শিক্ষার আলো ডেস্ক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রথমবর্ষে একজন শিক্ষার্থীকে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হয়। কিন্তু পরে পছন্দের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ হলে শিক্ষার্থীকে সেই ভর্তি বাতিলে গুনতে হচ্ছে বাড়তি টাকা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ভর্তি বাতিলের জন্য বাড়তি টাকা নেওয়া অযৌক্তিক। বরং এক্ষেত্রে ভর্তি ফি কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখে দিয়ে বাকি অংশ শিক্ষার্থীদের ফেরত দেওয়া উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ সেশনে স্নাতক সম্মান প্রথমবর্ষের ভর্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর ফি ৫ হাজার ৩৫ টাকা, নিজ নিজ অনুষদে ১ হাজার টাকা জমা দিতে হয়। সব মিলিয়ে ৬ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হয়। পরে আবার বিভাগের ক্লাস শুরু হলে বিভাগেও প্রায় তিন থেকে চার হাজার টাকা জমা দিতে হয়। এত টাকা জমা দেওয়ার পরে কোনো শিক্ষার্থী যদি অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চাইলে তাকে আবার ১ হাজার থেকে দুই হাজার টাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার বরাবর জমা ও অনুষদে ৫০০ টাকা ফি দিয়ে ভর্তি বাতিল করতে হয়।
আরও জানা গেছে, এক ইউনিট থেকে ভর্তি বাতিল করে অন্য ইউনিটে ভর্তি হতে হলে অনুষদ পরিবর্তন ফি ১ হাজার ২০ টাকা ও বিভাগ উন্নয়ন ফিসহ বেশ কিছু খাতে আরও ৫০০-৬০০ করে বাড়তি টাকা দিতে হতো। তবে এ বছর ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থীদের জন্য এক হাজার টাকা করা হয়েছে।
এমন প্রক্রিয়ার বিষয়ে প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. একরামুল হামিদ এ বিষয়ে বলেন, ভর্তি বাতিলের জন্য অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাই না। কেননা একজন শিক্ষার্থী ভর্তির সময় বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রায় ৫ হাজার টাকার বেশি টাকা পরিশোধ করেন। আবার ওই শিক্ষার্থী যখন ভর্তি বাতিল করেন তখন তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো ব্যয় হয় না। বরং শিক্ষার্থী যে টাকা দিয়ে ভর্তি হয় সেখান থেকে পেপারস খরচ বলে কিছু টাকা রেখে দিয়ে শিক্ষার্থীকে টাকা ফেরত দেওয়া উচিত। সেটা না হয়ে, উলটো হচ্ছে। আবার শিক্ষার্থীর থেকে ভর্তি বাতিল বাবদ ১০০০ টাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিচ্ছে। যা অত্যন্ত অমানবিক।
তিনি আরও বলেন, অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী রয়েছে যারা ভর্তির জন্য টাকা ঋণ করেন। ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো কিছু ব্যবহার না করেই তার থেকে সব ফি নিয়ে নেওয়া সমীচীন নয় বলে মনে করেন তিনি।
রাবির উপ-উপাচার্য প্রফেসর ড. সুলতান উল ইসলাম বলেন, এ টাকা শুধু এ বছর নেওয়া হচ্ছে না। অনেক বছর থেকেই এ রীতি চলে আসছে। ভর্তিসংক্রান্ত যাবতীয় ভর্তি কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেয়। তবে বর্তমান প্রশাসনের বিষয়টি নজরে এসেছে। আগামী বছর ভর্তি কমিটির সভায় উত্থাপন করা হবে। সেখানে পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে। এ বছর কিছুই করার নেই বলে জানান এ প্রো-ভিসি।
রাবি রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালাম বলেন, প্রতি বছর ভর্তি কমিটিতে ভর্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে। পরে সেই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়িত হয়। বর্তমানে ভর্তি বাতিলের জন্য যে টাকা নেওয়া হচ্ছে বা ভর্তির সময়ে পরিশোধিত ফি ফেরত দেওয়া হচ্ছে না সেটা ভর্তি কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাস্তবায়ন হচ্ছে। এ বিষয়ে চলতি সেশনে কিছু করার নেই। কিছু করতে হলে পরবর্তী সেশনে ভর্তি কমিটির সভায় উত্থাপন করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা বলছেন, ভর্তি বাতিলের জন্য বাড়তি টাকা যদি নিতেই হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্তর অনুযায়ী ধারাবাহিকভাবে পরীক্ষা নেওয়া উচিত। এতে কোনো শিক্ষার্থীকে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে হবে না। এতে কোনো ভর্তি বাতিল করতে হবে না। ফলে অভিভাবকরা আর্থিক বিড়ম্বনা ও সিদ্ধান্তহীনতা থেকে রেহাই পাবেন।
Discussion about this post