পরীক্ষার্থীদের এবারের আবেদন নিয়ে খানিকটা মুশকিলে পড়েছেন শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ। তারা বলেছেন, এবার নির্দিষ্ট কোন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা ফলাফল পুনঃপরীক্ষার আবেদন করেনি। এ কারণে তাদেরকে সকল বিষয়ে জেএসসি ও এসএসসির খাতা নিরীক্ষা করেই ফলাফল তৈরি করতে হচ্ছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানিয়েছে, ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ ছিল যশোর শিক্ষাবোর্ডসহ দেশের ইতিহাসে ব্যতিক্রমী। করোনা মহামারির কারণে ওই বছরে দেশে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। তারপরও শিক্ষাবোর্ডগুলোকে ফলাফল প্রকাশ করতে হয়েছে।
এইচএসসি পরীক্ষায় আবেদনকৃতদের জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করেই শিক্ষাবোর্ডগুলো ফলাফল তৈরি করেছে। এবারের ফলাফলে যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ফরম পূরণকৃত শিক্ষার্থীরা অটো পাস করেছে ১ লাখ ২১ হাজার পাঁচশ’ ২৮ জন। এরমধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৮শ’ ৯২ জন। গত ৩০শে জানুয়ারি যশোর শিক্ষাবোর্ড সারাদেশের সাথে একযোগে এ ফলাফল ঘোষণা করে।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, উচ্চ মাধ্যমিকের প্রধান বিষয়গুলোর গড় মূল্যায়ন করে জাতীয় পরামর্শক কমিটির নির্দেশনা অনুযায়ী পরীক্ষা গ্রহণ ছাড়াই ফলাফল তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবার ফল তৈরি করেছে সব শিক্ষাবোর্ড। ফলাফল মূল্যায়নে জেএসসিতে ২৫ ও এসএসসিতে ৭৫ নম্বর ধরা হয়েছে।
যশোর শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, একাধিকবার পিছিয়ে এবারের এইচএসসির ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এ ফল তৈরিতে তাদের বেশ সমস্যায় পড়তে হয়েছে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর জেএসসি ও এসএসসির নম্বরপত্র তাদের মূল্যায়ন করতে হয়েছে। যদিও এ কাজটি তাদের করতে হয় না। শিক্ষকরা পরীক্ষার খাতা দেখেন, তাদের শুধমাত্র সমন্বয় করতে হয়। ফলে নতুন সিস্টেমে ফলাফল তৈরিতে তারা হিমশিম খেয়েছেন।
এদিকে, নিয়মানুযায়ী ফলাফল প্রকাশের সাতদিনের মধ্যে পরীক্ষার্থীদের খাতা পুন:নিরীক্ষার আবেদন করতে হয়। ৬ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছিল এ আবেদনের শেষ দিন। এ সময়ের মধ্যে যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে বিভিন্ন কলেজের মোট ১৬ শ’ ৯৫ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ১২৫ টাকা ফি দিয়ে টেলিটকের মাধ্যমে আবেদন করেছে। যেহেতু এ বছর পরীক্ষা হয়নি, ফরম পূরণ করা সব পরীক্ষার্থীকে অটো পাস করিয়ে দেয়া হয়েছে। সে হিসেবে বিষয় অনুযায়ী পরীক্ষার্থীরা আবেদন করার সুযোগ পায়নি। তারা মূলত গ্রেড পরিবর্তনের আবেদন করেছে।
এ ব্যাপারে শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, এ বছর ফলাফল নিরীক্ষার আবেদনের সংখ্যা খুবই কম। তবে ভিন্ন পদ্ধতিতে এ বছর ফলাফল প্রকাশের কারণে ভিন্নভাবেই নিরীক্ষা করা হচ্ছে। নতুন পদ্ধতিতে ফলাফল তৈরির কারণে যদিও নিরীক্ষার কোন প্রয়োজনীয়তা ছিল না। তারপরও যারা আবেদন করেছে, তারা সন্দেহের বশিভূত হয়ে কাজটি করেছে। জেএসসি ও এসএসসির প্রধান বিষয়গুলোতে নম্বর কম থাকায় পরীক্ষার্থীদের হয়তো আশানুরূপ ফলাফল হয়নি। অন্য বিষয়ে তাদের বেশি নম্বর থাকায় শিক্ষার্থীরা আরো ভাল ফলাফল আশা করেছিল। এ কারণে তারা নিরীক্ষার আবেদন করেছে।
তিনি আরও বলেন, এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের একমাসের মধ্যে আবেদনকারীদের পুনঃনিরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে হবে। এ হিসেবে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই তারা নিরীক্ষার রেজাল্ট ঘোষণা করবেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় যশোর শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মোট এক লাখ ২১ হাজার পাঁচশ’ ২৮ জন পরীক্ষার্থীর অংশগ্রহণের কথা ছিল। এরমধ্যে ছাত্র ছিল ৬১ হাজার সাতশ’ ৬১ জন ও ছাত্রী ৫৯ হাজার সাতশ’ ৬৭ জন। ঘোষিত ফলাফলে এরা সবাই অটো পাস করেছে। এদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২ হাজার ৮শ’ ৯২ জন। তাদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে নয় হাজার নয়শ’ ২২, মানবিক বিভাগে দু’ হাজার দুশ’ ১৩ জন ও বাণিজ্য বিভাগে সাতশ’ ৫৭ জন রয়েছে। উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ক্যাজুয়ালও রয়েছে। যারা গত বছরের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে অকৃতকার্য হয়। ২০২০ সালের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সময় ছিল গত বছরের এপ্রিল মাসে। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ থাকায় এইচএসসি পরীক্ষা হয়নি।
Discussion about this post