অনলাইন ডেস্ক
স্বল্পমূল্যে ক্যান্সার শনাক্তের পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) রসায়ন বিভাগের পিএইচডির ছাত্রী ফাতেমা জেরীন ফারহানা।
বুয়েট ও অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে সবুজ রসায়ন (Green Chemistry) প্রয়োগের মাধ্যমে কার্যকরী গ্রুপ সংবলিত আয়রন অক্সাইডভিত্তিক এক নতুন শ্রেণির অজৈব এনজাইম উদ্ভাবন করেছেন এই ছাত্রী।
যা ক্যান্সার রোগের জন্য দায়ী বিভিন্ন বায়োমার্কার প্রাথমিক পর্যায়ে অতি অল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে শনাক্ত করতে সক্ষম হবে বলে জানা গেছে।
গবেষণাটির ফলাফল চলতি মাসে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দ্যা রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রি জার্নাল, অ্যানালিস্ট এবং দ্যা আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি জার্নাল, এসিএস অ্যাপ্লাইড ন্যানো মেটেরিয়ালসে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণা কাজের তত্ত্বাবধানে ছিলেন বুয়েটের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ড. মো. শাখাওয়াৎ হোসেন ফিরোজ ও অস্ট্রেলিয়ার গ্রিফিথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্দিকী রিসার্চ ল্যাবের প্রধান ড. মুহাম্মদ জে. এ. সিদ্দিকী শামিম।
গবেষকরা বলছেন, ক্যান্সার রোগের কারণে প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী কয়েক লাখ মানুষ মারা যায়। আর এই মৃত্যু সংখ্যা কমানো সম্ভব শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিকভাবে ক্যান্সার নির্ণয়ের মাধ্যমে। এ নতুন শ্রেণির অজৈব এনজাইম প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার রোগ নির্ণয় করার সহজ ও সঠিক পদ্ধতি বা স্বল্পমূল্যের ডিভাইস বানাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
ফারহানার এ গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল, রসায়ন জ্ঞানকে ব্যবহার করে স্বল্প খরচে বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ের সহজ ও সঠিক পদ্ধতি বা ডিভাইস বানানো। সাধারণত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় প্রাকৃতিক এনজাইমভিত্তিক এলাইজা (ELISA) পদ্ধতি বা ডিভাইস ব্যবহার করে ক্যান্সারসহ মানুষের বিভিন্ন ধরনের রোগ নির্ণয় করা হয়, যা ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ। তাছাড়া প্রাকৃতিক এনজাইম সংরক্ষণও অনেক জটিল।
ফারহানা মূলত বিভিন্ন রকম ন্যানোপার্টিকেল এবং জৈব ও অজৈব যৌগ তৈরির কাজ করেন। ২০১৮ সালে সিদ্দিকী রিসার্চ ল্যাবের সঙ্গে ক্যান্সারের মতো জটিল রোগের চিকিৎসা শনাক্তকরণ কাজে যুক্ত হয়েছিলেন।
এ বিষয়ে ফারহানা বলেন, আমার প্রস্তুতকৃত অজৈব এনজাইম শুধু মানব দেহের ক্যান্সার রোগের শনাক্তকরণের পদ্ধতিতে নয়, যেকোনো রোগ শনাক্তকরণের পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যাবে। শুধুমাত্র মানব দেহের রোগ নয়, এই নতুন ধরনের অজৈব এনজাইম বিভিন্ন ফসলের মড়ক রোগও (ধান, গম,আখ) প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণের কাজে ব্যবহার করা যাবে |
গবেষণা দলের অন্যতম তত্ত্বাবধায়ক ড. সিদ্দিকী বলেন, এই নতুন শ্রেণির অজৈব এনজাইম অনুঘটক বিক্রিয়ায় প্রাকৃতিক এনজাইমের মতো কাজ করে। এই বিশেষ শ্রেণির এনজাইমগুলোর আবার চুম্বকীয় ধর্মও আছে। এসব বহুমুখী ধর্ম ব্যবহার করে মানুষের রক্ত, মূত্র বা লালাতে উপস্থিত ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের বায়োমার্কার সহজে নির্ণয় করা যায়।
Discussion about this post