নিজস্ব প্রতিবেদক
সাধারণত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ— এ তিন পদে নিয়োগ দেন আচার্য ও রাষ্ট্রপতি। কিন্তু দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম না মেনে নিজেরাই এসব পদ ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বছরের পর বছর শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম চালায়।
এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের তদারক সংস্থা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ তথ্য বলছে, দেশে সরকার কর্তৃক অনুমোদিত ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র ১১টিতে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ— এ তিন পদের সবাই রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত। বাকি ৯৬টিতে নিজেরাই এসব পদ ভারপ্রাপ্ত হিসেবে নিয়োগ দিয়ে রেখেছেন কিংবা শূন্যপদ রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে শূন্যপদ পূরণে ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বেশ কয়েকবার তালিকা চাওয়া হয়েছে। শিগগির এসব তালিকা পাওয়া না গেলে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে আইনানুগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জানা গেছে, গত আগস্টে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষের শূন্যপদ পূরণের ব্যবস্থা নেয়া সংক্রান্ত এক ভার্চুয়াল মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি ও ট্রেজারের শূন্যপদ রয়েছে। শিগগির এই সব শূন্যপদ পূরণের উদ্যোগ নেয়া হবে।
এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি, প্রো-ভিসি ও কোষাধ্যক্ষের পদ শূন্য রয়েছে তাতে নিয়োগের জন্য তিনজনের নাম প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের চিঠি পাঠায়। এরপরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয় তা পাঠায়নি। এদিকে, বৃহস্পতিবার (৭ জানুয়ারি) তৃতীয় বারের মতো চিঠি পাঠানো উদ্যোগ নেয় মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শখা-১ এর উপসচিব নাসরীন মুক্তি স্বাক্ষরিত এক স্বারকে বলা হয়, “উপযুক্ত বিষয় ও সূত্রের পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ অনুযায়ী, আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য/উপ উপাচার্য/ট্রেজারার এর শূন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে উক্ত পদসমুহের বিপরীতে ৩ জনের প্যানেল প্রস্তুতপূর্বক প্রস্তাব ১০/০৯/২০২০ তারিখের মধ্যে প্রেরণের জন্য সূত্রোক্ত ১নং স্মারকে অনুরােধ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সুত্রোক্ত ২নং স্মারকে ৮.১০.২০২০ তারিখের মধ্যে প্রস্তাব প্রেরণের জন্য পুনরায় অনুরােধ করা হয়। কিন্তু অদ্যাবধি প্রস্তাব প্রস্তাব পাওয়া যায়নি।”
“এমতাবস্থায়, উপাচার্য/উপ-উপাচার্য/ট্রেজারার এর শুন্য পদ পূরণের লক্ষ্যে উক্ত পদস বিপরীতে ৩ জনের প্যানেল প্রস্তুতপূর্বক আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে আবশ্যিকভাবে প্রস্তাব এ বিভাগে প্রেরণের জন্য নির্দেশক্রমে পুনরায় অনুরােধ করা হলো। উল্লেখ্য যে, উক্ত তারিখের মধ্যে প্রস্তাব পাওয়া না গেলে প্রয়ােজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিষয়টি অতীব জরুরি।”
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনানুযায়ী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টিজ এই তিন পদে নিয়োগ দিতে একেকটি পদের বিপরীতে তিনজন অধ্যাপকের নাম প্রস্তাব শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেগুলোর ইউজিসির মাধ্যমে যাচাই করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে আচার্য হিসেবে রাষ্ট্রপতি একজনকে নিয়োগ দেন।
ইউজিসির সর্বশেষ তথ্যমতে, শীর্ষ তিনটি পদই পূরণ আছে, এমন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সংখ্যা মাত্র ১১। অভিযোগ আছে, আইন অমান্য করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিজেদের মতো করে কাউকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেয়, যা আইনের পরিপন্থী। কারণ, রাষ্ট্রপতি ছাড়া এই তিন পদে আর কেউ নিয়োগ দিতে পারেন না।
রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগকৃত উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ রয়েছেন যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে: ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস এগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজি (আইইউবিএটি), আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি), ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, সিটি ইউনিভার্সিটি, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি, উত্তরা ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব সাউথ এশিয়া, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ, বরেন্দ্র ইউনিভার্সিটি, বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজি এবং নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
Discussion about this post