শিক্ষার আলো ডেস্ক
প্রচন্ড কর্মব্যস্ততা ,সামাজিক অস্থিরতা ,অপসংস্কৃতির ছোবল,নৈতিক অবক্ষয় ইত্যাদি নানা অনিবার্য কারণে সন্তানকে যথার্থ শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ ও সময় প্রদানে অপারগ হয়ে পড়েছেন প্রায় সকল শ্রেণির অভিভাবক! আর এই বাস্তবতায় প্রিয় সন্তানের সম্ভাবনাময় ভবিষ্যত পড়ছে চরম ঝুঁকির মুখে।সুযোগ বাড়ছে নৈতিক স্খলনের।
আর সন্তান যদি হয় চঞ্চল ও অমনোযোগী প্রকৃতির তাহলে তো দুশ্চিন্তার শেষ নেই।হতাশ ও উদ্বিগ্ন এই অভিভাবকদের জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে ব্যতিক্রমী এক শিক্ষাধারা চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড অনুমোদিত ‘সারাদিনের স্কুল এন্ড কলেজ’ ।
যাঁর গবেষণার ফসল এই ভিন্ন ধারার স্কুল তিনি কল্যাণধর্মী সংগঠন সৃজনী শিক্ষা ট্রাস্ট’ এর প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব ড.মুহাম্মদ মুসা চৌধুরী।তাঁর কাছে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন,বর্তমানে জাতীয় জীবনে মূল্যবোধের প্রকট অবক্ষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।এই অবক্ষয় রোধ করতে হলে শিক্ষার্থীদের ধর্মীয় ও নৈতিক,নিজস্ব সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা,বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গঠন,দেশাত্মবোধ ও মানবতাবোধ জাগরণে উদ্দীপ্ত করার কোন বিকল্প নেই।এ লক্ষ্যে বিশ্বস্ত অভিভাবকত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেছি ন্যাশনাল কারিকুলাম এর অধীনে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম শিক্ষালয় ”সারাদিনের স্কুল এন্ড কলেজ”।
শিক্ষা ব্যবস্থাপনা ঃ
স্কুলের সার্বিক পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন ট্রাস্ট নির্বাহী কমিটির সদস্য প্রিন্সিপ্যাল ড.নন্দিতা চৌধুরি।অভিজ্ঞ এই শিক্ষক বলেন, সারাদিনের স্কুল একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগ।এখানে শিশু শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে (ন্যাশনাল কারিকুলাম) আবাসিক ,অনাবাসিক ব্যবস্থাপনায় বোর্ড নির্ধারিত পাঠ্য পুস্তকের পাশাপাশি সঠিক উচ্চারণে বাংলা ও ইংরেজি বলা,লেখা এবং কম্পিউটার শিক্ষারও ব্যবস্থা রয়েছে।
এ প্রতিষ্ঠান বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সার্বক্ষণিক দেখাশুনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদেরকে শারীরিক,মানসিক মেধাভিত্তিক ও নৈতিক যোগ্যতা সম্পন্ন করে গড়ে তোলার সময়োপযোগী চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছে।সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত একজন শিক্ষার্থী সকালের নাস্তা,ধর্মীয় শিক্ষা,শ্রেণী কার্যক্রম ,টিফিন,দুপুরের খাবার,যোহরের নামায,ইংরেজি ও গণিতের বিশেষ কোচিং,খেলাধূলা,বিকালের নাস্তা,আসরের নামায, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ,মাগরিবের নামায,বাড়ির কাজ তৈরী,পাঠ শিখা প্রভৃতি কার্যক্রম প্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত সময়সূচী অনুযায়ী সম্পন্ন করে।
স্কুলেই সকল পড়ালেখা আদায়ের ব্যবস্থা থাকায় প্রাইভেট পড়া বা বাড়িতে পড়ালেখার সামান্যতম ঝামেলাও নেই।সমন্বিত এই কার্যক্রমের ফলে প্রতিবছর পি.ই.সি .ই,জে.এস.সি এবং এস.এস.সি পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এ–প্লাস সহ শতভাগ পাশের কৃতিত্ব লাভ করে এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা”।
সারাদিনের স্কুলের বৈশিষ্ট্য ঃ
সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত স্কুলে থাকতে হয়।সুষম খাবার সহ তিনবেলা নাস্তা এবং একবেলা ভাত।অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক–শিক্ষিকা দ্বারা পাঠদানের ব্যবস্থা।শিক্ষার্থীদের আনা–নেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিজস্ব গাড়ি।মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য কোরআন ও নামায শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং ভিন্ন ধর্মাবলর্ম্বীদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের সুব্যবস্থা।
স্কুলেই সকল পড়া আদায়।শারীরিক যোগ্যতা অর্জনের জন্য শরীর চর্চার ব্যবস্থা।উন্নত আবাসিক ব্যবস্থাপনা।লেখাপড়ার পাশাপাশি সহপাঠক্রমিক কার্যাবলীতে অংশগ্রহণের সুযোগ।শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মানোন্নয়নের জন্য সাপ্তাহিক পরীক্ষা।সমৃদ্ধ বিজ্ঞানাগার এবং পাঠাগার।আধুনিক কম্পিউটার ল্যাব।
