নিজস্ব প্রতিবেদক
সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য যোগানো কৃষিতে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, দিন দিন জনসংখ্যা বাড়ছে, অথচ চাষযোগ্য জমি দ্রুত কমছে। বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনিতেই কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে। এর সাথে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে কোভিড-১৯। ফলে বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থা বা ফুড চেইনকে চরম সংকটের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ ও প্রশিক্ষিত কৃষি গ্রাজুয়েট তৈরি করতে হবে। যুগোপযোগী, আধুনিক ও প্রায়োগিক কারিকুলামের মাধ্যমেই সেটি সম্ভব। মন্ত্রী শনিবার (৮ আগস্ট) তার সরকারি বাসভবন থেকে শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘দক্ষ কৃষি গ্রাজুয়েট তৈরিতে আধুনিক কারিকুলামের ভূমিকা’ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন।
ড. রাজ্জাক বলেন, কৃষিকে অধিকতর লাভজনক করতে হলে কৃষিপণ্যের বিপণন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বাড়াতে হবে। কৃষিকে বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে দেশ-বিদেশে কৃষিপণ্যের টেকসই বিপণন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। প্রক্রিয়াজাত করে মূল্য সংযোজন করতে হবে। সেজন্য উন্নত বিশ্বের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সিলেবাস ও কারিকুলাম যুগোপযোগী করা প্রয়োজন। বিশেষ করে বাণিজ্যিক কৃষি কৌশল জ্ঞান সম্বলিত সিলেবাস প্রণয়ন এখন সময়ের দাবি।
‘কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি কলেজ এবং কৃষিবিদরা দেশের সামগ্রিক কৃষি উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন। কৃষিতে আজ দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। সরকারের এখন মূল লক্ষ্য হলো সবার জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য যোগানো। কারণ উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে হলে পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে বর্তমান প্রজন্মকে সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হিসেবে গড়ে তোলা খুব প্রয়োজন। বতর্মান সরকারের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জও বটে’- বলেন মন্ত্রী। কৃষিসচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, কৃষির ইতিহাস ও গ্রামীণ ক্ষমতা কাঠামোকে কারিকুলামে নিয়ে আসতে হবে। কৃষির উন্নয়ন করতে হলে এর বিবর্তন সম্পর্কে জানা জরুরি। এর সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি কৃষক ও কৃষি গ্রাজুয়েটরা কী করে সফলভাবে মোকাবিলা করবে তাও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। সাবেক শিক্ষাসচিব এন আই খান বলেন, শুধু কারিকুলাম পরিবর্তন করলেই হবে না, শিক্ষকদের জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষক নিয়োগের নিয়মে পরিবর্তন আনতে হবে। কারণ শিক্ষকেরাই কারিকুলাম অনুযায়ী ছাত্রদের পড়ান। এছাড়া গ্রাজুয়েটরা যেহেতু কৃষকদের নিয়ে কাজ করেন সেজন্য সিলেবাসে সামাজিক বিজ্ঞানের কোর্স অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, কৃষিকে কিভাবে নিরাপদ ও পরিবেশসম্মতভাবে টেকসই করা যায় তার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। কারিকুলামে প্রায়োগিক শিক্ষার ওপর বিশেষ করে ইন্টার্নশিপের ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষকের সাথে গ্রাজুয়েটদের ইন্টার্নশিপে বেশি করে যুক্ত রাখতে হবে। কৃষি ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব শাইখ সিরাজ বলেন, কৃষি দ্রুত বাণিজ্যিকায়নের দিকে যাচ্ছে। দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবলকে এসব জায়গায় সম্পৃক্ত না করতে পারলে এগুলো বিদেশি বিশেষজ্ঞদের হাতে চলে যাবে।
এছাড়া কৃষিপণ্যকে কিভাবে বিভিন্ন পণ্যে রূপান্তর করে ভ্যালু অ্যাড করা যায় তা এদেশে গড়ে ওঠেনি। সেটি কিভাবে করা যায় তা বিবেচনা করে দেখতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফুল হাসান বলেন, সিলেবাসে প্রতিনিয়তই নতুন বিষয় সংযোজন করা হচ্ছে, তবু কিছুটা দুর্বলতা আছে। সময়ের সাথে সাথে অবশ্যই এটিকে পরিবর্তন করে যুগোপযোগী করতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহম্মেদসহ বিভিন্ন শিল্প ও কারিকুলাম বিশেষজ্ঞরা। বক্তারা দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদ গড়ার জন্য সিলেবাস, কারিকুলাম, পরীক্ষা ও মূল্যায়ন পদ্ধতি পরিবর্তন করে আধুনিক ও প্রায়োগিক করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তারা কৃষিকে টেকসই করার জন্য কৃষির গ্রাজুয়েটদের বাণিজ্যিকীকরণ জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য কারিকুলামে মার্কেটিং, শিল্পোদ্যোগ, সাপ্লাই চেইন, যোগাযোগ ও নেতৃত্ব প্রদানের দক্ষতা, কৃষি প্রক্রিয়াজাত, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা এবং তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান বিষয়ক কোর্স অর্ন্তভুক্ত করার ওপরও জোর দেন।
Discussion about this post