নিজস্ব প্রতিবেদক
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে দারিদ্র্য, সহিংসতা ও বৈষম্য জর্জরিত নারীদের উন্নত পরিবেশে মানসম্মত উচ্চশিক্ষার অভিজ্ঞতা দিয়ে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য গড়ে তুলতে চায় ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটি (ইডিইউ)। এ পরিবর্তনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে একজন দায়িত্বশীল ও প্রয়োজনীয় শিক্ষায় আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠা একজন নারী, বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান।
১৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে ‘উইম্যান এম্পাওয়ারমেন্ট এন্ড লিডারশিপ ফান্ড’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
বর্তমান বিশ্বে নারীরা দারিদ্র্য, লিঙ্গবৈষম্য ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এছাড়া বিশ্বজুড়ে নানা অঞ্চলে যুদ্ধ ও জাতিগত সংঘাতে জর্জরিত অসংখ্য সম্ভাবনাময় নারী। ইডিইউ এসব নারীদের মানসম্মত উচ্চশিক্ষার সুযোগ করে দিতে হাতে নিয়েছে এক উদ্যোগ। বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বের সুবিধাবঞ্চিত সম্ভাবনাময় নারীদের বিনাখরচে ইডিইউতে উচ্চশিক্ষা অর্জনের সুযোগ দিতে ইডিইউ ঘোষণা করেছে ‘উইম্যান এম্পাওয়ারমেন্ট এন্ড লিডারশিপ ফান্ড’। পিছিয়ে পড়া নারীরাই যাতে সামাজিক ও পেশাগত ক্ষেত্রে নেতৃত্বশীল ভূমিকায় উঠে আসতে পারে এবং ইতিবাচক পরিবর্তনে টেকসই নেতৃত্ব গড়ে ওঠে সে লক্ষ্যে এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে ইডিইউ কর্তৃপক্ষ।
সাঈদ আল নোমান আরো বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই ইডিইউ বৈচিত্র্যময় শিক্ষাপরিবেশ ও সমাজের সকল শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কাজ করে চলেছে। শিক্ষার্থীদের, বিশেষত সম্ভাবনাময় নারীদের সবসময়ই আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে আসছি আমরা। আনুষ্ঠানিকভাবে ফান্ড তৈরি করে বিষয়টিকে এবারই জনসমক্ষে আনা হলো। বাংলাদেশ সরকারের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ইডিইউর এই উদ্যোগ সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
নারীর উন্নয়নে এ উদ্যোগ নেওয়ায় সাঈদ আল নোমানকে অনুষ্ঠানের শুরুতেই ধন্যবাদ জানান অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ও ইডিইউর অন্যতম নারী শিক্ষক রওনক আফরোজ।
অনুষ্ঠানে সেরা রাঁধুনি চ্যাম্পিয়ন ইডিইউর শিক্ষার্থী সাদিয়া তাহেরকে তার সাফল্য ও সমাজে ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তাকে সংবর্ধনা ও পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। একইসাথে তাকে ‘উইম্যান এম্পাওয়ারমেন্ট এন্ড লিডারশিপ ফান্ড’ উদ্যোগের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ইডিইউর এ উদ্যোগে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে আগ্রহী যে কেউ আর্থিক অনুদান দিতে পারবে। ফান্ডটি ‘ম্যাচিং গ্র্যান্ট’ হওয়ায়, যদি কেউ এতে অনুদান দেয়, ইডিইউ কর্তৃপক্ষও সমপরিমাণ টাকা এতে প্রদান করবে। অনুষ্ঠান চলাকালে ইডিইউর প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান সাঈদ আল নোমান ব্যক্তিগতভাবে এতে সাত লক্ষ টাকা অনুদানের ঘোষণা দেন, ফলে বিশ্ববিদ্যলয় থেকেও এতে সমপরিমাণ টাকা যোগ করে দেওয়া হবে। প্রতিবছর আবেদনের ভিত্তিতে ১০জন শিক্ষার্থীকে ফান্ডের আওতায় আনা হবে এবং এতে এ শিক্ষার্থীদের চার বছরের গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামে মোট ৭৫ লক্ষ টাকার আনুমানিক শিক্ষাব্যায় বরাদ্দ করা হয়েছে। সম্ভাবনাময় শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় গৃহিত এ উদ্যোগে সামর্থবান সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানানো হয়।
ইডিইউর উপাচার্য অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান বলেন, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক নেতৃত্ব সৃষ্টিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে ইডিইউ। সম্ভাবনাময় বা সমাজে নানাভাবে ভূমিকা রাখা শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জীবন সুমসৃণ করতে এবং কর্মজীবনে সামাজিক দায়িত্বশীলতার দায়বদ্ধতা তৈরিতে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছি আমরা। প্রতিটি সেমিস্টারেই যোগ্য শিক্ষার্থীদের আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা ছিলেন জিপিএইচ ইস্পাতের চিফ পিউপল অফিসার শারমিন সুলতান, মেরিকো ইন্ডিয়া লি. এর অরগানাইজেশন ইফেকটিভনেস ম্যানেজার হুমায়রা আফরিন খান এবং ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ডিরেক্টর ড. মুনাল মাহমুদ। ইডিইউর এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তারা এবং বলেন, বাংলাদেশের প্রথম কোনো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে নেয়া এ উদ্যোগ বাংলাদেশের নারী অগ্রগতিতে যুগান্তকারী প্রভাব রাখবে।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন ইডিইউর স্কুল অব বিজনেসের অ্যাসোসিয়েট ডিন ড. রকিবুল কবির, সিনিয়র অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার ফারহানা আহমদ সিগমা, সহকারী অধ্যাপক তাসমিম চৌধুরী বহ্নি ও শিক্ষাজীবনে আর্থিক সুবিধাপ্রাপ্ত ইডিইউর দুই নারী শিক্ষার্থী।
এ বৃত্তির জন্য আবেদনকারীদের অবশ্যই এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ ৫ অর্জন করতে হবে; ও/এ লেভেলের ক্ষেত্রে মোট পয়েন্ট ৩০ হতে হবে। এছাড়া প্রার্থীরা যদি কোনো এনজিও, সামাজিক সংগঠনের সাথে স্বেচ্ছাসেবী কাজে জড়িত থাকে; দারিদ্র্য বিমোচন, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে সম্পৃক্ত থাকে; অথবা সমাজে ইতোমধ্যে অসামান্য ভূমিকা রেখে থাকে বা উদ্যোক্তা হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। যদি প্রার্থী কোনো ধরনের সৃজনশীল ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকে এবং স্বীকৃতি বা অর্জনের অধিকারী হয়- সেসবও বিবেচনা করা হবে।
আবেদনের সময় পরিবারের সদস্যদের বিস্তারিত পরিচয়, আর্থ-সামাজিক অবস্থার বিবরণ, আয় বিবরণী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পূর্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সনদ প্রদান করতে হবে। এছাড়া নিজের লক্ষ্য ও পরিকল্পনা সম্পর্কে বিশদে লিখে আবেদন করতে প্রার্থীকে।
আগ্রহীরা এই ফান্ড সম্পর্কে আরও জানতে ইডিইউর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ বা scholarships.eastdelta.edu.bd ঠিকানায় যোগাযোগ করতে পারবে কিংবা ০১৩১১-১০৪৫৩১, ০১৩১১-১০৪৫৩২, ০১৩১১-১০৪৫৩৪, ০১৩১১-১০৪৫৩৭ নম্বরে সরাসরি কল বা হোয়াটসএপে ম্যাসেজও করা যাবে।
Discussion about this post