মোহাম্মদ আজহার
সারাদেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) তৈরি অ্যান্টিপ্রক্সি অ্যাপ। প্রযুক্তির অসাধারণ ব্যবহারে ভর্তি জালিয়াতিরোধে তৈরি করা হয় অ্যাপটি।
সর্বশেষ ২০১৯-২০ সেশনে চবির ভর্তি পরীক্ষার জন্য অ্যাপটি তৈরি ও ব্যবহার করা হয়েছিল। তবে চলমান ২০২০-২১ সেশনের ভর্তি পরীক্ষায় অ্যাপটির তেমন কোনো ব্যবহার দেখা যায়নি। ভর্তি পরীক্ষায় সব ধরনের জালিয়াতি রোধে চবির আইসিটি সেল ও আগামী ল্যাবসের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছিল অ্যান্টিপ্রক্সি অ্যাপ। এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন চবি’র আইসিটি সেলের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হানিফ সিদ্দিকী।
অ্যাপটি দিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রগুলো সুনিপুণভাবে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ রয়েছে। অ্যাপটি পরীক্ষার হল পরিদর্শকরা নিজেদের মোবাইলে রাখবেন। পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ডে থাকা (QR) কিউআর কোড স্ক্যান করলেই অটোমেটিক কিউআর কোডের মধ্যে থাকা একটি গোপন কোডকে শনাক্ত করে অ্যাপটি। এরপর তাৎক্ষণিক চবি’র অনলাইন সার্ভারের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে ওই কোডের অধীনে সার্ভারে থাকা ব্যক্তির ছবিসহ যাবতীয় তথ্য মোবাইলের ডিসপ্লেতে দেখানো হয়। কাজেই সার্ভারে থাকা পরীক্ষার্থী ছাড়া ভিন্ন কেউ পরীক্ষা দিলে মুহূর্তেই ধরা পড়বেন।
গত ৩১ অক্টোবর চবির ডি-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় একজনের পরিবর্তে পরীক্ষা দিতে এসে ধরা পড়েন ভর্তি জালিয়াতি চক্রের সদস্য রংপুর কারমাইকেল কলেজের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মাসুদ সরকার। সম্প্রতি তিনি ৪৩তম বিসিএসের প্রিলিতেও অংশ নিয়েছেন। তবে তাকে শনাক্তের জন্য অ্যান্টিপ্রক্সি অ্যাপটি ব্যবহার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন চবি’র প্রক্টরিয়াল বডি। প্রবেশপত্রের ছবির সঙ্গে মিলিয়েই তাকে শনাক্ত ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।
অ্যাপটির বিষয়ে জানতে চাইলে চবি’র আইসিটি সেলের বর্তমান পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ খাইরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অ্যাপটি এবারও ব্যবহার করা হচ্ছে। অন্যথায় আমরা প্রবেশপত্রে কিউআর কোড কেনই বা দেবো?
এদিকে এবারের ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রে থাকা কিউআর কোডটিকে অফলাইনের একটি সাধারণ কিউআর কোড বলছেন আইটি বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া সিউ অ্যান্টিপ্রক্সি অ্যাপটি দিয়ে প্রবেশপত্রে থাকা কিউআর কোডটি স্ক্যান করে কোনো তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না।
জানতে চাইলে একজন আইটি বিশেষজ্ঞ বাংলানিউজকে বলেন, অ্যান্টিপ্রক্সি অ্যাপটির কাজ হলো সরাসরি সার্ভারের সঙ্গে কিউআর কোডটিকে সংযুক্ত করা। সার্ভারে যদি এই কিউআর কোডের কোনো ডাটাবেজ না থাকে, তাহলে স্ক্যান করে কোনো তথ্য পাওয়া যাবে না। তবে সাধারণ কোনো স্ক্যানার অ্যাপ দিয়ে স্ক্যান করলে অফলাইনের কিছু তথ্য সেখানে পাওয়া যাবে। আর এ প্রক্রিয়া কখনোই অ্যান্টিপ্রক্সি অ্যাপের প্রক্রিয়া হতে পারে না। এমন কিউআর কোড যে কেউ চাইলে পরিবর্তন করে বসাতে পারবেন।
সাধারণ স্ক্যানার অ্যাপ দিয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্রে থাকা কিউআর কোডটি স্ক্যান করে দেখা যায় বেশকিছু তথ্য রয়েছে এখানে। এর মধ্যে পরীক্ষার্থীর নাম, ইউনিট, রোল নম্বর, অ্যাপলিকেশন আইডি, মিডিয়াম এবং পরীক্ষার তারিখ ও সময় দেওয়া আছে।
তবে সার্ভারে থাকা ডাটাবেজ অনুযায়ী যদি অ্যান্টিপ্রক্সি অ্যাপের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হতো, তাহলে এই কিউআর কোড স্ক্যান করলে পরীক্ষার্থীর সিট প্ল্যান পাওয়া যেত। সিট প্ল্যান সাধারণত পরীক্ষার ২৪ ঘণ্টা আগে দেওয়া হয়। অপরদিকে শিক্ষার্থীরা প্রবেশপত্র সংগ্রহ করতে পারেন পরীক্ষার ১৫ দিন আগে। কাজেই প্রবেশপত্রের মধ্যে থাকা কিউআর কোডটি যদি সার্ভারে সংযুক্ত না থাকে, তাহলে কিউআর কোড স্ক্যান করলে পরীক্ষার সময় সিট প্ল্যান শনাক্ত করা যাবে না।
অ্যান্টিপ্রক্সি অ্যাপের মাধ্যমে তিন ধরনের সুবিধা পাওয়া যায়। প্রথমত কোনো শিক্ষার্থী যদি সিট প্ল্যান সম্পর্কে না জানেন তাহলে অ্যান্টিপ্রক্সি অ্যাপ দ্বারা কিউআর কোড স্ক্যান করে তাৎক্ষণিক সিট প্ল্যান খুঁজে নিতে পারবেন যে কারও সাহায্যে। দ্বিতীয়ত কোনো পরীক্ষার্থীর পরিবর্তে অন্য কেউ পরীক্ষা দিতে আসলে কিউআর কোড স্ক্যান করে সার্ভারে থাকা আসল পরীক্ষার্থীর ছবি, সিট প্ল্যানসহ যাবতীয় তথ্য নিয়ে খুব সহজেই আসল ব্যক্তিকে শনাক্ত করা যাবে। তৃতীয়ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভর্তির সময় আসল ব্যক্তি ভর্তি হচ্ছে কিনা, সেটাও শনাক্ত করা যাবে।
এবার অ্যান্টিপ্রক্সি অ্যাপটির যথাযথ ব্যবহার না হওয়ায় এসব সুবিধা থাকছে না চবির ভর্তি কার্যক্রমে। সৌজন্যে-বাংলানিউজ
Discussion about this post