জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
সহসাই যাচ্ছেনা করোনা ! বিজ্ঞানীরাই বলছেন এটি ২০২২ সাল পর্যন্ত প্রলম্বিত হতে পারে। তাই এ বাস্তবতা মেনে নিয়েই প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। লকডাউন শেষ হলেই প্রথমে সপ্তাহভিত্তিক পাঠ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে প্রাথমিক শিক্ষকদের।
এজন্য গুগল মিটে ক্লাস্টারভিত্তিক একটি কেন্দ্রে অনলাইন ক্লাস চালু করতে হবে।পাশাপাশি যেসব এলাকায় অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই সেসব এলাকায় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীর কাছে সপ্তাহভিত্তিক ছয় দিনের পাঠ্য সরবরাহ করবে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এভাবেই চলবে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের গুগল মিটে ক্লাস করানো হবে। এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পরবর্তীতে দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ের জন্য অনলাইন ব্যবস্থা চালু করা হবে। যেসব এলাকায় মোবাইল নেটওয়ার্ক রয়েছে এমন প্রতিটি বিদ্যালয়কে ওয়াইফাইয়ের আওতায় নেওয়া হবে। জরুরি প্রয়োজনে অনলাইন স্কুল ব্যবস্থা পরিচালিত হবে। গুগল মিটে ক্লাস নেওয়ার জন্য শিক্ষকদের কেন্দ্রীয়ভাবে গাইডলাইন ও নির্ধারিত কনটেন্ট সরবরাহ করা হবে। শিক্ষার্থীদের অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হবে গুগল মিটের মাধ্যমে। এছাড়া সরাসরি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার বিষয়ে শিক্ষক জেনে নিয়ে তা সমাধান করবেন। পরিস্থিতি অনুকূলে না আসা পর্যন্ত এভাবেই চলবে প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম। অন্যদিকে রয়েছে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার কমিউনিটি রেডিও। এছাড়া শিক্ষকরা নিয়মিত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ রক্ষা করবেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সঙ্গে।’
গত ২৯ এপ্রিল অনলাইনে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ক্লাস্টারভিত্তিক ক্লাস নেওয়া এবং পরবর্তীতে অনলাইন স্কুল ব্যবস্থা চালু করার নির্দেশনা জারি করা হয়। পরদিন (৩০ এপ্রিল) চলতি বছরের প্রাথমিক শিক্ষা পরিচালনার সার্বিক বিষয়ে নির্দেশনা জারি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা অ্যাকাডেমি (নেপ) অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনাও তৈরি করে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ৩০ এপ্রিল ওই সার্বিক নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ডিপিইর মহাপরিচালক বলেন, ‘সারাদেশে একযোগে এই অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হবে ওয়ার্ক সিট ও অ্যাক্টিভিটি সিট। অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা অনুসারে প্রতি সপ্তাহে ৬ দিনের পাঠ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পাঠদানের জন্য গাইডলাইনও পাঠানো হচ্ছে শিক্ষকদের।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের নির্দেশনায় লকডাউনের পর থেকে প্রতিটি ক্লাস্টারে একটি করে ‘গুগল মিট’ অনলাইন ক্লাস নেওয়ার বিষয়ে বলা হয়। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি ক্লাস্টারে একটি কেন্দ্র করে গুগল মিটের মাধ্যমে এই ক্লাস চালু করতে হবে। প্রতিটি ক্লাস্টারে ৩০ জন করে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে। যদি ৩০ জনের বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয় তাহলে আরও একটি অনলাইন ‘গুগল মিট’ ক্লাস চালু করতে হবে। এসব ক্লাসে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবে।
গ্রামাঞ্চলের ক্লাস্টারভিত্তিক একটি কেন্দ্র করে অনলাইন ক্লাস নেওয়া হলেও শহরাঞ্চলে প্রতিটি বিদ্যালয়ে গুগল মিটে ক্লাস নিতে হবে বলে জানান ডিপিই ডিজি। তিনি বলেন, ‘সারাদেশে বিচ্ছিন্নভাবে অনলাইন ক্লাস নেওয়া হয়। তবে গুগল মিটে সারাদেশে সব ক্লাস্টারে একই রকম ক্লাস নেওয়া হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী শিক্ষকরা ক্লাস করাবেন। লকডাউন উঠে গেলেই আমরা নির্ধারিত সিট পাঠাবো। শিক্ষার্থীরা গুগল মিটে ক্লাস কীভাবে করবে ক্লাস্টার থেকে অভিভাবকদের তা শিখিয়ে দেওয়া হবে।’
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সার্বিক নির্দেশনায় বলা হয়, প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ শিখন ফল অর্জনের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দুই সপ্তাহের কর্মপরিকল্পনাসহ ওয়ার্ক সিট ও অ্যাক্টিভিটি সিট (পরীক্ষামূলক বাড়ির কাজ) প্রণয়ন করা হয়।
নেপ এর‘অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনা, ২০২১’ অনুসারে কোভিড-১৯ সময়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ওয়ার্ক সিট ও অ্যাক্টিভিটি সিট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। লকডাউনের মেয়াদ শেষ হলে পরবর্তী তারিখ থেকে প্রথম দিন ধরে পাঠ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন পাঠ পরিকল্পনায় একটি সাধারণ নির্দেশনা এবং শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়।
শিক্ষকদের জন্য ব্যবহার নির্দেশিকা
* প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট পাঠের বিষয়বস্তু ও সংশ্লিষ্ট বাড়ির কাজ শিক্ষার্থীদের কাছে প্রয়োজনীয় সহায়তা ও নির্দেশনা পৌঁছানোর ব্যবস্থা করবেন শিক্ষকরা।
* শিক্ষকরা নির্দিষ্ট সময় শেষে শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি যাচাই করবেন ও বাড়ির কাজ সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে শিক্ষার্থী প্রোফাইল তৈরি ও সংরক্ষণ করবেন।
* অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে পাঠ পরিকল্পনায় নির্দিষ্ট তারিখে নির্ধারিত পাঠ (শিখন ঘটতি পূরণ পরিকল্পনাসহ) উপস্থাপন করবেন। পাঠ উপস্থাপনার সঙ্গে সঙ্গে ওই পাঠের জন্য নির্ধারিত বাড়ির কাজ শিশুদের যথাযথ নির্দেশনাসহ বুঝিয়ে দেবেন।
* সকল কার্যক্রম পরিচালনা যথাযথভাবে অনুসরণ করবেন শিক্ষকরা।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৬ মে মধ্যরাত পর্যন্ত দেশে সার্বিক চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বছরের মার্চ থেকে আগামী ২২ মে পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে লকডাউন যদি বাড়ানো না হয় তাহলে সেই হিসেবে ১৭ মে থেকে প্রাথমিকের অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পুরোপুরি চালু হবে। পাশাপাশি যেসব এলাকায় অনলাইন ক্লাসে যুক্ত হওয়ার সুযোগ নেই সেসব এলাকায় শিক্ষকরা শিক্ষার্থীর কাছে সপ্তাহভিত্তিক ছয় দিনের পাঠ্য সরবরাহ করবে।
Discussion about this post