নিজস্ব প্রতিবেদক
সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে দুই ডোজ টিকা দেওয়ার পরই খুলে দেওয়া হবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। আগামী সপ্তাহে এ টিকাদান কার্যক্রম শুরু হবে। পরবর্তী সময়ে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদেরও টিকার আওতায় আনা হবে। দু-একদিনের মধ্যে স্থগিত সেমিস্টার পরীক্ষাগুলো নেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হবে। শিক্ষাজীবন রক্ষার্থে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরাসরি পদ্ধতির এ পরীক্ষা নেওয়া হবে।
এছাড়া সেশনজট নিরসনের লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগের পাঠ্যসূচি ‘কাস্টমাইজড’ (জ্ঞানগত প্রয়োজনের নিরিখে অপরিহার্য অংশ) করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর কাস্টমাইজড সিলেবাসের ভিত্তিতে কোর্স ও ক্লাস কার্যক্রম পরিচালিত হবে। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল বিষয়গুলো চূড়ান্ত করবে। সোমবার বহুপক্ষীয় ভার্চুয়াল সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার দাবিতে কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করছেন ছাত্রছাত্রীরা। এর পরিপ্রেক্ষিতে বহুপক্ষীয় ভার্চুয়াল সভার আহ্বান হয় বলে জানা গেছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এতে শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেনসহ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, করোনাবিষয়ক জাতীয় কারিগরি কমিটির প্রধান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা অংশ নেন।
নাম প্রকাশ না করে একাধিক উপাচার্য এবং বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান, সভার সিদ্ধান্ত প্রকাশ না করার ব্যাপারে অঙ্গীকার নেওয়া হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে ইউজিসি সভার রেজ্যুলুশন প্রস্তুত করবে। এরপর তা সংশ্লিষ্টদের অবহিত করা হবে। পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার ক্ষেত্রে অন্তত ৭ কর্মদিবস সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আর ছাত্রছাত্রীদের ফরম পূরণ করা হবে অনলাইনে। কেউ পাওনাদি পরিশোধ না করলেও পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রী অনুরোধ করেছেন। এ ক্ষেত্রে আর্থিক প্রয়োজন ইউজিসিকে অবহিত করার ব্যাপারেও সভায় আলোচনায় হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সভায় জাতীয় কারিগরি কমিটির প্রধান অধ্যাপক সহিদুল্লাহ সতর্ক করে বলেছেন, জুনে করোনা সংক্রমণের আরেকটি ঢেউ আসতে পারে। ইতোমধ্যে জেলা পর্যায়ে ব্যাপক সংক্রমণ হয়েছে। সাতটি জেলায় গড়ে ৭০ শতাংশ করে রোগী পাওয়া যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলে সংক্রমণ ভয়ানক রূপ নিতে পারে। কেননা আবাসিক হলগুলোতে বসবাসের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন দুরূহ হতে পারে। তাই অন্তত আবাসিক ছাত্রছাত্রীদের টিকা দেওয়া শেষে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
সূত্র জানায়, এ সময় অনাবাসিক ছাত্রছাত্রীদের টিকা দেওয়ার প্রসঙ্গও আসে। কারণ একই ক্লাসরুমে পাশাপাশি বসে আবাসিক-অনাবাসিক উভয় শিক্ষার্থীরা ক্লাস করবেন। তখন নীতিনির্ধারণী পর্যায় থেকে বলা হয়, চীন ও রাশিয়াসহ অন্যসব উৎস থেকে আরও টিকা আসবে। সেগুলো এলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়া হবে। ছাত্রছাত্রীদের টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে সুরক্ষা অ্যাপসে ব্যবস্থা নেই।
সূত্র মতে জানা যায়, চলতি সপ্তাহে টিকা দেওয়ার কাজ শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। তবে প্রস্তুতি শেষ করতে না পারলে আগামী সপ্তাহে টিকা দেওয়ার কাজ শুরু করা হবে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ১ লাখ ৩০ হাজার আবাসিক শিক্ষার্থীর তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠিয়েছে। এছাড়া আরও প্রায় ৭ লাখ অনাবাসিক শিক্ষার্থী আছে। তাদের তালিকাও ইউজিসি পাঠাবে। এ তালিকায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৯ লাখ শিক্ষার্থী নেই বলে জানা গেছে। সে হিসাবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ ও মাদ্রাসা খোলার পন্থা বৈঠকে আলোচনা হয়নি।
আরেকটি সূত্র জানায়, চীনের উভয় ডোজ টিকা তিন সপ্তাহ আগ-পরে দেওয়া যায়। সেই হিসাবে আগামী সপ্তাহে টিকা দেওয়া শুরু হলে অন্তত এক মাস পর বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হতে পারে। তবে এর মধ্যে আরও টিকা এলে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়া হবে। এছাড়া বিভিন্ন সেমিস্টারের পরীক্ষা শুরু হলে তা শেষ করেই খোলার বিষয়ে আলোচনা হয়। সেই হিসাবে ঈদুল আজহার পরই বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হতে পারে বলে সূত্রটির ধারণা।
পরীক্ষা নেওয়ার ক্ষেত্রে সিনিয়র ব্যাচ অগ্রাধিকার পাবে। অর্থাৎ আগে মাস্টার্স, এরপর চতুর্থ বর্ষের অষ্টম সেমিস্টার পরে সপ্তম সেমিস্টারের পরীক্ষা হবে। এভাবে নিচের দিকের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর প্রতিদিন একটি বিভাগ পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবে। কিছুতেই ভিড় জমানো যাবে না বলে জাতীয় কারিগরি কমিটির পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়। পরীক্ষা শুরুর আগে বিভাগীয় চেয়ারম্যান ও শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের ভয়াবহতার দিক সম্পর্কে কাউন্সেলিং করবেন বলে আলোচনা হয়।
Discussion about this post