শিক্ষার আলো ডেস্ক
পনের যুগ অর্থাৎ ১৮০ বছর অতিক্রম করলো ঢাকা কলেজ। আর দুই দশক পর দুই শতাব্দী উদযাপন করবে দেশের সবচেয়ে পুরাতন ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যাপিঠ। আছে ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষাক্ষেত্রে অর্জন বাড়লেও সারাদেশ থেকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত আবাসন সুবিধা দিতে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানটি।
শিক্ষার্থীদের আবাসিক হলগুলোতে ঘুরে দেখা গেছে, আটজনের এক রুমে থাকতে হচ্ছে ১৬ থেকে ২০ জনকে। গণরুম হিসেবে পরিচিত রুমটি একটু বড় হওয়ায় ১০ জন থাকার কথা থাকলেও শিফটিং করে থাকতে হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ জনকে। জরাজীর্ণ কক্ষে খসে পড়ছে সিমেন্টের আস্তরণ ও পলেস্তারা।
জানা গেছে, ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য বর্তমানে ঢাকা কলেজে আবাসিক হল আটটি। এসব হলে কাগজে-কলমে এক হাজার ৬০৮ জন শিক্ষার্থীর নামোল্লেখ থাকলেও প্রকৃতপক্ষে গাদাগাদি করে থাকেন ৪ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী। এর মধ্যে রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে কোনো কোনো রুমে থাকছেন ছাত্রত্ব শেষ হওয়া অনেকে। পড়াশোনা শেষ করেছেন বছর দুয়েকের বেশি হলেও হল ছাড়ছেন না তারা— এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। এর ফলে হলগুলোতে আরও বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের।
হলগুলোর মধ্যে ৫০ বছরেরও বেশি বয়স নর্থ হল ও সাউথ হলের। এ দু’টি হলেরই প্রতিষ্ঠা সাল ১৯৫৫। কাগজে-কলমে পরিত্যক্ত ঘোষণা না করা হলেও বসবাসের অযোগ্য বলেই অভিযোগ হলে বসবাসরত শিক্ষার্থীদের।
নর্থ হলে গিয়ে দেখা যায়, জরাজীর্ণ কক্ষে গাদাগাদি করে থাকছেন শিক্ষার্থীরা। বেশিরভাগ কক্ষেই খসে পড়ছে পলেস্তারা। হলটির বাইরের দিকটাকে রঙ করে টিপটাপ রাখলেও, ভেতরে বড় কোনো সংস্কার কাজ করা হয়নি।
নর্থ হলের গণরুম হিসেবে পরিচিত ১২০ নম্বর কক্ষের সামনে গিয়ে দেখা যায়, এক রুমে গাদাগাদি করে থাকছেন শিক্ষার্থীরা। পাশের একটি ছোট রুম বাসবাসের অযোগ্য বলে সেটি স্টোর হিসেবে ব্যবহার করছেন তারা। বড় রুমে থাকার জন্য ব্যবহার করার পর কোনো জায়গা অবশিষ্ট না থাকায় ছোট রুমটিতে ব্যাগ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখেন শিক্ষার্থীরা। নিভুনিভু করে জ্বলা একটি ২০ ওয়াট বাতির লাল আলোয় একজনের সিঙ্গেল চৌকিতে ঘুমাচ্ছেন তিনজন। এ রুমটিতে সর্বোচ্চ ১২ জন থাকার কথা থাকলেও রাতে ২ শিফটে ৭০ থেকে ৮০ জন ঘুমান।
এ রুমেই থাকেন মুরসালিন। দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মুরসালিন জাগো নিউজকে বলেন, এক রুমে শিফট করে আমরা ৭০ থেকে ৮০ জন ঘুমাই। রাত ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত একটা শিফট। ২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত একটা শিফট। তৃতীয় শিফট চলে ভোর ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত।
ওই শিক্ষার্থী বলেন, তাদের বসবাসের এমন ভোগান্তি নিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গে কখনোই কথা হয়নি। প্রতিষ্ঠান প্রধান এসে তাদের কখনো খোঁজখবরও নেন না বলে দাবি তার। জরাজীর্ণ এ কক্ষের একটা সিট বরাদ্দ পেতেও এক বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে। এর আগে অনেক বার প্রতিবেদন প্রকাশ হলেও কোনো প্রতিকার হয়নি বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
নর্থ হলের দ্বিতীয় তলায় থাকেন ফরিদ। তার কক্ষের সামনে দেখা যায়, গোসল শেষে বারান্দায় কাপড় ছড়িয়ে দিচ্ছেন তিনি। জায়গা না থাকায় নিজের ঘুমানো চৌকির ওপর টাঙানো রশিতে ঝুঁলিয়ে দিচ্ছেন কাপর।
হলের জীবন কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, তিন বছর ধরে হলে থাকছি। এটা থাকার কোনো পরিবেশ না। ঢাকা শহরে থাকতে অনেক খরচ, এজন্য হলে থাকি। এক রুমে গাদাগাদি করে ১৪ থেকে ১৫ জন ঘুমাতে হয়। কিছুই করার নেই। চাকরির জন্য পড়তে হয়। এ কারণে পাশাপাশি ছোট কোনো চাকরি করে মেসে থাকবো সেটাও পারছি না। বাধ্য হয়েই এ পরিবেশে থাকতে হচ্ছে।
দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও হলে একটি সিট বরাদ্দ পাননি সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রফিক। তিনি বলেন, ভেবেছিলাম হলে থেকে পড়াশোনা করে চাকরির জন্য ভালো প্রস্তুতি নেবো। কিন্তু হলে সিট পাচ্ছি না। একটা সিটে থাকার সুযোগ পেলেও গাদাগাদি অবস্থা দেখে আর উঠিনি। মেসে থাকি, পাশাপাশি চাকরি করি। তা নাহলে তো থাকা খাওয়ার খরচ দিতে পারবো না।
শতভাগ শিক্ষার্থীকে আবাসিক সুবিধার আওতায় আনতে কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, শতভাগ শিক্ষার্থীকে আবাসিক সুবিধার আওতায় আনা কষ্টকর। আধুনিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার ঢাকা কলেজের তা নেই। আমাদের পরিকল্পনা আছে একটা মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে সরকারের কাছে দেওয়ার। সে বিষয়ে আমরা দ্রুত উদ্যোগ নেবো। সৌজন্যে-জাগো নিউজ
Discussion about this post