নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি (একক পরিচয়) দিতে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময় শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়নের কাজ শুরু করেছে সরকার। প্রোফাইলে একজন শিক্ষার্থীর যাবতীয় তথ্য সন্নিবেশিত থাকবে। প্রোফাইলের তথ্য থেকে তৈরি করা হবে ইউনিক আইডি। এই আইডিই থেকেই পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয়পত্র পাবে শিক্ষার্থীরা।
২০২০ সালে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে বিগত এক বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তবে করোনার পরিস্থিতির মধ্যেই শিশু জরিপের উদ্যোগ নেয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর।
জানতে চাইলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘শূন্য থেকে ৫ বছর পর্যন্ত সব শিশুকে জরিপের আওতায় আনা হবে। তাছাড়া বিদ্যালয়ে ভর্তির সময় অনেক শিশুকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভর্তির বাইরে যেন কোনও শিশু না থাকে সে জন্য জরিপ করা হবে। এই জরিপের পর আমাদের সব শিশুদের ইউনিক আইডি হয়ে যাবে। তখন আর এই জরিপের প্রয়োজন হবে না। জন্ম নিবন্ধনের আওতায় শিশুরা ইউনিক আইডি পেয়ে যাবে।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘সিভিল রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস’ (সিআরভিএস) বাস্তবায়নের আলোকে দেশের তিন কোটির বেশি শিক্ষার্থীর জন্য ইউনিক আইডি (একক পরিচয়) দেওয়ার পরিকল্পনা দেয় সরকার। পাঁচ বছর বয়সী প্রাক-প্রাথমিক থেকে ১৭ বছর বয়সের দ্বাদশ শ্রেণির সকল ছাত্র-ছাত্রী পাবে এই ইউনিক আইডি। এই আইডিতে ১০ বা ১৬ ডিজিটের শিক্ষার্থী সনাক্ত নম্বর থাকবে, যা পরবর্তীতে হবে ওই শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর। জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরিতে আলাদা করে তথ্য সংগ্রহ করার প্রয়োজন হবে না।
বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) প্রোফাইল প্রণয়নের ছক প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি দিতে তথ্য সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছিল প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। জেলা শিক্ষা অফিসারদের বলা হয়েছিল জরুরিভিত্তিতে তথ্য পাঠাতে হবে।
ওই আদেশে বলা হয়েছিল, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের আওতায় বাস্তবায়নাধীন ‘প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়ন প্রকল্প’ এর মাধ্যমে প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের তৈরি করা হবে এবং ইউনিক আইডি কার্ড প্রদান করা হবে। ইউনিক আইডি কার্ড প্রস্তুত করতে প্রাথমিক পর্যায়ের সরকারি/বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়াও সরকারি/বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ইবতেদায়ি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের তথ্য প্রয়োজন।
বৃহস্পতিবার (১৮ মার্চ) প্রকাশিত শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়নের ছকে শিক্ষার্থীর নাম-ঠিকানাসহ যাবতীয় তথ্য চাওয়া হয়েছে। তথ্য প্রত্যয়ন করবেন শ্রেণিশিক্ষক।
শিক্ষার্থী প্রোফাইল প্রণয়ন ছকে যা চাওয়া হয়েছে:
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম, উপজেলা, জেলা, ইএমআইএস নম্বর দিতে হবে নির্ধারিত ছকে। শিক্ষার্থীর নাম বাংলায় ও ইংরেজি বড় অক্ষরে লিখতে হবে। শিক্ষার্থীর জন্ম সনদ নম্বর, জন্ম তারিখ, জন্মস্থান (জেলা), জেন্ডার (নারী পুরুষ ও অন্যান্য), জাতীয়তা, ধর্ম উল্লেখ থাকতে হবে।
শিক্ষার্থী কোনও শ্রেণিতে অধ্যয়নরত এবং কোন শাখায় তাও উল্লেখ করতে হবে রোল নম্বরসহ। কাব স্কাউট সদস্য কিনা তাও জানাতে হবে।
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে বাক প্রতিবন্ধী, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, শ্রবণ প্রতিবন্ধী, মানসিক প্রতিবন্ধী তা উল্লেখ করতে হবে। উল্লেখ করতে হবে শিক্ষার্থীর রক্তের গ্রুপ।
ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থী হলে গোষ্ঠীর নাম উল্লেখ করতে হবে।
প্রত্যেক শিক্ষার্থীর প্রথমে মা ও পরে বাবার নাম বাংলায় এবং ইংরেজিতে বড় অক্ষরে লিখতে হবে। এনআইডি নম্বর অথবা জন্ম-নিবন্ধন নম্বর, মোবাইল নম্বর, জন্ম তারিখ এবং মাতা ও পিতার পেশাসহ মৃত কিনা তাও উল্লেখ করতে হবে। পিতা মাতার অবর্তমানে অভিভাবকের তথ্য দিতে হবে একইভাবে দিতে হবে। অভিভাবকের সঙ্গে শিক্ষার্থীর সম্পর্ক উল্লেখ করতে হবে।
শিক্ষার্থীর বর্তমান ঠিকানা বিভাগ, জেলা, উপজেলা/থানা, পোস্ট অফিস ও পোস্ট কোড। সিটি করপোরেশন হলে বাসার হোল্ডিং নম্বর, ওয়ার্ড মহল্লা, রাস্তার নাম নম্বর পোস্ট অফিস ও পোস্ট কোড নম্বর উল্লেখ করতে হবে।
শিক্ষার্থীর যাবতীয় তথ্য শ্রেণি-শিক্ষক প্রত্যয়ন করবেন। প্রত্যায়নকারী শিক্ষকের নাম মোবাইল নম্বর ও এনআইডি নম্বর নির্ধারিত ছকে পূরণ করতে হবে।
Discussion about this post