প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে কম্পিউটার বিষয়ে হাতে–কলমে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা।বিষয়ভিত্তিক বাধ্যতামূলক কোচিং ব্যবস্থা।বিভিন্ন প্রকার আনন্দদায়ক আভ্যন্তরীণ খেলাধূলার ব্যবস্থা ও নৈতিকতা সম্পন্ন বিনোদন ব্যবস্থা।প্রতি সপ্তাহে শিক্ষার্থীকে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা স্বাস্থ্য পরীক্ষা।লেখাপড়ার সাথে নৈতিক ও মূল্যবোধ শিক্ষার ব্যবস্থা।সর্বদা অভিভাবকের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা।
ডিজিটাল ক্লাসরুম ঃ
সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রুপকল্প গঠনে শিক্ষাক্ষেত্রে মাল্টিমিডিয়া প্রযুক্তি ব্যবহারের কোন বিকল্প নেই।তাই সারাদিনের স্কুল সরকারের মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে নিবন্ধিত একটি স্কুল যার প্রতিটি ক্লাসরুমে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর,সাউন্ডসিস্টেম,সিসিটিভি,ইন্টারনেট সংযোগ,ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ইত্যাদি সংযুক্তি এক নতুন মাত্রা এনে দিয়েছে।এ ধরণের ক্লাসে ভিডিও এ্যানিমেশন ,পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশান এর মাধ্যমে শিক্ষকের পাঠদান শিক্ষাকে করে তোলে বাস্তব ও আনন্দময়।মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমে দুর্বোধ্য বিষয়সমূহ ছক,সমীকরণ,থ্রী–ডি পিকচার অথবা ভিডিওর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর কাছে হয়ে উঠে সহজ থেকে সহজতর।
পরীক্ষা ও মূল্যায়ন নীতি ঃ
নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী প্রত্যেক শ্রেণীতে দুটি টার্মিনাল পরীক্ষা হয়ে থাকে। নির্ধারিত বিষয়ের উপর সপ্তাহের প্রতি শনিবার সাপ্তাহিক টেষ্ট অনুষ্ঠিত হয়। সাপ্তাহিক টেষ্ট এর জন্য নির্ধারিত বিষয়ভিত্তিক ২০ নম্বর প্রত্যেক বিষয়ে টার্মিনাল পরীক্ষায় যোগ হয়।সবগুলো পরীক্ষার সমষ্টিগত গড় ফলাফলের ভিত্তিতে শিক্ষাবর্ষ শেষে চূড়ান্ত মূল্যায়নের মাধ্যমে ছাত্র–ছাত্রীদের মেধাস্থান নির্ণয় করা হয়।এখানে আরো উল্লেখ্য যে ,তৃতীয় শ্রেণী হতে স্কুলের প্রতিটি টার্ম ও ফাইনাল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হয় বোর্ড পরীক্ষার অনূরূপ।প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্য রয়েছে বিশেষ কমিটি।প্রতিটি উত্তরপত্রে থাকে কভার পৃষ্ঠা এবং ও.এম.আর ফরম।পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর বিশেষ কোড নম্বর সহকারে উত্তরপত্র পাঠিয়ে দেওয়া হয় পরীক্ষকের কাছে।
সৃজনশীল কর্মকান্ড ঃ
শিক্ষার পাশাপাশি সহ– শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মেধা ও মননের বিকাশ ঘটতে না পারলে দক্ষ ও চিন্তাশীল জনশক্তি তৈরী সম্ভব নয়।তাই সপ্তাহের প্রতি বুধবার নির্ধারিত সময়ে রুটিন অনুসারে বিতর্ক প্রতিযোগিতা,আবৃত্তি,সংগীত,নাট্যাভিনয়,ক্বিরাত,হামদ,নাত, গজল প্রভৃতি প্রশিক্ষক দ্বারা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।হাতের লিখা সুন্দর করার জন্য নিয়মিত হস্তলিখন ক্লাস সহ নৈতিকতা প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।বার্ষিক বনভোজন ও শিক্ষা সফর এবং জাতীয় দিবসসমূহ সাড়ম্বরে উদযাপন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাকে আরো আনন্দদায়ক করে তোলে।
এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষানীতি হচ্ছে একজন শিক্ষার্থীকে পুঁথিগত শিক্ষার পাশাপাশি জীবনমুখী নৈতিক শিক্ষাদান ও নিয়মশৃঙ্খলার মাধ্যমে আদর্শ মানুষরূপে গড়ে তোলা।শিক্ষার্থীরা এখানে সুশৃঙ্খল জীবন,উন্নতমানের ব্যক্তিগত আচার–আচরণ এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের শিক্ষা লাভ করে।
করোনাকালীন শিক্ষা ব্যবস্থাপনা
করোনাকালে শিক্ষা বিপর্যয়ে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবন সচল রাখতে ‘সারাদিনের স্কুল এন্ড কলেজ’ অনলাইন ক্লাসের আয়োজন করেছে।সরকার পরিচালিত সংসদ টিভির পাশাপাশি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ ফেসবুক এবং জুম এ্যাপের মাধ্যমে নিয়মিত বিষয়ভিত্তিক পাঠদান করেছেন।ক্লাস শেষে রেকর্ডকৃত ভিডিও ক্লাস ডাউনলোড করে তা আবার দেখার সুযোগ শিক্ষার্থীদের পাঠ আত্মস্থ করতে ভীষণ সহায়ক হয়েছে।ছাত্রছাত্রীরা মাসিক পরীক্ষা, সাময়িক পরীক্ষাসহ নানা মূল্যায়ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে।সরকার কর্তৃক নির্ধারিত এ্যাসাইনমেন্টও সম্পন্ন করেছে মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা। সম্মানিত অভিভাবকবৃন্দ কর্তৃক প্রশংসিত হয়েছে আমাদের এই শিক্ষাসেবা।
আরও বিস্তারিত জানতে ৬৮,কাতালগঞ্জ (মির্জাপুলের দক্ষিণ পার্শ্বে) ,পাচঁলাইশ,চট্টগ্রাম এই ঠিকানায় এবং ৬৫৫৯৯৯,০১৫৫৭–২৩৭২২২ ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে।
Discussion about this post