শিক্ষার আলো ডেস্ক
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেছেন, স্মার্ট ডিভাইসগুলো শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কমিয়ে দিয়েছে। কেউই এখন মনোযোগ সহকারে টানা চার-পাঁচ ঘণ্টা বসে পড়তে পারছে না। শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে বেশি সময় ব্যয় করছে। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, পুরো পৃথিবীর একটা বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বুধবার (১০ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
জাফর ইকবাল বলেন, শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে, স্মার্ট ডিভাইস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হয়। একই সঙ্গে ফেসবুকে সময় কমিয়ে বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়াতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্লাস রুম থেকে যা শিখতে পারে তার চেয়ে বেশি শিখতে পারে শ্রেণি কক্ষের বাইরে। শ্রেণি কক্ষের বাইরে ৯৫ শতাংশ শিখছেন তারা। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সহ-শিক্ষামূলক কর্মকাণ্ডগুলো থেকে বেশি শিখতে পারেন শিক্ষার্থীরা। আর এ শিক্ষার মাধ্যমেই তারা মানুষ হওয়ার প্রকৃত শিক্ষা খুঁজে পান।
শিক্ষার্থীদের লিডারশিপ কোয়ালিটি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে জাফর ইকবাল বলেন, শাবিপ্রবির একজন শিক্ষার্থী যে সাবজেক্টেই ভর্তি হোক না কেন, সে এখান থেকে পাস করার পর একজন কোয়ালিটিফুল ও যোগ্যতা সম্পন্ন লিডার হবেন। সে যেখানেই যাবে সেখানেই লিড দেওয়ার মতো যোগ্যতা থাকবে। যদি সে এটা করতে না পারে, তাহলে আমি মনে করি, সে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করেনি। আমরা যা শিখিয়েছি, তা সে শিখেনি। তাকে শিখতে হবে, তার আগ্রহ থাকতে হবে।
গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশংসা করে তিনি বলেন, গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ায় আমি অনেক আনন্দিত। এতে শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের মাঝে স্বস্তি এনে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা অনেক ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। তারা একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২০ টি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। তবে এবারে কিছু ভুলভ্রান্তি ছিল। তবে সামনে এগুলো থাকবে না বলে আশা করেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে জাফর ইকবাল বলেন, কিছু শিক্ষক ঠিক করে পড়ায় না। শিক্ষকদের মাঝে ইন্টারনাল পলিটিক্স আছে এ জিনিসটা আমি জানি। আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সময়ে এগুলোর বিরুদ্ধে আজীবন ফাইট করেছি। যাতে শিক্ষকরা শিক্ষার্থী বান্ধব হয়। এগুলো থাকবে, এজন্য শিক্ষার্থীরা হাল ছেড়ে দিবে, এটা ঠিক না।
বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে সময়ের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, আমার অবসরকালে ভালোই কাটছে। আমি যেহেতু লেখালেখি করি এদিকে বেশি সময় কেটে যায়। এখন শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে কাটানো সময়গুলোকে বেশি মনে পড়ে।
২০১৮ সালের ৩ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে এক অনুষ্ঠান চলাকালে অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যার উদ্দেশ্যে ফয়জুর নামক এক যুবক হামলা করেন। এ মামলার সাক্ষ্য দিতে বুধবার সিলেট দায়রা জর্জ আদালতে আসেন তিনি। এরপর অবসরের দুবছর পর নিজ কর্মস্থল শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসে এসে ঘুরে বেড়ান তিনি। দীর্ঘদিন পর তাকে দেখে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েন শিক্ষার্থীরা। অনেক শিক্ষার্থী অভিব্যক্তি প্রকাশ করে প্রিয় শিক্ষকের সাথে ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
Discussion about this post