নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা করোনাভাইরাসের কারণে বাতিল হয়ে গেছে । জেএসসি-এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার আলোকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হবে। তবে এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে। কারণ আসন্ন শীতে করোনার মধ্যে পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে সংশয় রয়েছে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধার ভিত্তিতে ভর্তির যে নিয়ম, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে সংকট।
সব মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই পরীক্ষা করোনার মধ্যে নেয়া যাবে কিনা কিংবা পরীক্ষার শর্ত কী হবে তা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ভর্তিচ্ছুরা নতুন করে দুঃশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন। আলোচনা রয়েছে গুচ্ছ, সমন্বিত বা প্রচলিত পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়েও। এ অবস্থায় নড়েচড়ে বসেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি)। অচলাবস্থা নিরসনে এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী ১৫ অক্টোবর উপাচার্যদের নিয়ে বৈঠকে বসবে ইউজিসি।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে এইচএসসি ফল ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকাশের জন্য কাজ শুরু করেছে টেকনিক্যাল কমিটি। জানুয়ারিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কার্যক্রম শুরুর কথা বলা হলেও শেষ পর্যন্ত পরীক্ষা পিছিয়ে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে শীতের পর ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে। তবে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে পরীক্ষার আয়োজন হলে তা হবে অনলাইনে। এ কারণে পরীক্ষার পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে সময়ক্ষেপণ করা হতে পারে।
টেকনিক্যাল কমিটির যুগ্ম আহবায়ক ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, করোনার সংকটে বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ভর্তি পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অনলাইনে সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। পরিস্থিতি ভালো হলে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এর বিকল্প নেই বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দেশে ৪৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থী ভর্তি করে থাকে। তবে বুয়েট এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ বা সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নিতে রাজি নয়। এ অবস্থায় করণীয় ঠিক করতে বৈঠকে বসে কীভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যায়, তা চূড়ান্ত করবেন। ১৫ অক্টোবর ইউজিসি সভা ডেকেছে বলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন উপাচার্য নিশ্চিত করেছেন।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে চাই। এ ক্ষেত্রে কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং সাধারণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গুচ্ছ হবে। প্রথম দুটির জন্য দুটি পরীক্ষা নেয়া হবে। আর শেষেরটির জন্য বিজ্ঞান, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান এবং বিজনেস স্টাডিজ- তিনটি পরীক্ষা হবে বলে তিনি জানান।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, কোন পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অ্যাডমিশন কমিটি, ডিনস কমিটি ও একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্ত নেবে। সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার বিষয়ে উপাচার্য বলেন, প্রতিটি বিষয়ই কাউন্সিল ও কমিটিতে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
জানা গেছে, এইচএসসিতে অটোপাসের সিদ্ধান্তে বেশি খুশি যাদের আগের দুটি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ রয়েছে। তবে যাদের পরীক্ষার ফল খারাপ, তারা ভর্তি নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। কারণ ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে এই ফলের গুরুত্ব রয়েছে। এতে অভিভাবকরাও সংশয়ে পড়ে গেছেন। আলোচনা শুরু হয়েছে এভাবে ফল প্রকাশ হলে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে তারা বিপাকে পড়বেন কিনা, তা নিয়েও।
এ বিষয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, ‘কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে না। আমাদের শিক্ষা বোর্ডগুলো জাতীয় প্রতিষ্ঠান এবং এগুলো গ্লোবালি অ্যাকসেপ্টেড।’
Discussion about this post