শিক্ষার আলো ডেস্ক
গাজীপুর শহর থেকে ৮-১০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের সালনা এলাকার সবুজে সবুজময় প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে উঠেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বশেমুরকৃবি)।
৫৬১ বিঘা জমির ওপর গড়ে ওঠা আধুনিক কৃষির উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন ও গবেষণার সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত এই কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গতকাল ২৪ বছরে পা রেখেছে। ১৯৯৮ সালের ২২ নভেম্বর বশেমুরকৃবি দেশের ১৩তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি আধুনিক, যুগপোযোগী ও লাগসই প্রযুক্তি, উন্নত ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং আধুনিক কৃষি শিক্ষায় শিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি তৈরির লক্ষ্যে ১৯৮৫ সালে ইনস্টিটিউট অভ পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজ ইন এগ্রিকালচার (ইপসা) প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ-জাপান-যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ত্রিপক্ষীয় আর্থিক ও কারিগরী সহযোগিতায় ১৯৯১ থেকে দেশে উচ্চতর কৃষিশিক্ষায় এদেশে সর্বপ্রথম ট্রাইমিস্টার ‘নর্থ-আমেরিকান কোর্স ক্রেডিট শিক্ষাদান পদ্ধতি’র প্রবর্তন করে। কৃষিক্ষেত্রে অল্পসময়েই তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ১৯৯৬-২০০১ শাসনামলে ইপসার দ্বিতীয় সমাবর্তনে প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের ঘোষণা দেন। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে ২২ নভেম্বর যাত্রা শুরু হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের।
শুরু থেকে কৃষির বিভিন্ন বিষয়ে এমএস ও পিএইচডি ডিগ্রীর পাশাপাশি ২০০৫ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর মেয়াদী বিএস (কৃষি), ২০০৯ সাল থেকে বিএস (ফিসারিজ) এবং ২০১০ সাল থেকে ৫ বছর মেয়াদি ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন এবং ২০১২ সাল থেকে কৃষি অর্থনীতি ও গ্রামীণ উন্নয়ন অনুষদের কার্য্যক্রম শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামে বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে এবং বর্তমানে ৫৭ জন বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছেন। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকে মোট ৯৮৭ জনকে বিএস (এগ্রিকালচার), ২৭৩ জনকে বিএস (ফিশারিজ), ১৮৮ জনকে বিএস (কৃষি অর্থনীতি), ১৪৫ জনকে ডিভিএম, ২১১৪ জনকে এমএস, ৩২৭ জনকে পিএইচ ডি এবং ৯৮ জনকে পোস্টগ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. গিয়াসউদ্দীন মিয়া বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশকে সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন, স্বপ্ন পোষণ করেছিলেন একটি সুশিক্ষাসমৃদ্ধ, দক্ষ, সৎ ও মেধাবী জাতি গঠনের। জাতির জনকের সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কৃষি শিক্ষায় বিশ্বমানের দক্ষ গ্র্যাজুয়েট তৈরি এবং লাগসই কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন, কৃষি গবেষণা ও উদ্ভাবিত কৃষি প্রযুক্তি কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার মহান ব্রত নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কাজ করে চলছে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত ধানসহ অন্যান্য অর্থকরী ফসল, সবজি ও তৈল জাতীয় ফসলের ৬০টির বেশি উচ্চফলনশীল জাত ও ১৪ টি কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তিসমুহ কৃষি উন্নয়নে অনন্য অবদান রেখেছে বিশেষ করে বিইউ ধান-১ এবং মুগডালের জাতসমূহ বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে মঙ্গা দূরীকরণে; সয়াবিন, লাউ, শিম, পেঁপে, কুল (আপেলকুল) এর জাতসমুহ দেশের কৃষি উৎপাদনে অসামান্য অবদান রাখছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনা মহামারির মধ্যেও গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিম, চেরি টমেটো, সয়াবিন, ফুলসহ অন্যান্য ফসলের ১৪টি জাত কৃষকের চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়েছে।
মৌলিক গবেষণায় অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে সম্মানজনক আন্তর্জাতিক ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পুরস্কার অর্জন করে।
২০১৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার, ২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার অর্জন করে। ব্যক্তিগত গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষক বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি স্বর্ণপদক, ইউজিসি এওয়ার্ড, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট পদক, বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমীর ফেলো, ইউজিসি প্রফেসর ইত্যাদি জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি অর্জন করেছে। ২০২১ সালে বিশ্বখ্যাত স্কোপাস ও সিমাগো ইনডেক্স জরীপে বশেমুরকৃবি বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে র্যাংকিংয়ে দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে ফেলে গবেষণা, উদ্ভাবন ও সামাজিক অবস্থান এই তিন সূচকে প্রথম স্থান লাভ করে। বিভিন্ন আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তাদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করেছে।
Discussion about this post