অনলাইন ডেস্ক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এডহক ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের কর্মস্থলে যোগদান নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। বুধবার (১৯ মে) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের পেছনে রাবি শাখা ছাত্রলীগের দলীয় টেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি এ হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, রাবি ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়তা করতে গিয়ে আমরা বিভিন্ন সময়ে স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী জামায়াত-শিবির চক্রের হামলাসহ নানা ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছি। আমাদের মধ্যে অনেকেই জামায়াত-শিবির চক্রের নৃশংস হামলায় পঙ্গুত্ব বরণ করেছি। এরই মধ্যে অনেকের সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষ, তাই বেকার ও মানবেতর জীবন-যাপন করছিলাম।
তিনি বলেন, রাবিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সাত শতাধিক পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। আমরা এসব শূন্য পদের বিপরীতে নিয়োগের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে সিভি জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়োগ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারেনি। গত ৫ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম আব্দুস সোবহান ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ১২(৫) ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে শূন্য পদের বিপরীতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মী, আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযোদ্ধা পরিবারসহ আমাদের ১৩৮ জনকে এডহক ভিত্তিতে ছয় মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে নিয়োগ দেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্ত নিয়োগপত্রের আলোকে গত ৬ মে যোগদানও করেছি।
কিন্তু ওইদিনই আমাদের যোগদান প্রক্রিয়া চলাকালে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এক প্রজ্ঞাপনে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন এবং আমাদের নিয়োগকে ‘অবৈধ ও বিধিবহির্ভূত’ আখ্যায়িত করে। যদিও ১৯৭৩ সালের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের ১২(৫) ধারা মোতাবেক, এ নিয়োগকে অবৈধ বলার কোনো সুযোগ নেই। নিয়মানুযায়ী, এ নিয়োগকে অবৈধ ঘোষণার আগে ’৭৩ এর অধ্যাদেশের উপরিউক্ত ধারা বাতিল করা উচিত ছিল বলে আমরা মনে করি।
এরপরই দৈনন্দিন রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. আনন্দ কুমার সাহা ও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর মো. আব্দুস সালামকে দিয়ে আমাদের যোগদানের চলমান প্রক্রিয়া গত ৮ মে স্থগিত ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করেন। আমাদের জানা মতে, নিয়মিত উপাচার্যের দেওয়া নিয়োগ, দৈনন্দিন রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য স্থগিত করতে পারেন না।
তিনি আরও বলেন, ১৯৭৩ এর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুসারে এডহক নিয়োগ একটি বৈধ প্রক্রিয়া। অতীতে প্রায় সব প্রশাসনই এডহক ভিত্তিতে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ দিয়েছেন। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নিষেধাজ্ঞার পরও চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেকশন অফিসার পদে এডহক ভিত্তিতে একজনকে মানবিক কারণে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এডহক নিয়োগ বন্ধ রাখতে ২০০৯ সালেও একই রকম নিষেধাজ্ঞা মন্ত্রণালয় থেকে এসেছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে নিজ অধ্যাদেশ বলে এডহক নিয়োগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
কর্মস্থলে যোগদানের ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা বেকার অবস্থায় মানবেতর জীবন-যাপন করছি। উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে নিয়োগপ্রাপ্ত আমরা ও আমাদের পরিবার দুশ্চিন্তায় আছি। তাই আমাদের নিয়োগের ওপর আরোপিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দেওয়া স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে আমরা যাতে দ্রুত কর্মস্থলে যোগ দিয়ে কর্মময় জীবন শুরু করতে পারি, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি জানাচ্ছি।
লিখিত বক্তব্যে অনতিবিলম্বে সদ্য নিয়োগপ্রাপ্তদের চাকরিতে যোগদানের ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা উপ-মন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানানো হয়। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ, শিক্ষক সমিতি, অফিসার সমিতি ও চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ইউনিয়নসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানানো হয়।
Discussion about this post