অনলাইন ডেস্ক
উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাওয়া এখন অনেক শিক্ষার্থীরই প্রথম পছন্দ। ইউনেস্কোর ‘গ্লোবাল ফ্লো অব টারশিয়ারি লেভেল এডুকেশন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ,প্রতি বছর বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি জমান। এদের অধিকাংশই বিভিন্ন কনসালটেন্সি ফার্মের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া ও ভিসা প্রসেসিং সম্পন্ন করে থাকেন। বিনিময়ে ফার্মগুলো একেকজনের কাছ থেকে ৫০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকে। কোন কনসালটেন্সি ফি ছাড়াই উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশগামী শিক্ষার্থীদেরকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্ক (বিডিওএসএন) শুরু করলো বিনামূল্যে উচ্চ শিক্ষা সহায়তা কার্যক্রম।
শনিবার রাতে ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে শুরু হয় এই কার্যক্রম। বিভিন্ন দেশের স্কলারশীপের তথ্য নিয়ে শুরু হওয়া এইচএসএ টকের প্রথম দেশ ছিলো জাপান। জাপানে ৭০০ এর বেশি ইউনিভার্সিটি। কোন কোন ভাষায় এ দেশে পড়ার সুযোগ আছে এবং আন্ডারগ্র্যাড ও পোস্ট গ্র্যাড পড়ালেখা করার জন্য কি কি করা উচিৎ সে বিষয়ে ফেসবুক লাইভে পরামর্শ দেন জাপানের কিসলু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসির আহমেদ এবং ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী সালমা আল আমিরাহ।
বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি এবং ইএসডিজি ফর বিডি প্রকল্পের অধীনে পরিচালিত এই লাইভটি সম্প্রচার হয় বিডিওএসএনের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ (https://www.facebook.com/bdosn) এবং বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে (https://www.facebook.com/SPSBZone) ।
আয়োজকরা জানিয়েছে, উদ্যোগের অধীনে কিভাবে ক্লাস এইট থেকে পিএইচডি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা বিশ্বের ৩০টি দেশের ৬০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন করার সুযোগ পাওয়া যায়,এমন নানা প্রশ্নের উত্তরের জন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক,সাপোর্টগ্রুপ লিডারদের সঙ্গে বিভিন্ন কথোপকথনের লাইভ প্রোগ্রামের ব্যাবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া তথ্য সমৃদ্ধ বিভিন্ন ওয়েবসাইটের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া এবং প্রয়োজনে ওয়ান টু ওয়ান সাপোর্ট দেয়া হবে।
জানা গেছে,প্রতি বছর ইউরোপ,আমেরিকা,অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, জাপান,মালয়েশিয়া, প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেকে বৃত্তি নিয়ে বিনা খরচে পড়ালেখার সুযোগ পাচ্ছেন।পড়ালেখা শেষে কেউ কেউ সেসব দেশে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তুলছেন।
ইউনেস্কো ইনস্টিটিউট ফর স্ট্যাটিসটিকসের (ইউআইএস) তথ্য বলছে,২০০৫ সালে বিভিন্ন দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলেন ১৫ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬ হাজারে। ২০১৯ সালে এসে তা লক্ষাধিক ছাড়ায়।
এ শতকের শুরুতে আন্তর্জাতিক ডিগ্রী প্রত্যাশী বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য ছিল যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও প্রতিবেশী ভারত। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মালয়েশিয়াও তাদের পছন্দের গন্তব্য হয়ে উঠেছে। ইউনেস্কোর তথ্য অনুযায়ী, বিদেশে ডিগ্রি নিতে যাওয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের ৫০ শতাংশের বর্তমান গন্তব্য মালয়েশিয়া। সাত বছরের ব্যবধানে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বেড়েছে ১৫০০ শতাংশ। ২০১০ সালে যেখানে মালয়েশিয়াগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল এক হাজার ৭২২,২০১৯ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ হাজারে।তবে, আমেরিকা,ইউরোপ,ভারত,মালয়েশিয়া,সিঙ্গাপুর,হংকং,অস্ট্রেলিয়া ও জাপানের পাশাপাশি আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা ইরান, কাতার, সৌদিআরব,আরব আমিরাতের মতো মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোতেও আবেদন করতে পারে। ইউনেস্কোর মতে, প্রতিবছর আমাদের দেশ থেকে অনেক ছেলেমেয়ে দেশের বাইরে আন্ডারগ্র্যাড ও পোস্ট গ্র্যাডে পড়তে যায়। এরমধ্যে হয়তো ৫০ জন কোন না কোনভাবে গণিত অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান কংগ্রেস ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত এবং তারা খুব ভাল রেকমেন্ডেশন যোগাড় করতে পারে। এদের বেশিরভাগই স্কলারশীপ পায়। বাকীরা নিজেদের টাকাতে পড়তে যায়।
Discussion about this post