নিজস্ব প্রতিবেদক
করোনা সংক্রমণের কারণে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কোনো সাময়িক পরীক্ষা নেয়া হবে না। বাতিল হতে পারে পঞ্চম শ্রেণির প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (ইইসি) পরীক্ষাও।
তবে পরীক্ষা নেয়া না হলেও তার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের ‘বাড়ির কাজ’ দিয়ে মূল্যায়নের মাধ্যমে তাদেরকে নতুন শ্রেণিতে তোলা হবে। কাউকে অটোপাস দেয়া হবে না। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সম্মতির পর এ বিষয়ে ঘোষণা আসবে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রতিবছর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছয় মাস পরপর দুটি সাময়িক পরীক্ষা নেয়া হয়ে থাকে। প্রথমটি নেয়া হয় জুনে। আর ডিসেম্বরে আরেকটি পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী ক্লাসে তোলা হয়। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এসব পরীক্ষা না নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর বিকল্প হিসেবে শিক্ষার্থীদের ‘বাড়ির কাজ’র (হোমওয়ার্ক) মাধ্যমে মূল্যায়ন করে পরের ক্লাসে তোলা হবে।
শিক্ষার্থীদের ‘বাড়ির কাজ’ করাতে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ) থেকে অন্তর্বর্তীকালীন শ্রেণিভিত্তিক পাঠ পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়েছে। তার ভিত্তিতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে ছয়দিন ‘বাড়ির কাজ’ দেয়া হয়েছে।
পাঠ পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবইয়ের প্রথম থেকে ক্রমান্বয়ে সব অনুশীলনীকে ‘বাড়ির কাজ’ নামে ক্রমিক নম্বর দেয়া হয়েছে। বাংলা বিষয়ে ‘বাড়ির কাজ’ করার ক্ষেত্রে কোনো বিষয়বস্তু (গল্প, কবিতা, নাটক ও বর্ণনা) পড়তে হবে, তার নির্দেশনা ‘বাড়ির কাজ’র সাধারণ তথ্য অংশে উল্লেখ রয়েছে। প্রতি সপ্তাহের জন্য মূল পাঠ পরিকল্পনায় ছয় দিনের পাঠ নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে শুক্রবারসহ জাতীয় ছুটির দিন বাদ দেয়া হয়েছে। ইংরেজি বিষয়ের জন্য ‘বাড়ির কাজ’ করতে সহায়তা করতে বলা হয়েছে শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের।
এ বিষয়ে নেপের মহাপরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির কারণে সাময়িক পরীক্ষা না নিয়ে শিক্ষার্থীদের শিখন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সহায়ক এবং স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে ‘বাড়ির কাজ’ দেয়া হচ্ছে। সপ্তাহভিত্তিক তা সংগ্রহ করে শিক্ষকদের মূল্যায়ন করতে বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বাড়ির কাজ কী হবে তা মাসব্যাপী সিলেবাস আকারে প্রকাশ করা হচ্ছে। তার ভিত্তিতে কোন দিন কোন পাঠ করতে হবে তা শিক্ষকরা বুঝিয়ে দিচ্ছেন ও আদায় করছেন।’
অন্যদিকে পাঠের বিষয়বস্তু ও সংশ্লিষ্ট ‘বাড়ির কাজ’ সপ্তাহভিত্তিক শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দিষ্ট সপ্তাহ শেষে শিক্ষার্থীদের শিখন অগ্রগতি যাচাই ও ‘বাড়ির কাজ’ সংগ্রহ করে তার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল তৈরি ও সংরক্ষণ করতে বলা হয়েছে। অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনে ‘বাড়ির কাজ’র শিটে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের মোবাইল ফোন নম্বর সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। এসব কাজ মূল্যায়ন করে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে নেয়া হবে।
করোনা পরিস্থিতির কারণে উল্লিখিত চার পরীক্ষা গত বছরও নেয়া যায়নি। তবে গত বছর এ ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল আগস্টের প্রথম সপ্তাহে। এবার আগেভাগেই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।
Discussion about this post