শিক্ষার আলো ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের উদ্যোগে শুক্রবার (২ এপ্রিল) ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ পালিত হয়েছে। করোনা মহামারির বিবেচনায় বিকল্প অনলাইন ওয়েবিনার এর মাধ্যমে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন নাছিমা বেগম, এনডিসি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, নিউরোডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ আনোয়ার উল্লাহ্, এফসিএমএ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ হেলাল উদ্দিন আহমেদ, তরী ফাউন্ডেশন ও এসসিজির পরিচালক ড. মারুফা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোনিয়া ইসলাম।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারপার্সন তাওহিদা জাহান।
আলোচনা অনুষ্ঠানের শুরুতেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন নাছিমা বেগম, এনডিসি সমাজের কুসংস্কারের কথা তুলে ধরে বলেন, অটিজমে আক্রান্ত শিশুদের অনেক মা-বাবাই তাদের সন্তানের অবস্থাটি লুকিয়ে রাখেন, তারা ভাবেন তাদের কোন কৃতকর্মের ফল তাদের সন্তান ভোগ করছে, কিন্তু বিষয়টি কখনই এমন নয়।
নিজের অটিজমে আক্রান্ত সন্তানের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সমাজের এসব গোড়ামি ভেঙে অটিজম সংক্রান্ত সঠিক তথ্য সব জায়গায় ছড়িয়ে দিয়ে এসব বিশেষ শিশুদের ভেতরকার সুপ্ত প্রতিভাকে জাগিয়ে তুলে তাদেরকে সমাজের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের সক্ষমতাগুলোকে কাজে লাগিয়ে তাদেরকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সমাজের ভাষিক যোগাযোগে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, উন্নত দেশের তুলনায় দক্ষিণ-এশিয়ার দেশগুলোতে প্রতিবন্ধীদের প্রয়োজনীয় সেবা প্রদানের সুযোগ কম। অটিজম বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন এসকল মানুষদের হেয় প্রতিপন্ন না করে রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবারের দায়িত্ব হলো তাদের মানবিক সেবা প্রদান সুনিশ্চিত করা।
২০০৭ সাল থেকে অটিজম সচেতনতা দিবস পালন শুরু হলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক ২রা এপ্রিলকে বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস হিসেবে নির্ধারণ করা হয়। ২০১২ সাল থেকে প্রতিবছর জাতিসংঘ কর্তৃক দিবসটির জন্য একটি প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, “Inclusion in the Workplace: Challenges and Opportunities in a Post-Pandemic World” অর্থাৎ, কর্মক্ষেত্রে একীভূতকরণ: মহামারী পরবর্তী বিশ্বের বাধা ও সুযোগসমূহ।
নিউরোডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মোঃ আনোয়ার উল্লাহ্ তার আলোচনাতে Neuro-Developmental Disability Protection Trust Act, 2013-এর ১৭ টি ধারার ২৪ টি কাজের কথা উল্লেখ করে অটিজমে আক্রান্ত সকল শিশু ও মানুষদের সকল প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে আইনটির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগের চেয়ারপার্সন তাওহিদা জাহান বলেন, অটিজম বিষয়ে বৈশ্বিক সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ার একটি উপলক্ষ হিসেবে অটিজম সচেতনতা দিবসটি অধিকতর গুরুত্বের দাবিদার। এ দিবস উদযাপনের মাধ্যমে কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে অটিজম আছে এমন শিশু ও মানুষদের শারীরীক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, ভাষিক যোগাযোগের বিশেষ স্পিচ থেরাপি সেবা প্রদানের টেলিথেরাপি সেবার সকলের জন্য সহজলভ্য করাসহ সার্বিক চিকিৎসা নিরাপত্তার বিষয়ে মানুষের সচেতনতা ও জ্ঞান ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ উদ্যোগ।
অনুষ্ঠানের অন্যান্য অতিথিরা বলেন, সমাজে একজন মানুষ হিসেবে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন মানুষের অধিকার ও সম্মান প্রতিষ্ঠা করতে সামাজিক সচেতনতা আর যথাযথ জ্ঞানের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। এবারের প্রতিপাদ্যের (কর্মক্ষেত্রে একীভূতকরণ) সফল প্রয়োগে সরকারের সাথে বেসরকারি সংগঠন ও আমাদের সকলের অংশগ্রহন প্রয়োজন।
Discussion about this post