শিক্ষার আলো ডেস্ক
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং (আইবিজিই) এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রফেসর ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমি (টিডব্লিউএএস) এর ফেলো নির্বাচিত হয়েছেন।
রোববার (৭ নভেম্বর) সংস্থাটি থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়।
এর আগে গত শনিবার বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমির সদর দফতর ইতালি থেকে সংস্থাটির সভাপতি এবং নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর তোফাজ্জল ইসলামকে এক অভিনন্দন বার্তার মাধ্যমে এ সংবাদ জানান।
আন্তর্জাতিকভাবে মনোনীত বিশ্ব জ্ঞান ভাণ্ডারের অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর বিশ্ব বিজ্ঞান একাডেমির ফেলোদের ভোটে নতুন ফেলো নির্বাচন করা হয়।
আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে আজীবনের জন্য বিশ্ব বিজ্ঞান সংস্থাটির ফেলো হিসেবে উন্নয়নশীল দেশসমূহের বিজ্ঞান উন্নয়নে কাজ করবেন প্রফেসর তোফাজ্জল। আগামী বছরের শুরুতে ইতালিতে নতুন ফেলো হিসেবে তার অভিষেক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশে আধুনিক বায়োটেকনোলজির প্রয়োগে কৃষিতে একটি নতুন বিপ্লব সাধনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন অধ্যাপক ড. মো. তোফাজ্জল ইসলাম। ২০১৬ সালে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৮ জেলায় ১৫,০০০ হেক্টর জমিতে ঘটে যাওয়া গমের মহামারীর সংকটকালে তিনিই প্রথম রোগজীবাণু ছত্রাকটির জীবনরহস্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে গমের শত্রু চিহ্নিত করে আলোড়ন সৃষ্টি করেন। ওই যুগান্তকারী গবেষণায় তিনি চারটি মহাদেশের ৩১ জন বিজ্ঞানীকে সম্পৃক্ত করে একটি জাতীয় সমস্যার সমাধান করেন। তার এ আবিষ্কারের ফলে রোগটির মোকাবিলা করার জন্য কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ দেওয়ায় পরবর্তী বছর গম ফসলের ক্ষতি হ্রাস করা সম্ভব হয়।
বর্তমানে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য চরম হুমকি গমের ব্লাস্ট রোগটি মোকাবেলায় তিনি জিন এডিটিং, ন্যানোটেকনোলজি, প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়াসহ আধুনিক বায়োটেকনোলজি প্রয়োগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছেন।
সম্প্রতি তিনি গমের ব্লাস্ট রোগ দ্রুত শনাক্তকরণের জন্য একটি সহজ জীবপ্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন, যা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের গম আমদানি-রফতানি (সঙ্গনিরোধে), গবেষণায় এবং কৃষকের মাঠে ব্যাপক ব্যবহার হবে।
এ ছাড়াও তিনি ধান, গম এবং স্ট্রবেরিতে রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে সাশ্রয়ী প্রোবায়োটিক ব্যাকটেরিয়া প্রযুক্তি আবিষ্কার করে কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। ভেষজ উদ্ভিদ এবং অণুজীব থেকে এ পর্যন্ত তিনি ৫০টির অধিক রোগজীবাণু প্রতিরোধী নতুন প্রাকৃতিক যৌগ বা এন্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেছেন।
সম্প্রতি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীদের প্লস বায়োলজিতে প্রকাশিত বিজ্ঞানীদের ডাটাবেস সম্পর্কিত এক প্রবন্ধে তিনি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ দুই শতাংশ বিজ্ঞানীদের একজন এবং বাংলাদেশে জীবপ্রযুক্তি, কৌলিতত্ত্ব এবং অণুপ্রাণবিজ্ঞানে দেশের শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর স্থান লাভ করেন।
অধ্যাপনা এবং গবেষণায় অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইতোপূর্বে প্রফেসর তোফাজ্জল ২০১৬ সালে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির ফেলো নির্বাচিত হন। মৌলিক গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশে-বিদেশে তিনি অনেক পুরষ্কার, মেডেল এবং সম্মাননা লাভ করেন। এর মধ্যে জীববিজ্ঞানে অসামান্য অবদানের জন্য জ্যেষ্ঠ ক্যাটাগরিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিকট থেকে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমী স্বর্ণপদক-২০১১ (২০১৪ সালে প্রদত্ত), মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট এর কাছ থেকে আইডিবি ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৮, রোটারি ইন্টারন্যাশনাল ভোকেশনাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৭, জীবনরহস্য বিশ্লেষণপূর্বক গমের ব্লাস্ট রোগের উৎপত্তিস্থল নির্ণয়ের জন্য কমনওয়েলথ সেক্রেটারিয়েট থেকে কমনওয়েলথ ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড-২০১৯, কেআইবি বেস্ট প্রেজেন্টার পুরস্কার-২০১৬, কৃষি বিজ্ঞানে মৌলিক গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পরপর দুই বার (২০০৪ এবং ২০০৭) বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন গবেষণা অ্যাওয়ার্ড এবং জাপানের জেএসবিবিএ শ্রেষ্ঠ তরুণ বিজ্ঞানী পদক-২০০৩ উল্লেখযোগ্য।
Discussion about this post