নিজস্ব প্রতিবেদক
শিক্ষার গতানুগতিক ধারাকে পরিবর্তন করে কর্মমুখী ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মিল রেখে দ্রুত কর্মসংস্থানমুখী একটি কারিকুলাম তৈরি করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগসহ সরকারি চার সংস্থাকে নির্দেশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
দেশের নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে যে গতানুগতিক কারিকুলামে পড়াশুনা হচ্ছে তাতে শিক্ষিত বেকার তৈরি হচ্ছে বলে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
তাই গত ২৩ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় (পিএমও) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, বাংলাদেশ রফতানি অঞ্চল কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে দ্রুত যুগোপযোগী কারিকুলামের পরিকল্পনা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়।
পিএমওর এক্সিকিউটিভ সেলের পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামানের সই করা চিঠিতে বলা হয়, সর্বাধিক দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা যায়, এমন খাতগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং এবং আগামী দিনে কতজন দক্ষ শ্রমিক তৈরি করা যায়, তার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঠাতে হবে।
এতে আরও বলা হয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে একটি উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করতে যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তার মধ্যে কারিকুলাম অন্যতম। এ কারিকুলামকে যুগোপযোগী করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, কারিগরিতে ভর্তির হার ২০ শতাংশে নিয়ে আসার জন্য ইতোমধ্যে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে কাজ চলমান। বিশেষ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গতানুগতিক কারিকুলাম পরিবর্তন করতে কর্মমুখী কারিকুলাম প্রণয়নের কাজ চলছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম পুরোটাই পরিবর্তন করে একটি কর্মমুখী করার কাজ চলমান।
এ লক্ষ্যে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদন নিয়ে সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এক সভায় কারিকুলাম নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল , শিক্ষা সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
সভায় জানানো হয়, বাজারে যেসব বিষয়ের চাহিদা আছে, সেসব দক্ষতার জনবল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে আনস্কিলড গ্র্যাজুয়েট (অদক্ষ স্নাতক) তৈরি হচ্ছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে যেসব বিষয়ের চাহিদা নেই, সেসব বিষয় অনার্স-মাস্টার্সে (স্নাতক-স্নাতকোত্তর) না রাখার সুপারিশ করা হয়। এ নিয়ে আরও কয়েকটি বৈঠক করে অনার্স-মাস্টার্সের চাহিদাহীন বিষয়গুলোকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হবে।
জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিষয়টি জানানোর আগে থেকেই আমরা কারিকুলাম পুনর্বিন্যাস করার কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে অনেক কাজ হয়েও গেছে। করোনার কারণে কিছু কাজ আটকে আছে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে কর্মরত বিদেশি দক্ষ কর্মীদের বেতন ও ভাতা হিসাবে প্রতিবছর চার বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। শুধু বাংলাদেশের প্রবাসীদের রেমিটেন্সের কারণে দেশের অর্থনীতির প্রবাহ ঠিক আছে।
এছাড়া সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৪৫ বছর পর একটি স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হওয়ার যোগ্যতা অর্জনের কারণে বাংলাদেশ একটি নতুন যাত্রা শুরু করেছে। ইউনাইটেড নেশনস কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (ইউএনসিডিপি) গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে চূড়ান্ত মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হওয়ার সুপারিশ করেছিল।
Discussion about this post