নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রায় এক দশক ধরে শূন্য উপাচার্য পদ। প্রতিষ্ঠার পর দুই যুগ পেরোলেও কখনই নিয়োগ দেয়া হয়নি উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ।রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রক্টর ও গ্রন্থাগারিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদেও স্থায়ী কোনো কর্মকর্তা নেই। পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত—এমন বিভাগও পরিচালিত হচ্ছে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে। নামসর্বস্ব এমন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো নিয়েই বছরের পর বছর হাজারো শিক্ষার্থীকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ডিগ্রি দিয়ে আসছে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি।
তাই পর্যাপ্ত শিক্ষক না থাকার কারণে বেসরকারি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (এইউবি) পাঁচটি বিভাগের সাতটি প্রোগ্রামে শিক্ষার্থী ভর্তিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তদারকি সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।
গত রোববার ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়টির রেজিস্ট্রারকে এ বিষয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তির ক্ষেত্রে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা দেয়া প্রোগ্রমগুলো হলো বিএ (অনার্স) ইন বাংলা, এমএ ইন বাংলা, এমএসএস ইন ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট, বিএ (অনার্স) ইন ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড সিভিলাইজেশন, এমএ ইন ইসলামিক হিস্ট্রি অ্যান্ড সিভিলাইজেশন, বিএড ও এমএড।
জানা গেছে, গত বছরের ১ নভেম্বর এশিয়ান ইউনিভার্সিটি পরিদর্শনে যান ইউজিসির পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি। সরেজমিন তদন্ত ও সংশ্লিষ্ট তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে সম্প্রতি এশিয়ান ইউনিভার্সিটির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে ওই পরিদর্শক দল।
ইউজিসির তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির ২৩টি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম চালু রয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ প্রোগ্রামেই ন্যূনতম যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষক নেই। বিএড ও এমএড প্রোগ্রামে প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এসব শিক্ষার্থীর পাঠদানে শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন। বিএড ও এমএড প্রোগ্রামে শিক্ষকতা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। যদিও একমাত্র শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। একইভাবে বাংলা ও ইংরেজি বিভাগের প্রতিটিতে পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি থাকা সত্ত্বেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন করে। ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগেও শিক্ষক রয়েছেন মাত্র একজন। যদিও ইউজিসির নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতিটি প্রোগ্রামে কমপক্ষে চারজন স্থায়ী শিক্ষক থাকতে হবে। এর মধ্যে একজন কমপক্ষে সহযোগী অধ্যাপক পদমর্যাদার হতে হবে।
এ প্রসঙ্গে, এ প্রসঙ্গে পরিদর্শন কমিটি ও ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের গণমাধ্যমকে বলেন, এশিয়ান ইউনিভার্সিটিতে আমরা গিয়ে বিভিন্ন ধরনের আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক অনিয়ম দেখতে পেয়েছি। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে ন্যূনতম যে জনবল কাঠামো প্রয়োজন, সেটির ধারেকাছেও নেই বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয়টি পাঁচ-ছয়শ শিক্ষার্থীর বিপরীতে মাত্র একজন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান পরিচালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টি কোনো ধরনের নিয়ম-শৃঙ্খলাই নেই। অনিয়ম বন্ধে আমরা প্রতিবেদনে বেশকিছু সুপারিশ করেছি।
এছাড়া আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম বিষয়ে বেশকিছু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আইন অনুসরণপূর্বক উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগের প্যানেল পাঠাতে হবে। রেজিস্ট্রার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, প্রক্টর, আইকিউএসি পরিচালক ও গ্রন্থাগারিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পূর্ণকালীন জনবল নিয়োগ দেয়ার জন্য সময় দেয়া হয়েছে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এছাড়া বিভাগগুলোতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইউজিসির নীতিমালা অনুসরণ করে যোগ্য ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ দিতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ও পরিদর্শক কমিটির সদস্য ড. মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেন আইন অনুযায়ী সুশাসনের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।পরিদর্শন প্রতিবেদনে যেসব সুপারিশ এসেছে, আমরা সে আলোকে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়টিকে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা সেটি পূর্ণাঙ্গভাবে পরিপালন করবে।
Discussion about this post