বিশেষ প্রতিবেদক
গেলো ২০২০ এ করোনা মহামারিতে রীতিমতো শিক্ষাঙ্গনে ছিল স্থবিরতা।নেই ক্লাস, নেই পরীক্ষা, নেই কোন শিক্ষার্থী!
বছরের প্রায় প্রথমদিকেই অন্য ক্যাম্পাসগুলোর মতো বন্ধ হয়ে যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাস। বছরের শুরু থেকেই করোনার প্রভাবে পাল্টাতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের চিত্র। তারই ধারাবাহিকতায় গত ১১ মার্চ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।করোনা প্রভাব বাড়তে থাকায় ১৮ মার্চ বিভিন্ন মেয়াদে ছুটি ও ১২ এপ্রিল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া করোনা শনাক্ত বেড়ে যাওয়ায় ক্যাম্পাসে কয়েক ধাপে লকডাউন ঘোষণা করে চবি কর্তৃপক্ষ।
তবুও বছরজুড়ে বিভিন্ন ঘটনায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল চবি।শূন্য ক্যাম্পাসে তবুও ছিলো কিছু অর্জন।
ভর্তি পরীক্ষার্থীদের আন্দোলন
২০১৯-২০ সেশনে চবির ভর্তি পরীক্ষায় নানা বিতর্ক থাকলেও সবচেয়ে আলোচিত ছিল উচ্চমাধ্যমিকে মানোন্নয়ন দেওয়া শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া। নোটিশ কিংবা বাছাই প্রক্রিয়ায় ভুল করলেও শেষ পর্যন্ত এ পরীক্ষার্থীদের ভর্তি করাতে রাজি হয়নি কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনার পর মানববন্ধন এবং অনশন থেকে শুরু হয়ে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। শেষপর্যন্ত আদালতের রায় এসেছিল শিক্ষার্থীদের পক্ষে।
‘স্থগিত’ পরীক্ষা নেওয়া শুরু
বছরের শুরুটা যেমন হয়েছিল ভর্তি পরীক্ষায় মানোন্নয়ন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, তেমনি বছরের শেষটাও হলো ‘স্থগিত’ পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে চবি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে। শিক্ষার্থীদের তিন মাসের আন্দোলনের পর গত ৩ ডিসেম্বর বিভিন্ন বিভাগের স্থগিত হওয়া পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে নোটিশ দেয় চবি কর্তৃপক্ষ। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চতুর্থ বর্ষের অসমাপ্ত পরীক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন বিভাগ পরীক্ষা নেওয়া শুরু করে।
চবি ওয়েবসাইট হ্যাক পুনরুদ্ধার
২৫ জানুয়ারি ভারতীয় হ্যাকারদের দ্বারা হ্যাকড্ হয় চবির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট। তবে হ্যাক হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ওয়েবসাইটটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে চবির আইসিটি সেল।
ছাত্রলীগের কমিটি
দীর্ঘ ১৯ মাস পর ২০১৯ সালের জুলাই মাসে দুই সদস্যের কমিটি পায় চবি ছাত্রলীগ। এরপর আরও ১৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে পারেনি শাখা ছাত্রলীগ।
চবিতে করোনা ল্যাব
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেদনে ২৭ মে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে করোনার নমুনা পরীক্ষার অনুমোদন পায় চবি। এরপর জীববিজ্ঞান অনুষদের সেন্ট্রাল বায়োলজিক্যাল রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে করোনা টেস্ট শুরু হয়। ১ জুন ভিডিও কনফারেন্সে এ ল্যাবের উদ্বোধন করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।সফলতার সাথে শতশত রোগীর করোনা পরীক্ষা করে চলেছে চবি ল্যাব। এই ল্যাব চবি পরিবার, তথা চট্টগ্রামবাসীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
চবি গবেষকদের করোনার জিন শনাক্ত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল গবেষক চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা (১১ জেলা) থেকে করোনাভাইরাসের (SARS-CoV-2) নমুনা সংগ্রহ করে ভাইরাসটির জিনের বিন্যাস উন্মোচন (জিনোম সিকোয়েন্সিং) করেছেন।চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলা থেকে এ ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে এসব জেলায় করোনার জিনের বিন্যাস উন্মোচন করেন তারা। ২৬ ডিসেম্বর এ গবেষণা সম্পন্ন হয়।
এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূইয়া, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক ও ড. এইচ. এম. আবদুল্লাহ আল মাসুদ।
গবেষকরা আশা করছেন, তাদের উন্মোচনকৃত জিনের বিন্যাস চট্টগ্রাম বিভাগের সব জেলায় ভাইরাসের প্রকৃতি, বিস্তার, উৎপত্তিস্থল, বৈচিত্রতা ও মিউটেশন-এর মাধ্যমে জিনগত পরিবর্তন সম্পর্কে ধারনা দেবে। যা ভবিষ্যতে কভিড-১৯ মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।
অনলাইন ক্লাস ও ফ্রি ইন্টারনেট
অনেক আলোচনার পর ৬ সেপ্টেম্বর থেকে চবিতে শুরু হয় অনলাইন ক্লাস। তবে অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে নভেম্বর থেকে প্রতিমাসে ১৫ জিবি ফ্রি ইন্টারনেট সেবা চালু করে চবি কর্তৃপক্ষ। যদিও রবি অপারেটরের দেওয়া এ ইন্টারনেট ব্যবহারের নানা সীমাবদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে রবি সিমের নেটওয়ার্ক নিয়েও উঠেছে নানা প্রশ্ন। ফলে ক্লাসে উপস্থিতির পরিমাণ ছিল ৫০ শতাংশেরও কম।
এ ছাড়া অনলাইন ক্লাসে অংশ নিতে অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের ইউজিসি কর্তৃক ‘সফট লোন’ কার্যক্রমে অংশ নিয়েছে চবি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪ তম জন্মদিন
১৮ নভেম্বর ছিলো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪ তম জন্মদিন ।
১৯৬৬ সালের ১৮ নভেম্বর প্রতিষ্ঠা লাভের পর উপাচার্য ড. আজিজুর রহমান মল্লিকের হাত ধরে শুরু হয়ে হাটিহাটি পা পা করে ৫৪ বছরে এক নব যৌবনে এসে পা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। বর্তমান উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম নারী উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার।
৫৪ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সবাইকে অভিনন্দন জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার বলেন, ‘সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ৫৪ বছর পার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে বিশ্বমানের করে গড়ে তুলতে আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাবো। আমার সুদক্ষ সহকর্মীদের সাথে নিয়ে পথ চলতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের যে গুরু দায়িত্ব রাষ্ট্রপতি আমার কাঁধে দিয়েছেন, তা সৎ ও নিষ্ঠার সাথে পালন করবো। আর এ পথচলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে একটি পরিবারের মত এগিয়ে যেতে চাই।’
চবি উপাচার্যের রোকেয়া পদক
নারী জাগরণে বিশেষ অবদান রাখায় ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২০’র জন্য মনোনিত হয়েছেন চবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার। ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়া দিবসে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ পদক গ্রহণ করেন তিনি।
Discussion about this post