শিক্ষার আলো ডেস্ক
‘সারাটি জীবন ধরে বাবার কথা বলছি, কিন্তু বাবাকে কাছে পাইনি। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাবাকে হারিয়েছি। তখন আমার বয়স মাত্র দুই বছর। মা সারাজীবন অশ্রুপাত করেছেন। শুধুমাত্র দেশের মানুষের সুন্দর একটি ভবিষ্যতের জন্য মহান মুক্তিযুদ্ধে অসংখ্য মানুষ নিজের রক্ত ঢেলে দিয়েছেন। শহীদরা তাদের ভবিষ্যৎকে উৎসর্গ করেছেন যেন আমরা ভবিষ্যৎ গড়ে নিতে পারি।’
অশ্রুসজল চোখে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে অধ্যাপক ডা. নুজহাত চৌধুরী। মঙ্গলবার ঢাকা কলেজের শহীদ আ ন ম নজীব উদ্দিন খান খুররম অডিটোরিয়ামে ‘শহীদ বুদ্ধিজীবীদের জীবন, কর্ম ও মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবদান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে তিনি বক্তব্য দেন।
উপস্থিত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে অধ্যাপক ডা. নুজহাত বলেন, তোমরা ঢাকা কলেজের মতো শ্রেষ্ঠ কলেজে পড়ো। কত স্বপ্ন তোমাদের। কেউ ডাক্তার হবে, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউবা সচিব-মন্ত্রী। যে রাস্তা দিয়ে তোমরা ভবিষ্যতের পথে হেঁটে যাচ্ছো, সে রাস্তায় তোমাদের মতো কিছু ছেলে অকাতরে নিজের রক্ত ঢেলে দিয়েছিল। তাদের ভবিষ্যৎ উৎসর্গ করেছিল। তাদের সম্মান রাখতে হবে। তাদের সুন্দর সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, তোমাদের কাছে আসছি, বাবার কথা বলছি। জানি না আমরা তোমাদের অন্তর স্পর্শ করতে পারছি কি না। জানি না তোমরা মুক্তিযুদ্ধকে সম্মান কর কি না, বঙ্গবন্ধুকে চেনো কি না, জাতীয় চার নেতাকে চেনো কি না। আমি জানি না, আমরা তোমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম হিসেবে তোমাদের শত্রু-মিত্রদের চেনাতে পেরেছি কি না। তবে তোমাদের স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা বীরের জাতি। নিঃসন্দেহে আমাদের শহীদরা আমাদের একটি সুন্দর পথ দেখিয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ সমাজ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, এ দেশের প্রতি আমাদের দায় রয়েছে। রক্তের ঋণ রয়েছে। আমরা ইচ্ছা করলেই এ দায় ও ঋণ এড়াতে পারি না। আমরা ইচ্ছা করলেই স্বাধীনতার মূলনীতিকে বিকৃত করতে পারি না। তাই সুন্দর দেশ গড়তে সবাই মিলে করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ২০২১ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবু সৈয়দ মো. আজিজুল ইসলাম। আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন ঢাকা কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক এটিএম মইনুল হোসেন ও শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক ড. আব্দুল কুদ্দুস সিকদার।
সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, বিজয়ের প্রাক্কালে ১৪ ডিসেম্বর জাতিকে মেধাশূন্য করতেই স্থানীয় দোসরদের সহযোগিতায় পরিকল্পিভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছিল। তবুও আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আমরা একটি সুন্দর বাংলাদেশ নির্মাণের প্রত্যয় ব্যক্ত করছি, যেখানে সহযোগী হবে শিক্ষার্থীরা।
Discussion about this post