শিক্ষার আলো ডেস্ক
‘ব্যথার দান’ হলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাককানইবি) একমাত্র মেডিকেল সেন্টারের নাম। আর এই মেডিকেল সেন্টারটিতে পর্যাপ্ত সেবা পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
জানা গেছে, প্রায় আট হাজার শিক্ষার্থীর জন্য চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র চারজন। সেন্টটারটিতে নেই রক্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা, ইসিজি কক্ষ ও প্যাথলজি ল্যাব। দুইজন নার্সের মধ্যে একজন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে থাকায় একজন দিয়েই চলছে কাজ। এতসব সমস্যা ও অভিযোগ নিয়েই চলছে ব্যথার দান।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মেডিকেল সেন্টারটিতে চিকিৎসাসেবার তেমন কিছুই পাওয়া যায় না। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগেই চিকিৎসকরা চলে যান। সেন্টটারটি থেকে নাপা-প্যারাসিটামল ছাড়া আর কিছুই মেলে না। ব্যবস্থাপত্রে লিখে দেওয়া অধিকাংশ ওষুধই বাইরে থেকে কিনতে হয়। চিকিৎসক ও স্টাফরাও দায়িত্বশীল আচরণ করেন না।
শাহরিয়ার চৌধুরী নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘ব্যথার দানে গেলে অধিকাংশ সময়ই হতাশ হয়ে ফিরতে হয়। চিকিৎসক থাকেন না সবসময়। থাকলেও পর্যাপ্ত সেবা মেলে না। প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থাও করতে পারেন না তারা। পাঠিয়ে দেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অথবা ময়মনসিংহ মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি জায়গায় থাকার পরও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত, বিষয়টা সত্যিই লজ্জাজনক।
তবে ব্যথার দানের সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. এম এম আশরাফ উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘ওষুধ না দেওয়ার তথ্যটি নিয়ে কিছু সমস্যা আছে। আমরা তুলনামূলক গুণগত মানসম্পন্ন ওষুধ দিয়ে থাকি। যার মূল্য বেশি হওয়ায় পূর্ণাঙ্গ ডোজ দেওয়া যায় না। তবে মানসম্মত ওষুধ দেওয়া হয় এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।’
করোনার শুরুর দিকে প্রয়োজনীয় কিছু সরঞ্জাম কেনার জন্য বরাদ্দ পেয়েছিল মেডিকেল সেন্টারটি। কিন্তু কোনো সরঞ্জামই কেনা হয়নি জানিয়ে সিনিয়র মেডিকেল অফিসার আশরাফ বলেন, যেহেতু ওই সময় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল তাই কোনোকিছু কেনা হয়নি। কর্তৃপক্ষ আবার সেই টাকা ফেরত নিয়েছে। তবে সেখান থেকে আবার কিছু টাকা দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তারা।’
পরিচ্ছন্নতাকর্মী সংকটের বিষয়ে মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্ট মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘নিজেদের অর্থব্যয়ে ও নিজেদের তত্ত্বাবধানে বাইরে থেকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী নিয়ে এসে মাঝে মাঝে মেডিকেল সেন্টারটি পরিষ্কার করছি। অনেক সময় বাধ্য হয়ে রক্তমাখা কাপড়, গজ, ব্যান্ডেজ, তুলা নিজেদেরই পরিষ্কার করতে হয়।’
সিনিয়র মেডিকেল অফিসার আবুল খায়ের মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘প্যাথলজি সেবা দেওয়ার জন্য আমাদের কোনো টেকনোলজিস্ট নেই। সেইসঙ্গে নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি। এছাড়া সেন্টারটিতে চারজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী থাকার কথা থাকলেও একজনও নেই। পর্যাপ্ত জনবলের অভাবে শিক্ষার্থীদের হয়তো শতভাগ সার্ভিসটা দিতে পারিনা। জনবল বাড়ানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার জানিয়েছে।’
আরেক সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডা. এম এম আশরাফ উদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘সেন্টটারটিতে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নেই, নেই পর্যাপ্ত নার্সও। সব মিলিয়ে স্টাফ আছেন মাত্র সাতজন। টেকনিশিয়ান একজনও নেই। ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন থাকলেও কক্ষ নেই। টেকনিশিয়ানের অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। প্যাথলজি ল্যাবও নেই। প্রশাসন নতুন ভবন নির্মাণের আশ্বাস দিলেও বাস্তবায়ন নেই। সর্বোপরি মেডিকেল সেন্টারের সামগ্রিক অবস্থা খুবই খারাপ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রউপদেষ্টা তপন কুমার সরকার বলেন, ‘নতুন হল খোলা হলে প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে অবস্থান করবে। যেকোনো সময় যে কারও সমস্যা হতে পারে। চাই মেডিকেল সেন্টারটি যেনো ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখা হয়। পাশাপাশি যেনো এর সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়।’
রেজিস্ট্রার ড. মো. হুমায়ুন কবীর সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘মেডিকেল সেন্টারটিকে আরও গতিশীল করার উদ্যোগ নিচ্ছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মেডিকেল সেন্টারটির জন্য কিছুই করতে পারিনি। সদিচ্ছা ছিল, কিন্তু দক্ষ টেকনিশিয়ান নিয়োগ দিতে না পারায় তেমন কিছু করা সম্ভব হয় নি। এছাড়াও পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স নেই। সর্বোপরি এটির অসহায় অবস্থা। জনবল নিয়োগের চেষ্টা থাকলেও নানা প্রতিবন্ধকতায় সেগুলো সম্ভব হয় নি।’ সৌজন্যে-জাগো নিউজ
Discussion about this post