শিক্ষার আলো ডেস্ক
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা দেশকে প্রতিনিধিত্ব করে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। আমেরিকান কংক্রিট ইন্সটিটিউট (এসিআই) আয়োজিত ” ইকো কংক্রিট কম্পিটিশন ২০২১” নামক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট)পুরকৌশল বিভাগের ৬ সদস্যবিশিষ্ট দল চুয়েটক্স (CUTEX)
গত ১৯ অক্টোবর বাংলাদেশ সময় রাত ১১ টায় এসিআই ফল কনভেনশন ২০২১ এর ভার্চ্যুয়াল প্ল্যাটফর্মে এই ফলাফল ঘোষণা করেন মিশিগান ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি মেম্বার, হিসাম আজারি জাফারি৷ প্রতিযোগিতায় যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করে নেয় ইকুয়েডরের ইউনিভারসিডাড স্যান ফ্রান্সিস্কো দে কুইতো এবং ফিলিপাইনের এটেনিও দে নাগা ইউনিভারসিটি। পুরো প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় পৃথিবীর প্রায় ২৫০ টি বিশ্ববিদ্যালয়।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অংশগ্রহণকারী “CUETX” টিমের সদস্য হলেন পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাহসিন মাহমুদ, ইসরাত জাহান ও মোসাদ্দেক হামীম এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহতাব ইশমাম, মুমতাহিনা আলম এবং জুসান আবদুল্লাহ। CUETX টিমের ফ্যাকাল্টি এডভাইজর ও মেন্টর হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এম সাদিকুল ইসলাম।
উক্ত টিমের উপস্থাপনকৃত বিষয়টি ছিল “সাধারণ পোর্টল্যান্ড সিমেন্টের আংশিক প্রতিস্থাপক হিসাবে পরিপূরক সিমেন্টেটিস উপকরণ ব্যবহার করে কংক্রিট কাঠামোর সেবা জীবন এবং পরিবেশগত কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি৷ ”
চলতি বছরের জুলাই মাসে এসিআই ফল কনভেনশনে আয়োজিত ইকো কনক্রিট কম্পিটিশনে অংশগ্রহণের জন্য পুরো পৃথিবীর প্রায় ২৫০ টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সর্বোচ্চ ৬ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি করে টিম আহবান করা হয়।
Eco concrete competition 2021-Cuet succes
বিশ্ববিদ্যালয়ের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য সেরা ৬ জন বাছাইয়ে লক্ষ্যে “এসিআই স্টুডেন্ট চ্যাপ্টার- চুয়েট” আয়োজন করে অন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ইকো কংক্রিট কম্পিটিশন। যেখানে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনায় সর্বোচ্চ ৬ সদস্যবিশিষ্ট ২০ টি টিমের অংশগ্রহণে শুরু হয় প্রিলিমিনারি রাউন্ড, সেখান থেকে সেরা ৬ টিম বাছাইয়ের মাধ্যমে শুরু হয় চূড়ান্ত পর্ব। সেরা ৬ টিমের বানানো ভিডিওবার্তা যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে উঠে আসে সেরা ৩। বিজয়ী প্রথম দলটি আন্তর্জাতিক টিম “CUETX” হিসেবে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাবমিশন রাউন্ডে সর্বোচ্চ ৭ মিনিটের ভিডিও, পুরো প্রক্রিয়া সম্পর্কিত রিপোর্ট এবং সফটওয়্যার এর ফলাফল উপস্থাপনের মাধ্যমে টিম চুয়েটেক্স প্রথম ধাপে বিজয় অর্জনের লক্ষ্যে এগিয়ে যায়। উক্ত উপস্থাপনার উপর ভিত্তি করে ৭ অক্টোবর প্রথম পর্বের ফলাফল ঘোষণার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বহু বিশ্ববিদ্যালয়কে পিছনে ফেলে, বাংলাদেশ থেকে সেরা ১৩ এ জায়গা করে নেয় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) এবং ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলোজি, গাজীপুর।
পরবর্তী পর্বে সেরা ১৩ টি দলকে লাইভ ইন্টারভিউতে মুখোমুখি হতে হয় আন্তর্জাতিক ৫ জন কংক্রিট বিশেষজ্ঞদের। ইন্টারভিউ রাউন্ডে বিচারক হিসেবে ছিলেন সামহার হজ ( চেয়ারম্যান অফ এসিআই এস ৮০১), শন মনকম্যান (চেয়ারম্যান অফ এসিআই ১৩০, কার্বন কিউর), কাইল স্ট্যানিশ (চেয়ারম্যান অফ এসিআই ৩৬৫, টর্নি কনসাল্টিং গ্রুপ), মিলেনা রাঙ্গেলভ (ফেডারাল হাইওয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেশন), কিম্বারলে ওয়াগল (চেয়ারম্যান অফ এসিআই ১৩০জি, কানসাস স্টেট ইউনিভার্সিটি), জুলি বাফেনভারগার (চেয়ারম্যান অফ এসিআই ১৩০এইচ, বেনটন কনসাল্টিং)৷
ইন্টারভিউতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের মাধ্যমে CUETX জিতে নেয় প্রথম অবস্থান। পুরস্কার হিসেবে বিজয়ী টিমের জন্য থাকছে ৭৫০ মার্কিন ডলার ও সার্টিফিকেট ।
এ প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য ছিল একটি সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী কংক্রিটের মিশ্রণ উদ্ভাবন করা যা দীর্ঘদিন ব্যবহারে সক্ষম হওয়ার পাশাপাশি পরিবেশের উপর ন্যূনতম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। বর্তমান বিশ্বে নির্মাণ কাজে সর্বোচ্চ ব্যবহৃত উপাদান হচ্ছে কংক্রিট। কিন্তু কংক্রিট তৈরিতে মূল উপাদান হিসেবে সিমেন্টের অত্যাধিক ব্যবহার কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ, জলবায়ুর বিভিন্ন নেতিবাচক পরিবর্তনের অন্যতম প্রভাবক। এসব সমস্যার সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব, স্থায়ী ও টেকসই সমাধান বের করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও নির্মাণ বর্জ্য, শিল্প কারখানার বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনায় নিষ্কাশনের সুযোগ অপ্রতুল। এই সকল বিষয় কে মাথায় রেখে ভিন্নধর্মী কংক্রিট মিক্সচার দিয়ে কংক্রিটের ইতিবাচক ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করাই ছিল টিম CUETX এর মূল লক্ষ্য।
টিমের এডভাইজর অধ্যাপক ড. জি. এম. সাদিকুল ইসলাম বলেন, ACI Faculty advisor হিসেবে পরপর তিনটি প্রতিযোগিতায় সর্বোচ্চ সাফল্য শিক্ষার্থীদের সাথে আমাকেও অনুপ্রানণত ও পর্বিত করেছে। এই অসাধারন মেধাবীদের সাথে কাজ করে ভবিষতে আরও ভাল কিছু করার জন্য সকলের নিকট দোয়াপ্রর্থী।
এ বিষয়ে চুয়েট পুরকৌশল বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আসিফুল হক বলেন, বাংলাদেশ থেকে একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চুয়েট পুরকৌশল বিভাগের এই অর্জনে আমি গর্বিত৷ তাদের এই অর্জন ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে ৷ আশা করি ভবিষ্যতেও আমাদের শিক্ষার্থীদের এমন সাফল্য অব্যাহত থাকবে৷
Discussion about this post