শিক্ষার আলো ডেস্ক
মৌলিক পরিবর্তন আসছে স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তিতে। এখন থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) তত্ত্বাবধানে বেসরকারি হাইস্কুলে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
পরীক্ষার পরিবর্তে লটারির মাধ্যমে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী বাছাই করা হবে। ২০০ টাকার পরিবর্তে আবেদন ফি নেওয়া হবে ২২ টাকা।
এমন বেশকিছু বিষয় নতুনভাবে যুক্ত করে ভর্তি নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রোববার নাগাদ এটি প্রকাশ করা হতে পারে বলে জানা গেছে। সরকারি হাইস্কুলেও এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে।
এতদিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করেছে। কোথাও লটারি হয়েছে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেওয়া হয়েছে পরীক্ষা। কিন্তু এর ফল উলটে দেয়ার অভিযোগও উঠেছে। এ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার নতুন এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) ডা. সৈয়দ ইমামুল হোসেন বলেন, ভর্তিসংক্রান্ত নীতিমালা চূড়ান্ত হয়েছে। রোববার নাগাদ তা প্রকাশ করার কথা আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এবার একই ওয়েবসাইটে সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এতে সরকারি এবং বেসরকারির জন্য আলাদা দুটি উইনডো থাকবে। ভর্তির আবেদন ফিও কমানো হয়েছে। বর্তমানে একটি বেসরকারি স্কুলে ভর্তির জন্য আবেদন ফি দিতে হয় ২০০ টাকা। সেই হিসাবে ৫টিতে আবেদন করলে ১ হাজার টাকা লাগে। কিন্তু এবার ৫টির জন্য ফি ধার্য করা হয়েছে ১১০ টাকা। সরকারি হাইস্কুলেও একই পরিমাণ ফিতে ৫টিতে ভর্তির আবেদন করা যাবে। বর্তমানে এসব প্রতিষ্ঠানে আবেদনের জন্য প্রতিটিতে ১৭০ টাকা ফি দিতে হয়। অনলাইনে আবেদন নেওয়ার পর সফটওয়্যারের মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের লটারি হবে।
মাউশির উপ-পরিচালক (মাধ্যমিক) মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন বলেন, বেসরকারি কিছু হাইস্কুলের বিভিন্ন শ্রেণির ভর্তিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে ভয়াবহ অভিযোগ আছে। তা দূর করার পাশাপাশি অভিভাবকদের দুর্দশা লাঘব এবং স্বল্প খরচে ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এ পদক্ষেপ নিয়েছেন। এবারের ভর্তি কার্যক্রম অনেক স্বচ্ছ ও স্বতঃস্ফূর্ত হবে। বিশেষ করে জীবনের শুরুতে কোনো শিক্ষার্থী যাতে অনিয়মের শিকার না হয় সেটি নিশ্চিতে এ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জেলা পর্যায়ের স্কুল পর্যন্ত এ নীতিমালা বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানান তিনি।
এবারের নীতিমালার আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, কোনো শ্রেণির ভর্তিতেই পরীক্ষা থাকছে না। প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে ভর্তি করা হবে। অনলাইনে আবেদন নেয়ার পর ফলাফল ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। টেলিটকের মাধ্যমে লটারি কার্যক্রম পরিচালিত হবে। এ ব্যাপারে রোববার নীতিমালা অনুযায়ী একটি ভর্তি কমিটি গঠন করা হবে। ওইদিন কমিটির সভা করার কথা আছে। গত বছর করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রথম থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। এ লটারি নিয়েও অভিযোগ আছে। কেননা, স্কুলগুলো লটারি করেছিল। স্কুলগুলো বিশেষ করে যেসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তিবাণিজ্য হয়ে থাকে, সেখানে এবার পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল বলে জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, নীতিমালায় কোটায় ভর্তিতে একটি বিধান এবার যুক্ত করা হচ্ছে। সেটি হলো- সরকারি চাকরিজীবী কেউ মৃত্যুবরণ বা অবসরে গেলে তার পরিবার অন্যত্র স্থানান্তর হলে সেখানে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হবে। এ সুবিধা মাত্র একবারের জন্য দেওয়া হবে। বর্তমানে এ ধরনের কর্মকর্তা-কর্মচারী বদলির পর তার নতুন কর্মস্থলের কাছাকাছি সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তির সুযোগ পান।
এছাড়া ভর্তি নিশ্চিতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একাধিক প্রতিষ্ঠান বা জেলায় আবেদন করার প্রবণতা আছে। এমন ক্ষেত্রে ভর্তির আগে বা পরে পছন্দের বিদ্যালয়ে নিজ ও নির্বাচিত জেলার স্কুলে আলোচনা করে তারা ভর্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করতে পারবে।
Discussion about this post