নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামী ডিসেম্বরে এইচএসসি ও সমমানের ফলাফল প্রকাশ করার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এরপর জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি শুরু হবে। তবে আসন্ন শীতে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ার শঙ্কা থাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থায় অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করার দাবি তুলেছেন অনেকে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে দেশের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যরা জানিয়েছেন।
তাদের মতে, অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষার সাথে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একেবারেই অপরিচিত। ডিজিটাল মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষা এর আগে কখনোই নেয়া হয়নি। এছাড়া এই পরীক্ষার গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। সবকিছু বিবেচনায় ভার্চুয়াল মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ নেই।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবার এইচএসসি ও সমমানে প্রায় ১৪ লাখ পরীক্ষার্থী পাস করবে। এছাড়া দ্বিতীয় বার ভর্তি পরীক্ষার অপেক্ষায় রয়েছে আরও প্রায় ছয় লাখ শিক্ষার্থী। সব মিলিয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থী-অভিভাবক ও শিক্ষক মিলে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ সম্পৃক্ত থাকবেন ভর্তি পরীক্ষার সাথে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াতের ফলে অনেকেরই সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে নেয়া হলে ঝুঁকি কমবে। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে ভার্চুয়াল মাধ্যমে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা অসম্ভব বলে মনে করেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্টরা। তাই তারা সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের ব্যাপারেই আশাবাদী।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) তথ্যমতে, এবার দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষা চারটি ধাপে সম্পন্ন হবে। এগুলোর মধ্যে চারটি স্বায়ত্ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট আলাদাভাবে তাদের পরীক্ষা নেবে। আর, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তিন ধাপে তাদের পরীক্ষা সম্পন্ন করবে। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৬০ হাজার আসন ফাঁকা রয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা দেয়া ছাড়া বিকল্প কোনো উপায় নেই। আমার সেদিকে লক্ষ রেখেই কাজ করছি। কীভাবে পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে সে বিষয়ে পরিকল্পনা ঠিক করতে আমরা খুব শিগগিরিই ডিনদের সাথে আলোচনা করবো।
এইচএসসি পরীক্ষার জিপিএ’র নম্বর ভর্তি পরীক্ষায় না রাখা সম্পর্কে তিনি বলেন, এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। আমরা সবদিক বিবেচনায় নিয়েই সিদ্ধান্ত নিবো। এইচএসসি পরীক্ষার গ্রেডের বিষয়টিও আলোচনায় তোলা হবে। সেখানে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, এবারের ভর্তি পরীক্ষা বিষয়ে অনেকগুলো দিক বিবেচনায় রাখতে হবে। বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের মধ্যে একটি মিটিং হবে। এই সভায় বেশিরভাগ উপাচার্য যেদিকে ভোট দেবেন আমরা সেই পদ্ধতিই অনুসরণ করবো। তবে কোনো ভাবেই অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হবে না।
প্রসঙ্গত, প্রতিবছর এপ্রিলে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়ে চলে মে মাস পর্যন্ত। সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়। চলে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত। তবে করোনার কারণে চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয়নি। গত ৭ অক্টোবর পরীক্ষা বাতিল করা হয়। পরীক্ষার্থীদের বিগত দুটি বোর্ড পরীক্ষার ফল মূল্যায়ন করে এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
Discussion about this post