নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা সংক্রমণের শুরুতে অতোটা সংক্রমিত না হলেও সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ক্যাম্পাসে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে ‘নো মাস্ক নো নো এন্টি’ নীতি বাস্তবায়নে তৎপরতা চালাচ্ছেন প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, ইতোমধ্যে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামালের পরিবারের দুই সদস্য এবং উপাচার্যের অফিসের এক কর্মকর্তার পরিবারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইনস্টিটিউট, দপ্তরের অন্তত ২০টি পরিবারের অর্ধশতাধিক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন পরিস্থিতিতে গত ১৩ নভেম্বর থেকে ক্যাম্পাসে চালু হয়েছে ‘নো মাস্ক নো নো এন্টি’ নীতি। তবে কিছু কিছু নিরুৎসাহী আগন্তুকদের কারণে ঢিলেঢালাভাবে চলেছিল সে নীতি। এদিকে, গত কয়েক দিন থেকে এ নিয়ম যথাযথতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে তৎপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে ক্যাম্পাসে প্রবেশের ক্ষেত্রে ‘নো মাস্ক নো এন্ট্রি’, এবং রেজেস্ট্রারভবনসহ বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতিতে চলছে কর্তৃপক্ষ। এবার এ নীতি বাস্তবায়নে মাঠে নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা প্রক্টর ও তার টিম।
১৮ নভেম্বর ক্যাম্পাসে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ক্যাম্পাসে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের নিয়ে ক্যাম্পাসে টহল দেন প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী। এ সময় মাইকে ঘোষণা করা হয়, মাস্ক ছাড়া ক্যাম্পাসে কেউ অবস্থান করতে পারবেন না। বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে আড্ডা দেয়ার বিষয়েও কড়াকড়ি আরোপ করেন প্রক্টর।
এসময় যাদের কাছে মাস্ক ছিলো না তাদের মাস্ক বিতরণ করা হয়। প্রশাসনিক ভবনের সামনে আড্ডা দেয়া কর্মকর্তাদের অহেতুক গণজমায়েতের মতো একত্র না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
প্রক্টর অফিসসূত্রে জানা গেছে, মাস্ক ব্যবহারসহ ক্যাম্পাসে সামাজিক দূরত্ব এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সার্বক্ষণিক ৬টি মাইকে আহ্বান জানাচ্ছে প্রক্টরিয়াল টিমের কর্মকর্তারা। পাশাপাশি বহিরাগতদের বিনা প্রয়োজনে ক্যাম্পাসে অবস্থান না করার জন্য বলা হচ্ছে। আর ক্যাম্পাসে কাজের জন্য আসা লোকদেরকে মাস্ক পড়া এবং শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে বলা হচ্ছে।
বহিরাগত ও ভাসমান দোকানের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা ব্যাহত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। সে হিসেবে ক্যাম্পাসে ভাসমান দোকান নিয়ন্ত্রণেও তৎপরতা চালাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরিয়াল টিম।
এর পাশাপাশি ক্যাম্পাসে করোনা নিয়ন্ত্রণে তিন নির্দেশনা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়। ক্যাম্পাসে আসা কর্মচারী ও আগন্তুকদেরকে স্বাস্থ্যবিধির যথাযথ অনুসরণ করা; বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকেও কঠোরভাবে নিয়মানুসরণের জন্য পরিবহন ম্যানেজারকে নির্দেশ এবং দ্বিতীয় সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রদত্ত সুপারিশ যথাযথ অনুসরণ করতে হবে।
এছাড়া যারা ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন তাদেরকে সুস্থ্যতার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং যারা আক্রান্ত সন্দেহে আছেন তাদেরকে বাসায় যথাযথ বিধি অনুসরণ করতে বলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের উপাচার্যের অফিসের কর্মকর্তাসহ আরো বেশ কয়েকজন আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন কর্মকর্তারা। দফতরে দফতরে সাঁটিয়ে দেয়া হয়েছে ‘‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’’ নির্দেশনা।
অধিকাংশ অফিসেই ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না সেবা নিতে আসা লোকজনকে। কক্ষের বাইরে অবস্থান করেই সেবা নিতে দেখা গেছে অনেককে। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, কোষাধ্যক্ষ, হিসাব পরিচালক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতরসহ প্রায় সবখানেই এমন তৎপরতা দেখা গেছে।
Discussion about this post