শিক্ষার আলো ডেস্ক
রাজধানীর মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্লে-গ্রুপে শিশুদের ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এতে যোগ্যতা হিসেবে শিশুর উচ্চতা, ওজন ও দাঁতের সংখ্যা উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। শিশুদের ভর্তিতে এমন অদ্ভুত শর্তজুড়ে দেওয়ায় এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরনের গুঞ্জন তৈরি হয়েছে।
সম্প্রতি মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্লে-গ্রুপের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে ২১ অক্টোবর পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়। ২২ অক্টোবর লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের জন্য ‘অদ্ভুত শর্ত’ জুড়ে দেন কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, প্লে-গ্রুপে ভর্তির যোগ্যতা হিসেবে শিক্ষার্থীর বয়স ৪ থেকে ৫ বছর চাওয়া হলেও ভর্তিচ্ছু শিশুর উচ্চতা চাওয়া হয়েছে ৩ ফুট থেকে ৩ ফুট ৮ ইঞ্চি। শুধু তাই নয়, শিক্ষার্থীর ১৩ থেকে ২১ কেজি শরীরের ওজন থাকতে হবে। সব দুধদাঁত (২০টি) অটুট রাখতে বলা হয়েছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে, ছোঁয়াচে অসুখ থাকলে ভর্তি বাতিল বলে বিবেচিত হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, করোনার কারণে ভর্তি লটারির আগে আইকিউ টেস্ট হবে না। লটারিতে উত্তীর্ণ শিশুদের ভর্তি হওয়ার আগে আইকিউ টেস্ট নেওয়া হবে। এতে যারা যোগ্য বলে বিবেচিত হবে শুধু তাদের পর্যায়ক্রমে ভর্তি করা হবে। প্রাতিষ্ঠানিক শর্তপূরণে ব্যর্থ হলে সে ভর্তির জন্য অযোগ্য বিবেচিত হবে বলেও উল্লেখ করা হয়।
দুধদাঁত পড়ে যাওয়া এক ভুক্তভোগী শিশুর বাবা বাপ্পী তালুকদার বলেন, ‘এটা কী ধরনের নিয়ম হতে পারে। স্কুলটি বাসার কাছে হওয়ায় বাচ্চাকে এখানে ভর্তি করাতে চেয়েছিলাম। আমার বাচ্চার সবকিছুই ঠিক ছিল, কিন্তু দুধদাঁত পড়ে যাওয়ায় তাকে বাতিল করে দেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষের এ ধরনের সিদ্ধান্ত খুবই দুঃখজনক।’ তিনি এর তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং এ ধরনের নিয়ম তুলে দিয়ে যোগ্য বাচ্চাদের ভর্তির দাবি জানান।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘১৯৭৬ সাল থেকে এ ধরনের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হচ্ছে, কখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। এখন যেহেতু বিষয়টি নিয়ে কথা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পরিবর্তনে বিবেচনা করবেন।’
শিক্ষার্থীদের দুধদাঁতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দুধদাঁত পড়ে গেলে ওই বাচ্চার কথা বলতে সমস্যা হয়, কথা স্পষ্ট বলতে পারে না। এ কারণে আমরা মূলত দুধদাঁতের বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলি। এছাড়া এ বিষয়টি নিয়ে আমরা কখনো কোনো অভিযোগ পাইনি।’
‘শিক্ষার্থীদের ওজন বেশি হলে ভর্তি করা হয় না’- এ বিষয়ে তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত নিয়ে কোনো অভিভাবক কখনো অভিযোগ করেননি। তাছাড়া ওজন বেশি হলে আমাদের এখানে ভর্তি না নেওয়ার কারণ- এটা কমিটির সিদ্ধান্ত। এছাড়া আগে থেকেই এই নিয়মে ভর্তি করানো হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এ নিয়ম চলে আসছে, আগে এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ আসেনি। যেহেতু এখন অভিযোগ আসছে, বিষয়টি রিভিউ করা হবে।
এ বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (বিদ্যালয়) অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেন, ‘এ ধরনের শর্ত দেওয়া হাস্যকর, এটা আমাদের নজরে আসেনি। ভর্তি নীতিমালায় এ ধরনের কোনো শর্ত দেওয়া হয়নি। যদি অভিযোগ আসে তবে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে।’
Discussion about this post