বিশেষ প্রতিবেদক
শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী, দক্ষ জনশক্তি রূপে গড়ে তুলতেই দেশের সব মাধ্যমিক স্কুলে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই কারিগরি শিক্ষা চালু করতে যাচ্ছে সরকার।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে একজন শিক্ষার্থীকে মাধ্যমিক স্তরে ১০টি নির্বাচিত ট্রেড কোর্স বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হবে, যা তার কর্মজীবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। এর আগে চলতি বছর পরীক্ষামূলক ভাবে ৬৪০টি স্কুলে কারিগরি শিক্ষা চালু করা হয়েছিল। মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের জন্য নির্বাচিত ১০টি কোর্সের মধ্যে রয়েছে- ফুড প্রসেসিং এবং প্রিসারভেশন, সিভিল কন্সট্রাকশন, জেনারেল ইলেকট্রিক ওয়ার্কস, জেনারেল ইলেকট্রনিক্স, ড্রেস মেকিং এবং টেইলারিং, কম্পিউটার এবং ইনফরমেশন টেকনোলজি, জেনারেল মেশিনারিজ, রেফ্রিজারেশন এবং এয়ার কন্ডিশনিং, ওয়েলডিং এবং ফেব্রিকেশন, পস্নামবিং এবং পাইপ ফিটিং। এর মধ্য থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো চাহিদা অনুযায়ী দুটি কোর্স চালু করবে।
এছাড়া গত ২৮ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) নাজমুল হক খানের সভাপতিত্বে একটি ভার্চুয়াল সভা হয়। সভায় ষষ্ঠ শ্রেণিতে প্রাক বৃত্তিমূলক কোর্স এবং নবম ও দশম শ্রেণিতে বৃত্তিমূলক বিষয় চালু করতে আলোচনা হয়। এছাড়া গত ৯ মার্চ গঠিত এ সংক্রান্ত কমিটিকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য কর্মপরিকল্পনা তৈরি করে সংশ্লিষ্ট সচিবের কাছে জমা দিতে বলা হয়।
তথ্যমতে, দেশে ৬৮৩টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে (৩৭১টি স্কুল সরকারি হলেও জনবল বেসরকারি)। এর মধ্যে ১৫৫টি স্কুলে ডাবল শিফট রয়েছে। সরকারি এসব স্কুলে দুজন করে ইন্সট্রাক্টর পদ সৃষ্টি করলে ১ হাজার ৬৭৬টি পদের বিপরীতে ৫৪ কোটি ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৪০০ টাকা আর ল্যাব সহকারী পদের জন্য ৩৪ কোটি ৭১ লাখ ৩৩ হাজার ১২০ টাকা দরকার হবে। সরকারি ছাড়াও সারাদেশে ১৩ হাজার ৫৫০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব স্কুলে ইন্সট্রাক্টর পদের জন্য ৫৯৯ কোটি ৪৫ লাখ ২০ হাজার এবং ল্যাব সহকারী পদের জন্য ৩৮১ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা লাগবে। সব মিলিয়ে ১ হাজার ৬৯ কোটি ৯৩ লাখ ৪৩ হাজার ৫০০ টাকা দরকার হবে।
প্রতিটি উপজেলা থেকে একটি করে কো-এডুকেশন স্কুল (৪৯০টি), প্রত্যেক জেলা হতে একটি কো-এডুকেশন মাদ্রাসা (৬৪টি), দুর্গম ও অবহেলিত (চর, হাওড় ও পাহাড়) এলাকা হতে ৫০টি স্কুল ও ৩৬টি মাদ্রাসা নির্বাচন করা হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুটি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণের স্থান, বিদু্যৎ সংযোগ এবং প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত। নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের নির্মাণ ও পূর্ত কাজ শেষপর্যায়ে। আর শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ ও এমপিওভুক্তি করতে পদ সৃজনের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে ৬৭৬ জন ইন্সট্রাক্টর নিয়োগ দিয়ে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। ল্যাব সহকারী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক-১) নাজমুল হক খান বলেন, দেশের সব মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে কারিগরি শিক্ষা চালুর ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। অনেক কাজ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সরকারি হাইস্কুলে পদ সৃষ্টি করতে জনপ্রশাসন ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠাব। অনুমোদন হলেই পিএসসির মাধ্যমে দ্রুত নিয়োগকার্যক্রম শুরু করা হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে, সেকেন্ডারি অ্যাডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রামের (সেসিপ) মাধ্যমে ৬৪০টি প্রতিষ্ঠানে কোর্স চালু করতে নির্মাণ ও পূর্ত কাজের জন্য ৫৩১ কোটি ২০ লাখ, ১০টি ট্রেডের উপকরণ সরবরাহ করতে ২৬১ কোটি ৯৪ লাখ ২৪ হাজার, আসবাবপত্র সরবরাহে ৯ কোটি ৯৮ লাখ ৪০ হাজার ও শিক্ষক নিয়োগে ৪২ কোটি ২৪ লাখ টাকা বরাদ্দ আছে।
Discussion about this post