নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা সংকটের মধ্যে টিউশন ফি নিয়ে অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের মধ্যে জটিলতা বাড়ছে। দেশে মহামারি করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের পর কর্মহীনতা বা আয় কমে যাওয়ায় অভিভাবকদের অনেকেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টিউশন ফি পরিশোধ করতে পারছেন না। টিউশন ফি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসনে শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনেকটাই নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে আছে।
এ অবস্থায় টিউশন ফি ৫০ শতাংশ কমানোর দাবি তুলছেন অভিভাবকরা। আবার সব শিক্ষার্থীর অভিভাবক বেতন দিচ্ছেন না উল্লেখ করে টিউশন ফি কমানোর ব্যাপারে নিরব রয়েছে স্কুল-কলেজের কর্তৃপক্ষ। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে টিউশন ফি আদায় নিয়ে জটিলতা বাড়ছে। এ নিয়ে আন্দোলন-কর্মসূচি দিচ্ছেন অভিভাবকরা।
টিউশন ফি আদায় নিয়ে ইংলিশ মিডিয়ামের মধ্যবিত্ত অভিভাবকরা বড় সংকটে আছেন। কারণ তাঁদের মাসে পাঁচ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত ফি দিতে হয়। ফলে তাঁরা নিয়মিতই বিভিন্ন স্কুলের সামনে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছেন। শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সামনে অনুষ্ঠিত হয় এই মানববন্ধন।
প্যারেন্টস ফোরাম অব মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সভাপতি এ কে এম আশরাফ বলেন, ‘করোনাকালে আমরা ৫০ শতাংশ টিউশন ফি নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। এই দাবি কোনো নির্দিষ্ট স্কুলভিত্তিক নয়, সামগ্রিক। আমরা অভিভাবকদের আহ্বান জানাব, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত জুলাই থেকে ফি না দিতে। কোনো সিদ্ধান্ত না এলে আগামী ১৫ জুলাই পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করব।’
অভিভাবকরা বলছেন, করোনা মহামারির মধ্যে সব কিছু বন্ধ থাকায় আয় কমেছে সবারই। করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অনলাইন ক্লাস চলায় প্রতিষ্ঠানের খরচও অনেক কমেছে। এ অবস্থায় শতভাগ বেতন আদায় করা কোনো যুক্তির মধ্যে পড়ে না। আর যেসব স্কুলের ফান্ড রয়েছে, তাদের তো কয়েক মাস বেতন না নিলেও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। তবে ৫০ শতাংশের বেশি বেতন নেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ বলছে, টিউশন ফি আদায় করেই শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়। বর্তমান অবস্থায় টিউশন ফি পাওয়া যাচ্ছে না বলে শিক্ষকদের বেতন দিতেই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সচ্ছল অভিভাবকরা ফি পরিশোধ করলে সত্যিকার অর্থে সমস্যায় পড়া অভিভাবকদের ছাড় দেওয়ার ব্যাপারে ভাবা যেত।
জানা যায়, রাজধানীসহ দেশের বড় বড় স্কুল অনলাইনে ক্লাস নেওয়া শুরু করেছে। একই সঙ্গে তারা টিউশন ফি আদায় অব্যাহত রেখেছে। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিয়মিতই টিউশন ফি আদায়ে এসএমএস ও নোটিশ দিচ্ছে। এমনকি শিক্ষকরা অভিভাবকদের ফোনও দিচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলা মিডিয়াম স্কুলগুলোতে সাধারণত ৮০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে বেতন হওয়ায় মোটামুটি সচ্ছলরা তা পরিশোধ করতে পারছেন। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সন্তানের টিউশন ফি নিয়মিতই দিচ্ছেন। তবে বেসরকারি চাকুরে ও ছোট ব্যবসায়ী, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলো তা পারছে না। আবার বকেয়া পড়ে যাওয়া কয়েক মাসের ফি একসঙ্গে দেওয়াটা তাদের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
টিউশন ফি আদায় নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি একাধিক অনুষ্ঠানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ত্রী বলেছেন, যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আগামী কয়েক মাস চলার সামর্থ্য আছে তাদের উচিত সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়া। আর সামর্থ্যবান অভিভাবকদের উচিত হবে টিউশন ফি পরিশোধ করা।
Discussion about this post