বিশেষ প্রতিবেদক
করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এবার দেশের স্বায়ত্তশাসিত ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনের মাধ্যমে স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপাচার্যরা। এজন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির (বিডিইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূরের নেতৃত্বে তৈরি করা একটি মোবাইল বেসড সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছে।
মোবাইল বেইজড এ সফটওয়্যারটির তৈরিতে নেতৃত্ব দেয়া বিডিইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, একদম সিম্পল কনসেপ্টে এই সফটওয়্যারটির তৈরি করা হয়েছে। তবে এখানে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের কোন অনিয়মের আশ্রয়ের সুযোগ থাকবে না।
আজ শনিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় উপাচার্যদের সংগঠন ‘বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের’ ভার্চুয়াল এক সভায় এ প্রস্তাব আসলে তাতে উপাচার্যরা সম্মত হন। তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত হবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে আলোচনা করে। সংগঠনের সভাপতি ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা যুক্ত ছিলেন।
অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, এ সফটওয়্যারটি মোবাইল বেইজড একটি অ্যাপস, এটি অফলাইন এবং অনলাইন-দুটোতেই কাজ করবে। যখন শিক্ষার্থীরা অ্যাপসটি ওপেন করবে তখন আমরা তার মোবাইলের ক্যামরার কন্ট্রোলটা নিব এবং সাউন্ডেরও কন্ট্রোল নিব। এছাড়াও তখন সে ফোনে আর কোন অ্যাপস অন করতে পারবে না এবং কোন কাজ করতে পারবে না। যতক্ষণ না আমাদের এই অ্যাপসটি অন থাকবে।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা অনলাইনে থেকে যখন অ্যাপসটি অন করবে তখন আমরা তাদের লাইভ মনিটরিং করতে পারবো। আর অফলাইনে থাকলে ছবি এবং সাউন্ড তুলা থাকবে। এটা পরবর্তীতে আমাদের সার্ভারে চলে আসবে। তখন আমরা বুঝতে পারবো সে নকল করেছে কিনা। এটা হচ্ছে সিম্পল কনসেপ্ট।
এই অ্যাপসের মাধ্যমে এমসিকিউ ও লিখিত টাইপ দু’ভাবে পরীক্ষা নেয়া যাবে বলে জানান অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর।
তিনি বলেন, এমসিকিউ টাইপের পরীক্ষা হলে অ্যাপসটিতে ঠিক মার্ক দেবে। আর লিখিত টাইপ পরীক্ষায় খাতায় লিখে ছবি তুলে অ্যাপসটিতে আপলোড করতে হবে। আপলোড করার পর সেটি আমাদের সার্ভারে চলে আসবে। ধরেন ৫টি খাতায় লিখছে, তখন ৫টি পেজ ছবি তুলে পাঠিয়ে দেবে। এভাবে লিখিত টাইপ পরীক্ষা নেয়া যাবে।
এ সফটওয়্যারটি গুগল প্লে স্টোরে দেয়া হবে কিনা-এ প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, আপাতত এটি প্লে স্টোরে রাখা হবে না। রাখলে ইন্টারন্যাশনালি সেটি চলে যাবে। তাই আমরা এটি ব্যক্তিগতভাবে ফ্রিতে সরবরাহ করবো। আর যদি কোন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাই, তাহলে তাদের ফ্রিতে দেব।
এদিকে, অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূরের নেতৃত্বে তৈরি করা মোবাইল বেইজড এই সফটওয়্যারটির প্রশংসা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভাপতি এবং চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, অনলাইনে পরীক্ষার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্যের তৈরি করা একটি সফটওয়্যার উপস্থাপন করা হয়েছে। অনেক উপাচার্য তাতে ‘কনভিন্স’ হয়েছেন। তবে সরকার ও ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, বৈঠকে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ নূরের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছে। এ প্রস্তাবে সবাই প্রশংসা করেছেন। এখন এই প্রস্তাবটি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হবে। সেখানে তারা যাচাই-বাচাই করবে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে এ বছরের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া সম্ভব হবে। আর সেটি হবে সমন্বিতভাবে, অর্থাৎ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
Discussion about this post