নিজস্ব প্রতিবেদক
এ বছর কম দামে বই ছাপানোর সুযোগ পেয়েছে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৫ কোটি বই ছাপানো হবে। গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৩৫ শতাংশ কম দামে এসব বই ছাপানোর প্রস্তাব দিয়েছেন মুদ্রকররা। এতে এনসিটিবির প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়েও গড়ে ৪২ শতাংশ কম দাম পড়েছে। ফলে কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে সরকারের।
চলতি বছর করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে আন্তর্জাতিক বাজার ও দেশীয় বাজারে কাগজ তৈরির কাঁচামাল ‘মণ্ড’র দাম অনেক কমেছে। এছাড়া কাগজ রফতানি কমেছে। আবার গত মার্চ থেকে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কাগজের চাহিদা কমে গেছে। এছাড়া গত বছরের তুলনায় এবারের মুদ্রণ খরচও কমে গেছে।
আবার করোনাকালীন ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্য নগদ টাকার জন্য কম দামে কাগজ বিক্রি করছে। ফলে একদিকে কম দামে কাগজ ক্রয় এবং আরেকদিকে কম দামে মুদ্রণের সুযোগ তৈরি হওয়ায় গত বছরের চেয়ে এবার প্রায় ৩০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হচ্ছে।
তবে শিক্ষার্থীদের ৩৫ কোটি পাঠ্যবই কম দামে ছাপাইয়ের প্রস্তাব দেয়ায় নতুন শঙ্কাও দেখা দিয়েছে। অনেকে মনে করছেন কম দামের ফলে বইয়ের মানের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। তারা বলছেন, নিম্নমানের কাগজ, কালি ও বাঁধাই হতে পারে। এছাড়া অস্বাস্থ্যকর কাগজ-কালিতে ছাপা বই হাতে গেলে শিশুরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
একইসঙ্গে করোনা পরিস্থিতিতে সময়মতো মানসম্পন্ন পাঠ্যবই হাতে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করছেন, নতুন বছরের শুরুতে সরকার বই বিতরণের জন্য তাড়াহুড়া করবে। এসময় হয়তো বইয়ের মান রক্ষার দিকে আর নজর দেবে না। এই সুযোগে মানহীন বই ছাপাই করবে মুদ্রকররা। যা অতীতেও হয়েছে।
এ বিষয়ে কয়েকজন মুদ্রক জানান, প্রতিযোগিতা ও করোনাকালীন ব্যবসায় টিকে থাকতে তারা কম লাভ করার কৌশল নিয়ে দরপত্র জমা দিয়েছেন। তবে মুদ্রকদের কয়েকজন বলেছেন, যে কৌশলই নেয়া হোক না কেন, কেউ ব্যবসায় লোকসান দিয়ে বই ছাপবে না। এবার কাগজের মসৃণতা ও ‘ব্রাস্টিং ফ্যাক্টর’সহ (কাগজের শক্তি) বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য বাড়ানো হয়েছে। ফলে বেশি দামেই কাগজ কিনতে হবে। এ অবস্থায় নিম্নমানের কাগজ, কালি, গ্লু (বই বাঁধাইয়ের উপাদান) দিয়ে বই ছাপানোর প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।
এ বিষয়ে এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, এ বছর প্রাক্কলনের চেয়েও কম দামে বই ছাপার রাস্তা তৈরির মূল কারণ হচ্ছে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে কাগজের দাম বেশ কমে গেছে। এতে বিপুল পরিমাণ টাকা সাশ্রয় হবে। তবে কম মূল্যে কাজ নিলেও কারও ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নেই। যেসব ‘প্যারামিটার’ (বইয়ের সামগ্রীর গুণ) নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে তা বুঝে নেয়া হবে। মান নিশ্চিতে এবার মন্ত্রণালয় তৎপর। মনিটরিং এজেন্সিসহ এনসিটিবির নিজস্ব টিমের পর্যবেক্ষণও বাড়ানো হবে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রক ও বিপণন সমিতির সভাপতি তোফায়েল খান বলেন, যদি আমরা কম দর দেই তাহলে এনসিটিবির বেশি দামে কাজ দেয়ার সুযোগ নেই। এখন এনসিটিবির দায়িত্ব হচ্ছে দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী যথাযথ মানসম্পন্ন বই আদায় করে নেয়া।
এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাক-প্রাথমিক স্তর থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৫ কোটি বই ছাপানো হবে। এর মধ্যে মাধ্যমিকের ২৪ কোটি ৪১ লাখ বই ছাপানোর ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৫০ কোটি টাকা। প্রাথমিকের সাড়ে ১০ কোটি বই ছাপাতে সম্ভাব্য খরচ প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা। মোট ৭টি দরপত্রে এসব বই ছাপানো হবে।
তবে সাশ্রয়ের পরিমান ৩০০ কোটি টাকা হবে না বলে জানিয়েছেন এনসিটিবির চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, গত বছরের তুলনায় টাকা সাশ্রয় হবে, কিন্তু এর পরিমাণ হয়তো ৩০০ কোটি হবে না। কেননা, গত বছর একটি বই মুদ্রণের গড়ে ব্যয় ছিল ২৩ টাকা। এ বছর তা ১৭ থেকে ১৮ টাকা হতে পারে।
Discussion about this post