শিক্ষার আলো ডেস্ক
ইউজিসির ৪৬তম বার্ষিক প্রতিবেদনে ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের পেছনে সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি। তাদের শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয় ৯ লাখ ২৫ হাজার ৯৬৯ টাকা। অন্যদিকে শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয়ে সবচেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের শিক্ষার্থী প্রতি মাথাপিছু ব্যয় মাত্র ২ হাজার ৮২৭ টাকা। ফলে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয়ে বিস্তর ফারাক রয়েছে। যা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে এক ধরণের বৈষম্য তৈরি করছে বলে অভিমত শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ৯৮ জন শিক্ষার্থীর পেছনে ২০১৯ সালে ব্যয় করেছে ৯ কোটি ৭ লাখ ৪৪ হাজার ৯৬২ টাকা। অন্যদিকে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ৫ লাখ ১৯ হাজার ৬১৩ জন শিক্ষার্থীর পেছেনে ব্যয় করেছে ১৪৬ কোটি ৯৪ লাখ ৫৫ হাজার ১৭১ টাকা।
এছাড়া তথ্য অনুযায়ী, শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থী প্রতি তাদের ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ৬৪ হাজার ৪৮৫ টাকা। এর পরের অবস্থানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের শিক্ষার্থী প্রতি মাথাপিছু ব্যয় ৩ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। শিক্ষার্থী প্রতি বেশি ব্যয়ের দিক থেকে এর পরের অবস্থানে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি। তাদের ব্যয় হয়েছে ৩ লাখ ২৮ হাজার ৩১৪ টাকা।
অন্যদিকে শিক্ষার্থী প্রতি কম ব্যয়ের দিক থেকে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরের অবস্থানে রয়েছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের শিক্ষার্থী প্রতি মাথাপিছু ব্যয় ৬ হাজার ৮৮১ টাকা। এর পরের অবস্থানে রয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থী প্রতি তাদের ব্যয় হয়েছে ৮ হাজার ৫৭৯ টাকা। কম ব্যয়ের দিক থেকে এর পরের অবস্থানে রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। তাদের শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয় হয়েছে ৩৭ হাজার ২০০ টাকা।
এদিকে শিক্ষার্থী প্রতি মাথাপিছু ব্যয়ে এমন অসামঞ্জস্যতার কারণে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে এক ধরণের বৈষম্যের সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিমত শিক্ষা সংশ্লিষ্টদের। তাদের মতে কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কোনো কারণ ছাড়াই তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে লোকবল বৃদ্ধি করে ব্যয় বৃদ্ধি করে। আবার প্রয়োজনের তুলনা অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়েও তাদের ব্যয়ের খাত বৃদ্ধি পায়।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ইউজিসির বার্ষিক প্রতিবেদনে শিক্ষার্থী প্রতি ব্যয়ের যে হিসেব দেয়া হয়েছে এটিতে শিক্ষায় এক ধরণের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থীদের পেছনে প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয় করে। আরেকটি বিশ্ববিদ্যালয় মাত্র ২ হাজার টাকা। এটা কাম্য হতে পারে না।
সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বরাদ্দ হিসেব করে দিতে হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, যখন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাৎসরিক বাজেট দেয়া হয়, তখন আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন বরাদ্দ দেয়ার ক্ষেত্রে খুব বেশি ফারাক না থাকে। কেননা কম বরাদ্দ দিলে সেখানে শিক্ষার মান খারাপ হওয়ার একটা শঙ্কা তৈরি হয়। বঙ্গবন্ধু বৈষম্যমূলক শিক্ষার বিরোধী ছিলেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অর্থ বরাদ্দ দেয়ায় একটা সামঞ্জস্যতা আনতে হবে।
Discussion about this post