নিউজ ডেস্ক
প্রাচীন নালন্দা ও তক্ষশীলার মতো প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হতে না পারলেও মৌলভীবাজারের রাজনগরে তাম্রলিপি বা তামার পাতে লিখিত প্রাচীনতম দলিলের উদ্ঘাটনস্থলের সন্ধান পেয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের অনুসন্ধানী দল।
আগামী শুস্ক মৌসুমে সংশ্নিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিক্রমে ঐতিহাসিক নিদর্শন অনুসন্ধানের লক্ষ্যে কুলাউড়া ও রাজনগরের তিনটি স্থানে খনন কার্যক্রম চালানো হবে বলে আশা করছেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর চট্টগ্রাম ও সিলেটের আঞ্চলিক পরিচালক আতাউর রহমান।
গত ২৫ থেকে ২৭ জুলাই তিন দিনের অনুসন্ধানের শেষ দিনে অনুসন্ধানী দলটি রাজনগরের পশ্চিমভাগ গ্রামের পরেশ পালের বাড়ি থেকে তাম্রলিপি উদ্ধারের ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়। পাঁচগাঁওয়ের কমলা রানীর দীঘিতে হাজার বছরের বেশি পুরোনো ইট এবং দীঘির পাড়ে বেশ কয়েকটি সমাধির সন্ধানও পেয়েছেন তারা।
প্রাথমিক এই প্রাপ্তির ভিত্তিতে প্রতিনিধি দলের প্রধান ড. আতাউর রহমান মনে করছেন, কুলাউড়ার ভাটেরাটিলা ও রাজনগরের গড়গাঁও কমলা রানীর দীঘির পাড় এবং পশ্চিমভাগ গ্রামের পরেশ পালের বাড়িতে খনন কার্যক্রম পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শন মিলতে পারে।
প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার উত্তর সাগরনাল গ্রামে হতে পারে- বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত এ ধরনের সংবাদের ভিত্তিতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলের প্রতিনিধি দল গত ২৫ জুলাই কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরাটিলা, জুড়ীর সাগরনাল এবং রাজনগরের পশ্চিমভাগ গ্রামে অনুসন্ধান ও জরিপ করে। এ সময় এখানে প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়টির অস্তিত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেনি অনুসন্ধানী টিম। তবে কুলাউড়ার কলিমাবাদ গ্রামের ভাটেরাটিলা ও রাজনগর উপজেলার পশ্চিমভাগ গ্রামে আদি ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
পশ্চিমভাগ গ্রামের অশীতিপর বৃদ্ধ পরেশ পাল অস্পষ্ট কণ্ঠে জানান, ষাটের দশকের প্রথম দিকে পুকুর খননের সময় সংস্কৃত ভাষায় লেখা শিলালিপিটি উদ্ধার করা হয়। সিলেট থেকে প্রকাশিত যুগভেরী পত্রিকার সম্পাদক আমিনুর রশীদ চৌধুরী (বর্তমানে মৃত) শিলালিপিটি সংগ্রহ করে তৎকালীন সিলেটের জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে পাঠান। এরপর শিলালিপিটি জাতীয় জাদুঘরে রাখা হয়। এটিকে বর্তমানে পশ্চিমভাগ শিলালিপি নামে অভিহিত করা হয়।
কুলাউড়ার লংলা আধুনিক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মাজহারুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন গবেষকের তথ্য-উপাত্ত ও বর্ণনা থেকে মনে হয়, প্রাচীন চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান রাজনগরের পশ্চিমভাগ কিংবা কুলাউড়ার ভাটেরাটিলায় হতে পারে। তিনি বলেন, চন্দ্রপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯টি মঠ ছিল। যেগুলোর মধ্যে কোনো একটির অবস্থান জুড়ীর সাগরনালে হতে পারে। সাগরনাল এলাকার অদূরে সীমান্তের ওপারে চন্দ্রপুর নামে একটি গ্রাম এবং চা বাগানও রয়েছে।
কমলা রানীর দীঘিটি দুই শতাধিক বিঘা ভূমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। গড়গাঁও গ্রামে এটি খনন করেন রাজা সুবিদ নারায়ণ চৌধুরী। এখানে যে দুটি কবর পাওয়া গেছে, সেগুলো রাজপরিবারের সদস্যদের হতে পারে। এ ছাড়া এ দীঘির পশ্চিম ও দক্ষিণপাড়ে একাধিক কবর রয়েছে। গবেষক বিজিত দেবের মতে, এটি নিয়ে গবেষণা হলে রাজপরিবারের অতীত ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে। এ দীঘিকে ঘিরে অনেক কিংবদন্তিও রয়েছে বলে জানান গড়গাঁও গ্রামের ফজলুল হক নীরু।
Discussion about this post