নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনার কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর আবার নতুন করে আলোচনায় আসছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ক্ষমতায়নের বিষয়টি।
মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, উচ্চশিক্ষার পরিধি ও ব্যাপ্তি অনেকগুণ বেড়ে যাওয়ায়, গত কয়েক বছর থেকে ইউজিসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোভিড-১৯ শুরুর আগে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও ইউজিসির ক্ষমতায়ন নিয়ে সবুজ সংকেতও দেওয়া হয়েছিল। মহামারির কারণে সেটি পিছিয়ে গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ইউজিসির সঙ্গে বৈঠক করবেন। সেখানে ওই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবেন বলে জানা গেছে। বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান গতকাল যায়যায়দিনকে জানান, বৈঠকে ইউজিসি আইন ও জনবল কাঠামো সংক্রান্ত সভা এটি। এ নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। ইউজিসি তার ক্ষমতায়ন নিয়ে কথা বলতে পারে। ক্ষমতায়নের ব্যাপারে যে বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা ইউজিসির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তার মধ্যে প্রধান ও অন্যতম হচ্ছে, পাবলিক-প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নানা অনিয়মের জন্য সরাসরি হস্তক্ষেপ করা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাগামহীন বিষয় খুলে ছাত্র ভর্তি হওয়া এবং অনৈতিকভাবে সনদ বাণিজ্যের রাশ টেনে ধরা, আর্থিক অনিয়ম হলে সেখানে বরাদ্দ বন্ধ করা, শিক্ষক নিয়োগসহ যেকোনো নিয়োগে অনিয়ম হলে সরাসরি বন্ধ করার ক্ষমতা থাকাসহ ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
জানা গেছে, কমিশনের সদস্যদের সবাই কমিশনকে আর ‘দাপ্তরিক প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে দেখতে চান না। তাৎক্ষণিক যেকোনো পদক্ষেপ নিতে ‘মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়’ যেন থাকতে না হয়। এ অবস্থার অবসান চান কমিশনের সব সদস্য। কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুলস্নাহসহ একাধিক সদস্যসের সঙ্গে আলাপকালে তারা যায়যায়দিনকে বলেছেন, কমিশনের নির্বাহী ক্ষমতা থাকা উচিত।
মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, উচ্চশিক্ষার পরিধি ও ব্যাপ্তি অনেকগুণ বেড়ে যাওয়ায়, গত কয়েক বছর থেকে ইউজিসির সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কোভিড-১৯ শুরুর আগে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেও ইউজিসির ক্ষমতায়ন নিয়ে সবুজ সংকেতও দেওয়া হয়েছিল। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে কমিশনের বর্তমান চেয়ারম্যানসহ একাধিক সদস্য নতুন নিয়োগ পেয়েছিলেন যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বনামধন্য। এছাড়া ইউজিসির ইতিহাসে এবার প্রথম কমিশনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন অধ্যাপক মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে পাবলিক (৫০) ও প্রাইভেট (১০৭) বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যানুপাতে ইউজিসি অনেকটাই অকেজো হতে বসেছে কাজের চাপে। তাই উচ্চশিক্ষার মান নিশ্চিত করতে এর আমূল পরিবর্তনের পাশাপাশি ক্ষমতায়ন এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার নিশ্চয়তা বিধান করা এখন সময়ের দাবি।
ইউজিসির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এ ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকেই সম্মতি ও সবুজ সংকেত পেয়েছেন বর্তমান কমিশন। এ লক্ষ্য নিয়ে গত বছরের ১৭ অক্টোবর পূর্ণাঙ্গ কমিশন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ওই বৈঠকে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন।
ইউজিসি সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর সবুজ সংকেতের আলোকেই কমিশন কিছু কাজও করেছিল। কিন্তু করোনা বা কোভিড-১৯ সব কিছুকে থামিয়ে নিয়েছে। তবে মন্ত্রীর সঙ্গে আজকের বৈঠকের মাধ্যমে ওই বিষয়গুলো আবারও সামনে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। ইউজিসির ক্ষমতায়নের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা প্রণয়ন বা একটি আইনি কাঠামোর রূপরেখা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হতে পারে। আইনি কাঠামোর রূপ রেখা যেন অতীতের পরিণতির মুখে না পড়ে, তারও নিশ্চয়তা চাওয়া হতে পারে বৈঠকে।
ইউজিসির ক্ষমতায়নের জন্য গত বছরের ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত পূর্ণাঙ্গ কমিশন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ইউজিসিকে বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তারই আলোকে ইউজিসি কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। ইউজিসির দায়িত্বশীল সূত্র জানান, ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করেছিলেন, উচ্চশিক্ষার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন-‘ইউজিসি’ নামটিই সঠিক এবং আশপাশের একাধিক দেশেই এ নামেই এ ধরনের প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। হায়ার এডুকেশন কমিশন নামে নতুন প্রতিষ্ঠান তৈরির প্রয়োজন নেই।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর পরই ইউজিসি মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি প্রো-ভিসি এবং ট্রেজারারের শূন্য পদে দ্রম্নত নিয়োগ দেওয়ার অনুরোধ জানায়। মন্ত্রণালয়কে এ ধরনের নির্দেশনামূলক অনুরোধ ইউজিসির ইতিহাসে এই প্রথম বলেও একটি সূত্র যায়যায়দিনকে জানান। কারণ ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি প্রতিষ্ঠান। সব ধরনের নির্বাহী ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের হাতে। ইউজিসি কেবল মন্ত্রণালয়কে সরকারি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যাপারে সুপারিশ ও পরামর্শই দিতে পারে। নির্দেশনামূলক কোনো ক্ষমতা নেই কমিশনের।
ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ প্রফেসর এ কে আজাদ চৌধুরী তার মেয়াদকালে (২০১১-২০১৫) শুরুতেই ইউজিসির কাঠামো পরিবর্তনসহ উচ্চশিক্ষাকে যুগোপযোগী এবং বিশ্ব মানের উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করতে ‘হায়ার এডুকেশন কমিশন’- নামে পৃথক কমিশন গঠনের প্রস্তাব করে একটি খসড়া আইনের কাঠামো পাঠানো হয়েছিল মন্ত্রণালয়ের কাছে। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত তা আলোর মুখ দেখেনি। অভিযোগ রয়েছে, ‘হায়ার এডুকেশন কমিশন’-র যে প্রস্তাবনা ইউজিসি দিয়েছিল তাতে, আমলাতন্ত্রে কর্তৃত্ব ও মন্ত্রণালয়ের প্রভাবমুক্ত একটি স্বাধীন কমিশনের কথা বলা ছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয়ে যাওয়ার পর, তাতে ব্যাপক সংশোধন ও পরিবর্তন করায় ইউজিসি-ই তাতে সম্মতি দিতে রাজি হয়নি। ফলে গত ১২ বছরেও তা আর বেশি দূর এগোয়নি।
Discussion about this post