শিক্ষার আলো ডেস্ক
দেশি প্রজাতির খুব ছোট একটি মাছ হলো কাঁচকি । দেশের নদ-নদী, খাল-বিলে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় এ মাছগুলো। কিন্তু আকারে খুব ছোট এবং কাঁটাযুক্ত হওয়ায় অনেকেই এটি খেতে পছন্দ করেন না। বিশেষ করে ছোট বাচ্চারা খেতে চায় না। কিন্তু ছোট এই মাছে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি উপাদান। যারা ছোট মাছ খেতে চান না তাদের বিকল্প উপায়ে মাছের পুষ্টি গ্রহণের উপায় উদ্ভাবন করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের একদল গবেষক।
কাঁচকি মাছ প্রক্রিয়া করে তারা তৈরি করেছেন কাঁচকি মাছের চানাচুর, কুড়কুড়ে বাদাম ও তিলের বার।
রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিষয়টি গণমাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন গবেষক দলের প্রধান ফিশারিজ টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহম্মদ নুরুল হায়দার।
ড. মুহম্মদ নুরুল হায়দার বলেন, কাঁচকি মাছে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম, প্রোটিন ও ভিটামিন ‘এ’ বিদ্যমান। বর্তমানে এ মাছটি প্রচুর পরিমাণে আহরিত হচ্ছে। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে কাঁচকি মাছ গুরুত্বপূর্ণ। তবে পুষ্টিসমৃদ্ধ এ মাছ খেতে শিশুসহ অনেকেই অনাগ্রহী। তাই মাছটির পুষ্টিগুণ বিবেচনায় আমরা দুটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে ছয়টি পণ্য উৎপাদন করেছি।
তিনি বলেন, শিশুসহ সব বয়সী মানুষের চানাচুর এবং বার জাতীয় খাবারটি খুব পছন্দনীয়। তাই ক্যাটাগরি-১ এর পণ্যগুলো মূলত চানাচুর জাতীয়। অন্যদিকে ক্যাটাগরি-২ এর পণ্যগুলো মূলত কুড়কুড়ে বাদাম ও তিলের বার জাতীয় করে তৈরি করা হয়েছে। এতে করে তারা এসব মুখরোচক খাবারের সঙ্গে মাছের পুষ্টিও গ্রহণ করতে পারবেন।
কাঁচকি মাছ ব্যবহার করে খাদ্যপণ্য তৈরি প্রক্রিয়ার বিষয়ে গবেষকরা বলছেন, তিল এবং বাদামের পণ্যগুলো তৈরি করা হয় বাদাম, মাছ, তিল এবং গুঁড়ের সমন্বয়ে। প্রথমে উপাদানগুলো হাইজেনিক পদ্ধতিতে শুষ্ক করে নেওয়া হয়। মাছ, তিল এবং বাদাম প্রথমে ভেজে নেওয়া হয়। মাছগুলো ভাজা হয় মিডিয়াম তাপমাত্রায়। এতে মাছগুলো মচমচে হবে। পরে আখের গুঁড়ের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা হয় বার।
অন্যদিকে বাজারের তৈরি চানাচুরের সঙ্গে প্রক্রিয়াজাত মাছ মিশিয়ে গবেষকরা তৈরি করেছেন চানাচুর। মাছ দিয়ে তৈরি এসব পণ্যে পরবর্তীতে মাছের কোনো গন্ধ থাকে না। জিপার ব্যাগে পণ্যগুলো দুই মাসের বেশি সময় পর্যন্ত ভালো থাকে বলে জানান গবেষক দলের প্রধান নুরুল হায়দার ।
পণ্যগুলোর বাজারমূল্য সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাজারে প্রাণ-এর ২৫ গ্রাম ওজনের যে পিনাট বার পাওয়া যায় তার দাম ১০ টাকা। তবে মাছের তৈরি বিশেষ এ বারের দাম পড়তে পারে ১৫-২০ টাকা।’
তিনি আরও বলেন, প্রতি কেজি মাছের তৈরি বার বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা ৬০০ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারবেন। মাছের চানাচুরের দাম নির্ধারণ করা হবে মাছের পরিমাণের ওপর। চানাচুরে মাছের পরিমাণ যত বেশি হবে তার দামও তত বেশি হবে।
এ বিষয়ে বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. ফাতেমা হক শিখা বলেন, এ ধরনের পণ্য বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করা গেলে দেশীয় পুষ্টিকর ছোট মাছগুলো সব শ্রেণির ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে। যা বিপুল জনগোষ্ঠীর খাদ্য ও পুষ্টির চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।
Discussion about this post