নিজস্ব প্রতিবেদক
সরকার এরই মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করেছে। স্কুলগুলোর বার্ষিক পরীক্ষাও না হওয়ার আশঙ্কা বেশি। অর্থাৎ শিক্ষাবর্ষ নিয়মিত রাখতে তারা পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আগামী জানুয়ারিতে স্কুল খোলা সম্ভব না হলেও যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো এবং শিক্ষাবর্ষ শুরু করার পরিকল্পনা রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের।
অপরদিকে প্রতিবছর নভেম্বর মাসে নামিদামি স্কুলগুলো তাদের ভর্তি ফরম বিতরণ শুরু করে। আর ডিসেম্বরে নেওয়া হয় লটারি ও ভর্তি পরীক্ষা। অভিভাবকরাও তাঁদের সন্তানদের পছন্দের স্কুলে ভর্তি করাতে ছোটেন এক স্কুল থেকে অন্য স্কুলে। কিন্তু এবার করোনার কারণে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আরো কত দিন বন্ধ থাকবে, তা-ও স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এই অবস্থায় অভিভাবকদের প্রশ্ন, এবার স্কুলের ভর্তি পরীক্ষার কী হবে?
সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে গত ১৪ অক্টোবর বৈঠক করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তর। সেখানে ভর্তি পরীক্ষার চারটি সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আলোচনা হয়। যদি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চলে আসে, তাহলে সরাসরি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। এটি সম্ভব না হলে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। তবে অনলাইনে ভর্তি পরীক্ষা নিলে ইন্টারনেটের গতি কেমন থাকবে বা সবাই ভর্তি পরীক্ষায় বসতে পারবে কি না, সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দিহান মাউশি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।
এ ছাড়া আরো দুটি বিকল্প উপায় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সর্বশেষ মূল্যায়নের প্রাপ্ত নম্বর বা গ্রেডের ভিত্তিতে ভর্তি করার ব্যাপারেও প্রস্তাব আসে। সব শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
মাউশি অধিদপ্তরের পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. বেলাল হোসাইন বলেন, ‘স্কুলে ভর্তি নিয়ে আমরা প্রাথমিকভাবে একটি বৈঠক করেছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরাসরি ভর্তি পরীক্ষা নেওয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ। তবে আমরা সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখছি। একাধিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনাও করেছি। চলতি মাসের শেষ দিকে মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে আরো একটি বৈঠক হতে পারে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে মন্ত্রণালয়।’
বিগত বছরগুলোতে শুধু প্রথম শ্রেণিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তি করত স্কুলগুলো। ষষ্ঠ শ্রেণিতে পিইসির নম্বরের ভিত্তিতে এবং নবম শ্রেণিতে জেএসসির নম্বরের ভিত্তিতে ভর্তি করা হতো। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণিতে নেওয়া হতো লিখিত পরীক্ষা।
জানা গেছে, ভর্তির ক্ষেত্রে আগামী শিক্ষাবর্ষেও রাজধানীর সরকারি স্কুলগুলোকে আগের বছরগুলোর মতো তিনটি ক্লাস্টারে ভাগ করা হবে। তবে চলতি শিক্ষাবর্ষে ভর্তি করা শিক্ষার্থীরা একটি ক্লাস্টারে একটি স্কুল পছন্দ করতে পারত। আগামী বছর শিক্ষার্থীরা পাঁচটি স্কুল পছন্দ করতে পারবে। এ ছাড়া আগামী শিক্ষাবর্ষে বদলি হওয়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য শ্রেণিকক্ষে স্থান সংকুলান হওয়া সাপেক্ষে প্রতি শ্রেণিতে মোট আসনের ৫ শতাংশ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব এসেছে।
আগামী শিক্ষাবর্ষেও আগের মতো ৪০ শতাংশ এলাকা কোটা বরাদ্দ রাখার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিতে শিক্ষার্থীর বয়স কমপক্ষে ছয় বছর হতে হবে। শিক্ষার্থীদের আগের মতোই আবেদন করতে হবে অনলাইনে।
রাজধানীতে সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪২। এর মধ্যে প্রথম শ্রেণি রয়েছে ১৪টি স্কুলে। সরকারি সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তিতেই প্রতিযোগিতা রয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীতে প্রায় ৩০০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে অবকাঠামো, খেলার মাঠ, শিক্ষকসহ অন্যান্য সুবিধা থাকার পরও সেসব স্কুলে অভিভাবকদের আগ্রহ নেই বললেই চলে। মূলত নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানরা এসব স্কুলে ভর্তি হয়।
রাজধানীতে ৩২১টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের বেশির ভাগই শুরু প্রথম শ্রেণি থেকে। তবে এর মধ্যে মানসম্পন্ন নামিদামি স্কুল রয়েছে মাত্র ২০ থেকে ২৫টি। ফলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের সব আগ্রহ ওই নামিদামি স্কুলগুলো ঘিরে। বাকি স্কুলগুলোতে আসন খালি থাকলেও অভিভাবকদের আগ্রহ দেখা যায় না। মানসম্পন্ন স্কুলের সংখ্যা না বাড়ায় কয়েকটি স্কুল ঘিরেই অভিভাবকদের সব আগ্রহ। আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিলের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম বলেন, ‘ভর্তির বিষয়ে আমরা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছি। তারা যেভাবে বলবে সেভাবে আগামী শিক্ষাবর্ষে ভর্তি করা হবে।’
Discussion about this post