নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী ৩১ অক্টোবর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি শেষ হবে। তবে নভেম্বর থেকে শীত শুরু হওয়ায় এই ছুটি আরও বাড়তে পারে। শীতে দেশে নিউমোনিয়াসহ ঠান্ডা জনিত রোগের লক্ষণ বেশি দেখা যায়। ফলে সবার মধ্যেই করোনার লক্ষণ দেখা যেতে পারে। জানুয়ারিতেও শীত শেষ হবে না কিনা সেটিও বলতে পারছেন না স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। এ অবস্থায় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জীবন সঙ্কটে ফেলতে চায় না সরকার। তাই পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলার পক্ষেই অভিমত সংশ্লিষ্টদের।
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। কয়েক দফায় ছুটির মেয়াদ বাড়িয়ে আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ছুটি বর্ধিত করা হয়েছে। তবে আসন্ন শীতে করোনার প্রকোপ ফের বৃদ্ধির আশঙ্কা করেছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে করোনা সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা উচিৎ হবে না। শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্টরাও ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত বিদ্যালয় না খোলার পরামর্শ দিয়েছেন। এমন অবস্থায় এ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খোলা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন তারা।
তাদের মতে, শীত শুরু হলে করোনা সংক্রমণ আরও বাড়তে পারে। এই অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত হবে আত্মঘাতী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। এই অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিপক্ষেই মত তাদের।
দেশের মাধ্যমিক স্কুল-কলেজ ও উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেখভাল করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। তারাও বলছেন, সংক্রমণ না কমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে না। অন্যদিকে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দেখভাল করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে এমন কোনো পদক্ষেপ তারা নেবেন না।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বলেন, করোনা সংক্রমণ পুরোপুরি কমে না আসলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীর জীবনের নিরাপত্তা সবার আগে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিরাপদ মনে না হলে স্কুল-কলেজ খোলার খোলার সুযোগ নেই। চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের টেলিভিশন, অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমের সাহায্যে পাঠদান অব্যাহত থাকবে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল হোসেন বলেন, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শীতে করোনার প্রকোপ বাড়বে। করোনার প্রকোপ বাড়লে তো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কোনো সুযোগ থাকবে না। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় প্রাথমিক পর্যায়ের একাডেমিক ক্যালেন্ডার পর্যালোচনা করে আগামী ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। এর মধ্যেও যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা না যায় তবে তো অটো প্রমোশন ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
এদিকে করোনা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নভেম্বরে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হবে, তখন সংক্রম আরও বাড়তে পারে। সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছেন দ্বিতীয় ঢেউ এলে, সংক্রমণ বাড়লে তখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা নিয়ে সংশয় রয়েছে। সে হিসেবে এ বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা অনিশ্চিত। তাছাড়া শীতকালে করোনার প্রকোপ থাকলে সে হিসেবে নতুন বছরের শুরুতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ না কমায় ইতোমধ্যেই জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষাও বাতিল করা হয়েছে। ফলে সংক্রমণ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যে খুলছে না সেটি বলার অপেক্ষাই রাখে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ। আর আমাদের দেশ পরবর্তীতে যারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন তাদের জীবন কোনও ভাবেই ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হবে না।
Discussion about this post