইউবি উপাচার্য বলেন, ‘কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় করোনার এই সময়ে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ২০ থেকে ২৫ শতাংশ কমানোর বিষয়ে চিন্তা করছে। তবে আমরা তা অনুসরণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ অনেক শিক্ষার্থীর ডিসকাউন্ট প্রয়োজন পড়ে না। আবার যাদের আর্থিক টানাপড়েন আছে তাদের মাত্র ২০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দিলেও পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীভেদে ২০ থেকে ১০০ শতাংশ টিউশন ফি মওকুফ করার ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই, ট্রাস্টি বোর্ড অর্থ দিয়ে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা চালিয়ে নিতে অবদান রাখছে। কল্যাণ তহবিল থেকেও সহযোগিতা করা হচ্ছে। কিস্তিতে টিউশন ফি পরিশোধেরও সুযোগ দিয়েছি।’
প্রফেসর মিলান পাগন বলেন, ‘আমরা আইইউবিতে স্টুডেন্ট ওয়েলফেয়ার ফান্ড গঠন করেছি। আমাদের পাঁচ শতাধিক স্টাফ আছে। তাঁরা সবাই এই ফান্ডে সহায়তা করছেন। আগামী জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই ফান্ড থেকে বৃত্তি হিসেবে শিক্ষার্থীদের সাহায্য করা হবে। ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনার ক্ষেত্রে, ডিভাইস কেনার ক্ষেত্রে, টিউশন ফি পরিশোধ করতে শিক্ষার্থীদের এই টাকা কাজে লাগবে।
করোনাভাইরাস-পরবর্তী শিক্ষাব্যবস্থা সম্পর্কে আইইউবি উপাচার্য বলেন, ‘জুলাই মাস থেকে আমরা শতভাগ অনলাইন কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমরা এই ব্যবস্থা অব্যাহত রাখার চিন্তা করছি। কিন্তু এটা আদর্শ কোনো ব্যবস্থা নয়। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কিছু ক্লাস অনলাইনে, আবার কিছু ক্লাস মুখোমুখি নিচ্ছে। কারণ অনেক ক্লাসের ক্ষেত্রে সরাসরি কথোপকথনটা জরুরি। বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমতিসাপেক্ষে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের মডেল অনুসরণ করার বিষয়ে ভাবছি।’
Discussion about this post