নিউজ ডেস্ক
করোনাভাইরাসের কারণে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে টেলিভিশনে ক্লাস প্রচারসহ বেসরকারি পর্যায়ে নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে উচ্চশিক্ষায় এখনও কার্যকর উদ্যোগ নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। ফলে এ পর্যায়ের প্রায় ২৮ লাখ শিক্ষার্থীই পড়াশোনার বাইরে। অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে পারেনি অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজগুলো।
এমন অচলাবস্থার কারণে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় সেশনজটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের লাখ লাখ শিক্ষার্থী বড় ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছেন বলে আশঙ্কা করছেন তারা। তাদের জীবন থেকে হারিয়ে যেতে পারে কমপক্ষে এক বছর। এ অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে ৪৬ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) ভার্চুয়াল বৈঠকে বসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৩২ লাখ। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী প্রায় তিন লাখ। আর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোয় রয়েছে সাড়ে ২৪ লাখ শিক্ষার্থী। এছাড়া বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে পৌনে চার লাখ শিক্ষার্থী। কিন্তু করোনাকালে শুধু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। তারা চলতি সেমিস্টারের পরীক্ষা নিয়েছে। জুলাইয়ে সামার সেমিস্টারের ভর্তিও শুরু হবে।
তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কলেজগুলোকে অনলাইনে ক্লাস শুরুর তাগিদ দিয়েছে। কিন্তু বড় কিছু সরকারি কলেজ ছাড়া অন্যরা ক্লাস শুরু করতে পারেনি। জানা গেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনাল (বিইউপি) এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ অনলাইনে কার্যক্রম চালাচ্ছে। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটির কিছু বিভাগ অনলাইন ক্লাস নিচ্ছে।
গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সব বিশ্ববিদ্যালয়, আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি থাকবে। এ ছুটি আরও বাড়তে পারে বলেই ধারণা। এতে উচ্চশিক্ষায় যে ক্ষতি হয়েছে তা পোষাতেও অন্তত এক বছর সময় লাগতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন। ৬ আগস্টের পর ছুটি আরো বাড়লে বড় সেশনজটে পড়তে হবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে।
জানা গেছে, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী গ্রামে থাকা, অনলাইন ক্লাস সামগ্রীর সংকট, ইন্টারনেটের উচ্চদাম এবং কিছু শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন না থাকায় অনলাইনে ক্লাস শুরু করা যাচ্ছে না। এছাড়া তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকের অনীহাও অন্যতম কারণ বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ইউজিসি একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের ৮৬.৬ শতাংশের স্মার্টফোন আছে, ৫৫ শতাংশের আছে ল্যাপটপ। সব শিক্ষকেরও ল্যাপটপ আছে। কিন্তু ক্লাস নিতে গিয়ে ইন্টারনেট খরচ, দুর্বল নেটওয়ার্কসহ নানান সমস্যার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। ৫৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্লাস ভালো ইন্টারনেট সংযোগ নেই। আর ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থীর মতে, অনলাইনে ক্লাসরুম বাস্তব ক্লাসরুমের মতো নয়।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস করার প্রতিবন্ধকতা জানতে সমীক্ষা চালিয়েছি। সেখানে ইন্টারনেট প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিছু শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন নেই। ইন্টারনেটের দাম কমানো এবং অসচ্ছলদের জন্য বিনা মূল্যে ইন্টারনেটের ব্যবস্থা করা হলে শিক্ষা সহজ হবে।’
জানা গেছে, ক্ষতি পোষাতে ইউজিসি কিছু পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন। তারমধ্যে রয়েছে, সাধারণ ছুটির আগের ক্লাসের ওপর অনলাইনে পরীক্ষা নিয়ে সেমিস্টার শেষ করা। অংশগ্রহণ করতে না পারাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখা। পাশাপাশি জুলাইয়ে সেমিস্টার অনলাইনে শুরু করা। এছাড়া ছয় মাসের সেমিস্টার চার মাসে আনাসহ নানা বিকল্প রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু অনেক শিক্ষার্থীর স্মার্টফোন নেই, যা বড় সমস্যা। এমফিল, পিএইচডির মতো ক্লাস অনলাইনে নিচ্ছি। করোনা দীর্ঘস্থায়ী হলে আমাদের ভিন্ন চিন্তা করতে হবে।’
Discussion about this post