বিশেষ প্রতিবেদক
করোনাভাইরাসের কারণে ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় অটোপাস দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন উপাচার্যরা। এ পরীক্ষা হবে অনলাইনে। উপাচার্যদের সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয় পরিষদের সভায় শনিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির (বিডিইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূরের নেতৃত্বে তৈরি করা একটি মোবাইল বেসড সফটওয়্যার ব্যবহার করে এ পরীক্ষা নেয়া হতে পারে।
তবে এ সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর থেকে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। ইতিপূর্বে অনলাইন ক্লাস-পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ ফলপ্রসু না হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষার মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি কীভাবে অনলাইনে সম্পন্ন হবে তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে, গ্রামের ও প্রত্যন্ত অঞ্চলের দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের সন্তানরা কীভাবে এই পরীক্ষায় অংশ নেবেন- তা নিয়ে। এবার প্রায় ১৩ লাখ ৬৫ হাজার শিক্ষার্থী পাস করবেন। এত বিপুল সংখ্যক স্মার্টফোন কীভাবে যোগাড় হবে, বড় প্রশ্ন তা নিয়েও। সবমিলিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্তে অনেকে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের অধিকাংশ পরিবারে ভালো স্মার্টফোন বা কম্পিউটার নেই। এছাড়া তাদের প্রযুক্তি ব্যবহারের জ্ঞানও কম। বিশেষত এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এ ধরনের জ্ঞান আরও সীমিত। ফলে অনলাইনে সফটওয়্যার ভিত্তিক পরীক্ষা হলে তারা নিশ্চিতভাবেই পিছিয়ে পড়বেন বা বঞ্চিত হবেন। এক্ষেত্রে শহরের ধনী পরিবারের শিক্ষার্থীরা সহজেই উৎরে যাবেন বলে মনে করছেন তারা।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটির (বিডিইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূরের নেতৃত্বে তৈরি করা একটি মোবাইল বেসড সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছে ভর্তি পরীক্ষায়। অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, ‘সিম্পল কনসেপ্টে সফটওয়্যারটির তৈরি করা হয়েছে। তবে এখানে অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীদের কোন অনিয়মের আশ্রয়ের সুযোগ থাকবে না।’
তবে এ সিদ্ধান্তে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিকট থেকে এ ধরনের সিদ্ধান্ত কীভাবে আসে, আমার বোধগম্য নয়। যেখানে গ্রামের দরিদ্র মানুষের অ্যাপস কিংবা স্মার্টফোনই ব্যবহারের সুযোগ নেই, সেখানে এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ার কথা কীভাবে ভাবতে পারেন তারা? এ সিদ্ধান্ত এসেছে তাদের নিজেদের পারিপার্শ্বিক কথা চিন্তা করে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের ও দরিদ্র শ্রেণির মানুষের কথা ভেবে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।’ এছাড়া পরীক্ষায় কীভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এবার এইচএসসিতে অটোপাস করা ঝিনাইদহের এক শিক্ষার্থীর ভাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমার পরিবারের দুজনের স্মার্টফোন আছে, দুজনই ঢাকায় থাকি। আমার বোন কীভাবে অনলাইনে পরীক্ষা দেবে ভেবে পাচ্ছি না। আর গ্রামে গেলে তো কথা বলার নেটওয়ার্কই ঠিকমতো পাওয়া যায় না। সেখানে অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত কোন যুক্তিতে বুঝতে পারছি না।’ দেরিতে হলেও সরাসরি কেন্দ্রে বসে এই পরীক্ষা নেয়া উচিৎ বলে মত তার।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, ‘বৈঠকে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ নূরের উদ্ভাবিত সফটওয়্যার ব্যবহারের প্রস্তাব এসেছে। এ প্রস্তাবে সবাই প্রশংসা করেছেন। আমরা আশা করছি, সফটওয়্যার ব্যবহারের মাধ্যমে এ বছরের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষা অনলাইনে নেওয়া সম্ভব হবে। আর সেটি হবে সমন্বিতভাবে, অর্থাৎ সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।’ তবে সরকার ও ইউজিসির সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।’
Discussion about this post