নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিকের এই পরীক্ষা বাতিল করে শতভাগ শিক্ষার্থীকে পাশ করার সিদ্ধান্তের ফলে ১৩ লাখ এইচএসসি পরীক্ষার্থীই পাশ করেছে। পরীক্ষা ছাড়াই শতভাগ পাশের এমন ঘটনা দেশের ইতিহাসে প্রথম। সরকারের এ সিদ্ধান্তের কারণে শিক্ষার্থীদের প্রায় শতভাগই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য আবেদন করতে পারবে।
গত সপ্তাহে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, জেএসএসি এবং এসএসসি পরীক্ষার গড় ফলাফলের ভিত্তিতেই এবার এইচএসসির ফলাফল মূল্যায়ন হবে। এর ফলে নতুন পদ্ধতিতে এসএসসি এবং এইচএসসির জিপিএ নম্বর ছাড়াই স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার চিন্তাভাবনা করতে যাচ্ছে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
আগামী বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) নীতিনির্ধারকরা বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় বসবে। সেখানে বিস্তারিত আলাপ করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
সমন্বিত বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার আহ্বায়ক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় এবার লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে।
তাঁর মতে, এ বছরের ভর্তি পরীক্ষায় আমরা এসএসসি এবং এইচএসসির ফলাফলের নম্বর বিবেচনা করবো না। ভর্তি পরীক্ষার ক্ষেত্রে পূর্বের দুই পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল মূল্যায়ন না করার এটা সবচেয়ে ভালো সুযোগ। এই বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে আমি আলোচনা করবো।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার করণীয় নিয়ে আগামী ১৫ অক্টোবর উপাচার্যদের একটি বৈঠক ডেকেছি। সেখানে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলাপ করা হবে। তবে আমাদের অবস্থান হলো, ভর্তিচ্ছুদের বিগত দুটি পাবলিক পরীক্ষার নম্বর বাদ দিয়ে লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদের বের করে নিয়ে আসা।
তাঁর মতে, শিক্ষার্থীদের ভালোর স্বার্থে ভর্তি পরীক্ষায় এসএসসি এবং এইচএসসির নম্বর বাদ দেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।
সূত্র মতে, চলতি বছর দেশের অধিকাংশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ই ইউজিসির অধীনে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) আলাদাভাবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্নাতক পরীক্ষা নেবে।
দেশের ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য প্রায় ৬০ হাজার আসন রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির আবেদনের জন্য এসএসসি এবং এইচএসসিতে নুন্যতম জিপিএ ২.৫০ হওয়ায় প্রতিবছরই অন্তন্ত ১ থেকে ২ লাখ শিক্ষার্থী খারাপ ফলাফল করায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আবেদনই করতে পারেন না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো ইউনিটে ২০০ নম্বরের ভর্তি পরীক্ষা হয় যেখানে ১২০ নম্বরের লিখিত এবং এমসিকিউ পরীক্ষা হলেও ৮০ নম্বর বরাদ্দ থাকে এসএসসি ও এইচএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে।
তথ্য অনুযায়ী, দেশের শীর্ষ চারটি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত হিসেবে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, গণিত এবং ইংরেজির ফলাফল বিবেচনা করে। তবে তারা আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেয়। এ চারটি বিশ্ববিদ্যালয় হল- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েত) এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট)।
এবার চার ধাপে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম তিন ধাপে প্রকৌশল, কৃষি ও সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ভর্তি পরীক্ষা আলাদাভাবে অনুষ্ঠিত হবে।
Discussion about this post