শিক্ষার আলো ডেস্ক
গত তিন বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম ও টানা গবেষণা শেষে বর্জ্য থেকে দেশীয় প্রযুক্তিতে পরিবেশ বান্ধব টেকসই নির্মাণশিল্পে প্রবেশ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ল্যাব থেকে বাস্তবে এই প্রযুক্তির ব্যবহারের অপেক্ষার দিন শেষ হতে চলেছে আগামী মাস নাগাদ।
গবেষণায় চুয়েট এর সঙ্গে থেকেছে ইংল্যান্ডের লিভারপুল জন মুর্স বিশ্ববিদ্যালয়।
শিল্পবর্জ্য ব্যবহার করে গবেষণাগারে রাসায়নিক জিওপলিমার পদ্ধতিতে প্রচলিত ইটভাটার ইটের বিকল্প যে ইট তৈরি করা হয়েছে তা অত্যন্ত উন্নতমানের বলে দাবি গবেষকদের।
আর তাদের এই দাবিকে ইতোমধ্যেই টেকসই হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক নির্মাণ নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠান আমেরিকান কংক্রিট ইনস্টিটিউট- এসিআই।
এদিকে ব্রিটেন সরকারের আর্থিক সহায়তায় নেয়া রাসায়নিক ইট তৈরির এই প্রকল্পে যুক্ত রয়েছেন চুয়েট শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত ১৬ সদস্যের গবেষণা দল। তাদের উদ্ভাবিত ইটগুলো ল্যাব পরীক্ষায় সাড়ে ৫০ প্যাসকেল চাপ নিতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া বাইডিং ম্যাটেরিয়ালস ব্যবহার করে এর শক্তি আরো বাড়ানো সম্ভব। অর্থাৎ আগুনে না পুড়ালেও এই ইটগুলো হবে খুবই মজবুত। আর এই ইট তৈরিতে পানি শোষন সর্বোচ্চ ৮% হওয়ায় দেয়াল হবে টেকসই।
এমনটাই জানিয়েছেন, গবেষণা দলের প্রধান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জি.এম. সাদিকুল ইসলাম। প্রকল্প মেয়াদের মধ্যেই কাজ শেষ করতে তারা এখন কঠোর পরিশ্রম করছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো জানিয়েছেন, কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে উৎপাদিত ফ্লাই অ্যাশ,ইস্পাত তৈরির সময় উৎপাদিত তিন ধরনের স্লাগ এবং অকেজো ভবনের বর্জ্য দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে রাসায়নিক ইট।
কিভাবে তৈরি হবে প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক সাদিকুল ইসলাম বলেন, ইট বানাতে আমরা চীন থেকে মেশিন এনেছি। বর্জ্যের সঙ্গে রাসয়নিক মিশ্রনের মাধ্যমে এই মেশিনেই তৈরি করা হবে দেশীয় প্রযুক্তি পরিবেশ বান্ধব ইট। এতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যেমন সহজ হবে তেমনি পরিবেশ রক্ষা হবে।
আলাপ কালে এই গবেষক জানিয়েছেন, বর্জ্য থেকে দেশীয় প্রযুক্তিতে নির্মিত একেকটি ইটের দাম পড়বে ১০ টাকার নিচে। বাণিজ্যিকভাবে নির্মাণ ব্যয় কমাতে এখন কাজ করছেন গবেষকরা। সরকারি সহায়তা পেলে দেশীয় এই প্রযুক্তিটি বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখতে চান বাংলাদেশের পুরোকৌশল বিজ্ঞানীরা। এই দলে এখন নিরন্তর কাজ করছেন চুয়েটের শিক্ষার্থী লামিয়া ইসলাম, আনিকা ফারজানা, তাহসিন মাহমুদ, শাফকাত আর রহমান, মোসাদ্দেক হামিম, ইশরাত জাহান, মাহতাব ইসমাম ও মুমতাহিনা আলম।
Discussion about this post