ঢাবি প্রতিনিধি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সকল শিক্ষার্থীর অনলাইনের শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ নিশ্চিতের দাবিতে সমাবেশ করেছে ছাত্র ইউনিয়ন। সোমবার বিকেলে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সমাবেশে সংগঠনটির ঢাবি সংসদের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা বক্তব্য রাখেন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সহ-সভাপতি জয় রায় বলেন, ‘এখানে সারাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে, কোনোরকম পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া অনলাইন ক্লাস চালু করা নিম্নবিত্ত ও প্রান্তিক ছাত্রদের প্রতি কর্তৃপক্ষের বৈষম্যমূলক আচরণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী পাহাড়ীসহ দুর্গম অঞ্চলে বাস করে, যেখানে ন্যূনতম নেটওয়ার্ক সুবিধা পৌঁছে দিতে সরকার ব্যর্থ। সেখানকার শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশ নিতে পারছেন না।
তিনি আরও বলেন, এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে খুবই দরিদ্র, অনেকে টিউশনি করে নিজের খরচ চালায়। দেশে চলমান লকডাউনের কারণে পুরোপুরি ক্ষতিগ্রস্ত এদের আয়। অথচ অনলাইন ক্লাসের ইন্টারনেট কেনার অতিরিক্ত খরচের বোঝা এদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। এই বৈষম্য প্রতিহত করতে হবে। সমস্ত লেকচার ডাউনলোড করার সুযোগ রাখতে হবে, যেন পরেও দেখা যায়। এজন্য শ্রেণি উস্থিতিতি গণনা করা চলবে না। অনলাইন ক্লাসের সমস্ত ইন্টারনেট খরচ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে শিক্ষার্থীদের দিতে হবে।
সাংগঠনিক সম্পাদক জাহিদ জামিল বলেন, অনলাইন ক্লাসে অর্ধেকের বেশি শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারছে না। অথচ এদের কথা বিবেচনা না করেই, কোনোরকম পূর্বপ্রস্তুতি না নিয়ে শতবর্ষ উদযাপনের নামে অনলাইন ক্লাস ছাত্রদের ওপর জোর করে চাপিয়ে দেয়া হলো। শতবর্ষে পা দেয়া একটি প্রতিষ্ঠানের এমন দায়িত্বহীনতা দুঃখজনক। এর অবসান ঘটাতে হবে। পূর্ণাঙ্গ জরিপ চালিয়ে সব ছাত্রের ডেটাবেজ তৈরি করতে হবে। যাদের সহযোগিতা দরকার সহযোগিতা দিতে হবে। রাষ্ট্রের সহযোগিতা নিতে হবে, সবার জন্য পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক কভারেজ নিশ্চিত করতে হবে। তারপরই কেবল এই বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাস চালিয়ে কার্যকর করার কথা ভাবতে পারে, তার আগে নয়।
সমাবেশের সমাপনী বক্তব্যে ঢাবি সংসদের সভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে অনলাইন ক্লাস কখনোই শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের সমতুল্য হতে পারে না, যেহেতু এখানে ছাত্র-শিক্ষক যোগাযোগ অনেক বেশি সীমিত। তারপরও দীর্ঘ মহামারির মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে এর গুরুত্ব আছে। সেই গুরুত্ব হারিয়ে যায়, যখন আমরা দেখি, এই পাঠদান প্রক্রিয়াকেও ছাত্রদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টির অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এমন পরিস্থিতিতে কোনো সচেতন শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব নয় স্থিরচিত্তে অনলাইন ক্লাস করতে বসা। এরমধ্যে আবার বৈষম্যের এই আয়োজন! আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাতে চাই, ছাত্রদের সাত দফা মেনে নিন। সবার সমস্যা দেখুন, সমাধান করে তবেই অনলাইন ক্লাস নিন। আমাদের একজন সহপাঠীও যেন বঞ্চিত না হয়। শিক্ষা কার্যক্রমকে শ্রেণি বৈষম্যের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করবেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থীরা এই অপচেষ্টা সহ্য করবে না।
Discussion about this post