শিক্ষার আলো ডেস্ক
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে শনিবার (৩০ জানুয়ারি)। এবার অংশগ্রহণ করা ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন শিক্ষার্থীর সবাই পাস করেছে। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে দেড় লক্ষাধিক শিক্ষার্থী, যা গত বছরের তুলনায় তিন গুণেরও বেশি। এছাড়া গত বছর পাস করে ভর্তির জন্য অপেক্ষমাণ রয়েছে আরও কয়েক লাখ শিক্ষার্থী। এতে ভালো ফল পেলেও বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর পছন্দ অনুযায়ী উচ্চশিক্ষায় ভর্তি নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সর্বশেষ প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সারাদেশে ৪৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক (সম্মান) পর্যায়ে দুই লাখ ৩৪ হাজার ২৪৮টি আসন রয়েছে। এর বাইরে ৩৬টি সরকারি মেডিকেল কলেজে চার হাজার ৬৮টি ও ৭০টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ছয় হাজার ২৮১টি আসন রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দেড়শ’ প্রতিষ্ঠানে আসন সংখ্যা আড়াই লাখের কাছাকাছি।
সব মিলিয়ে সারাদেশে স্নাতক পর্যায়ে ভর্তির জন্য প্রায় ৩৬ লাখ আসন থাকলেও প্রতিযোগিতা হয় মূলত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল কলেজের আড়াই লাখ আসন ঘিরেই। শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য সারাদেশে কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান থাকলেও এই দেড়শ’ প্রতিষ্ঠানই থাকে শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রে। এ বছর ভর্তিযোগ্য শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বাড়ায় প্রতিযোগিতাও তীব্র হবে।
এবার নয়টি সাধারণসহ সব বোর্ডে এইচএসসি ও সমমানে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন। আগের বছর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। সে হিসেবে এবার অটোপাসে জিপিএ-৫ পেয়েছে তিনগুণেরও বেশি।
ফলাফল অনুযায়ী, এবার সবাই শতভাগ পাস করলেও গতবার পাস করে ৭৩.৯৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়ার হার গত বছর ৩.৫৪ শতাংশ হলেও এবার হয়েছে ১১.৮৩ শতাংশ। এবার ছাত্রদের মধ্যে ৭৮ হাজার ৪৬৯ জন এবং ছাত্রীদের মধ্যে ৮৩ হাজার ৩৩৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে।
রাজধানীর একটি প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফারুক আলম তার মেয়েকে মেডিকেল কলেজে পড়াবেন বলে ভেবে রেখেছেন। কিন্তু সুযোগ পাওয়া নিয়ে শঙ্কিত তিনি। ফারুক বলেন, ব্যাপক প্রতিযোগিতার কারণে মেয়েকে পছন্দের প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারব কি-না, তা নিয়ে সন্দিহান।
আরও বেশ ক’জন অভিভাবক বলেন, অন্যান্য বছরই সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়। এবার যেহেতু ভালো ফলধারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে, সেহেতু সুযোগ পাওয়া আরও কঠিন হবে। পছন্দের জায়গায় ভর্তি হতে পারা নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য ইকরামুল কবির বলেন, ‘প্রতিবার যে পরিমাণ শিক্ষার্থী পাস করে তাতেই কম্পিটিশন হয় অনেক বেশি। এবার গতবারের চেয়ে অনেক বেশি পাস করায় এবং জিপিএ-৫ বেশি পাওয়ায় কম্পিটিশন আরও বাড়বে। আমাদের দেশে উচ্চশিক্ষায় আসন আছে অনেক, কিন্তু সেগুলো প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেখানে স্থানীয়রা ছাড়া কেউ সাধারণত ভর্তি হতে চায় না। যেসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার জন্য প্রতিযোগিতা বেশি থাকে, সেগুলোতে আসন সংখ্যা খুবই কম।’
চলতি বছর ভালো ফলধারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি ভালো প্রতিষ্ঠান এবং আসন সংখ্যা। এ বিষয়ে শনিবার এইচএসসি ও সমমানে অটোপাসের ফল ঘোষণা শেষে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে গত বছর যে সুযোগ ছিল, এবারও স্বাভাবিকভাবে ততটুকুই থাকছে। সবাইকেই এই পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হবে, বিভিন্নভাবে এ পরীক্ষা হবে। কাজেই সেখানে মেধার পরিচয় দিয়ে দিয়েই ভর্তির সুযোগ পাবে তারা।’
তিনি আরও বলেন, ‘সব জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি সুযোগ পাবে, তা নিশ্চিত নয়। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে নিজের স্থান তৈরি করতে হবে। এবার ভর্তি পরীক্ষায় হয়রানি কমাতে গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে।’
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক রফিকুল আলম বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ২০১৯ ও ২০২০ সালের উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারবেন। ইতোমধ্যে এ ভর্তি প্রক্রিয়া সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। পরীক্ষায় কোনো পাস-ফেল থাকছে না। শূন্য থেকে ১০০ নম্বরপ্রাপ্তদের তালিকা দেয়া হবে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব চাহিদা অনুযায়ী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে ভর্তি করতে পারবে। আগামী সপ্তাহে গুচ্ছপদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার সময় ঘোষণা করা হতে পারে।’
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আলমগীর জানান, দেশে ৪৯টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় আছে। এসবের মধ্যে কয়েকটির কার্যক্রম শুরু হয়নি আর কয়েকটি স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করে না। এছাড়া কলেজ পর্যায়ে পাঠদান এবং দূরশিক্ষণ পরিচালনা করছে দুটি। সেই হিসাবে মোট ৩৯টি ক্যাম্পাসভিত্তিক পাঠদান করে যেগুলো স্নাতকে শিক্ষার্থী ভর্তি করে।
Discussion about this post