শিক্ষার আলো ডেস্ক
ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পেতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিকল্প নেই। এই চ্যালেঞ্জ অর্জনে বিশ্ববিদ্যালয় ও এর শিক্ষক-গবেষকদের যেমন এগিয়ে আসতে হবে, তেমনি ইন্ডাস্ট্রি ব্যক্তিদেরকেও কাজ করতে হবে সমানতালে। মূলত একুশ শতাব্দীর এই চ্যালেঞ্জে অবদান রাখার লক্ষ্য নিয়ে তৃতীয়বারের মতো ‘সাসটেইনেবল টেকনোলজিস ফর ইন্ডাস্ট্রি ৪.০’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু করতে যাচ্ছে গ্রিন ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদ আয়োজিত দুই দিনব্যাপী এ সম্মেলন আগামী ১৮-১৯ ডিসেম্বর পূর্বাচল আমেরিকান সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, চীন, জাপান, ফ্রান্স, থাইল্যান্ড, সুইডেন, মালয়েশিয়া, ভারত ও সৌদি আরবসহ বিশ্বের ৩১টি দেশের শতাধিক গবেষক ও অধ্যাপকরা অংশ নেবেন।
আয়োজকরা জানান, আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে মূলত তিনটি পৃথক ট্র্যাক তথা ইনটেলিজেন্ট কম্পিউটিং, নেটওয়ার্ক অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেমস ও ইলেকট্রনিক্স, পাওয়ার অ্যান্ড কমিউনিকেশন সিস্টেমস এবং টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাধান্য পাবে। যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জমা পড়া ১৬৭টি গবেষণা প্রবন্ধ থেকে বাছাই করা ৫৫টি প্রবন্ধ মৌখিক ও ১০টি পোস্টার প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হবে। সম্মেলন পরবর্তী সময়ে গবেষণা প্রবন্ধগুলো আইইইই এক্সপ্লোর ডিজিটাল লাইব্রেরিতে স্থান পাবে।
সম্মেলনের জেনারেল চেয়ার ও গ্রিন ইউনিভার্সিটির উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরে বাংলাদেশের অর্জন আকাশচুম্বী। তারপরও চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অনেক সম্ভাবনাময় অর্জন বাকি। টেকসই উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা নিশ্চিত করতে আধুনিক প্রযুক্তির সব সেবা কাজে লাগাতে হবে। পাশাপাশি পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার সুফল সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে।
ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, শিল্প বিপ্লবের ফসল হিসেবে ইতোমধ্যেই আমাদের সব ক্ষেত্রে নানা পরিবর্তন এসেছে, তা কেবলই সূচনা। আগামীতে কীভাবে এর পরিধি আরও বৃদ্ধি করা যায়- সম্মেলনে সেসব বিষয় নিয়েই নানামুখী আলোচনা হবে।
সম্মেলনের অর্গানাইজিং চেয়ার প্রফেসর ড. মো. সাইফুল আজাদ বলেন, সম্মেলনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইন্ডাস্ট্রি পার্সন ও শিক্ষাবিদদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির কৌশল সংক্রান্ত নানা বিষয় আলোচিত হবে। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর হোসেন প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।
আয়োজকরা জানান, সম্মেলনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আগত গবেষকরা কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, রোবটিক্স অ্যান্ড সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেমের ক্ষেত্রে উদ্ভাবিত গবেষণার ফলাফল ও শিল্প প্রদর্শন করবেন। যা শুধু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়াই নয় বরং স্নাতকদের দক্ষতার মান বাড়াতে শিক্ষা ও শিল্পের মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
সম্মেলনের প্রধান বক্তারা হলেন- আইইইই ফেলো ও যুক্তরাষ্ট্রের মিসৌরি ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির প্রফেসর সজল কে দাস, আইইইই ফেলো ও ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয়েসর প্রফেসর তারেক আবদেলজাহের, আইইইই ফেলো ও সিঙ্গাপুরের রোলস রয়েস ইলেক্ট্রিক্যালের প্রধান অমিত কে গুপ্ত, আইইইইই ফেলো ও ইতালির ইউনিভার্সিটি অব ক্যালাবরিয়ার প্রফেসর জিয়োনকার্লো ফোরটিনো, ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আই-চুন পাং, যুক্তরাষ্ট্রের পারডু বিশ্ববিদ্যালযয়ের তড়িৎ ও কম্পিউটার প্রকৌশলের প্রফেসর মুহাম্মদ আশরাফুল আলম, আইইইই ফেলো ও ইউনিভার্সিটি অব কুইন্সল্যান্ডের তপন সাহা, কানাডার ইউনিভার্সিটি অব সাচকাচুয়ানের প্রফেসর ড. চঞ্চল রায়, উহান টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ঝি চেন ও জার্মানির টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি অব ড্রেসডেনের ড. ইঞ্জিনিয়ার মনিরুদ্দোজা আশির।
এদিকে গবেষক ও শিল্প অনুশীনকারীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি এবং চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনে কমন প্ল্যাটফর্ম তৈরির লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো কাজ করছে এসটিআই এক্সপো-২০২১। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটসহ ৭০টি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ৮টি দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান থেকে তিন শতাধিক শিক্ষক, গবেষক, উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও পলিসি প্ল্যানাররা অংশগ্রহণ করবেন।
মোট তিনটি ট্র্যাক নিয়ে পরিচালিত এই ইভেন্টটি সাসটেইনেবল টেকনোলজিস ফর ইন্ডাস্ট্রি অনুষ্ঠানের সহযোগী ইভেন্ট হিসেবে কাজ করছে। সম্মেলনে টেকনিক্যাল কো-স্পন্সর হিসেবে রয়েছে আইইইই, আইইই কম্পিউটার সোসাইটি। গ্রিন ইউনিভার্সিটি ছাড়াও এতে অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকারের আইসিটি ডিভিশন।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গবেষকরা টেকসই প্রযুক্তিতে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অবদান সম্পর্কে পূর্ণ স্বচ্ছ একটি ধারণা পাবেন। দেশকে এই বিপ্লবের সুবিধা নিতে দিক-নির্দেশনামূলক আলোচনায় অংশ নেবেন- এমনটাই প্রত্যাশা আয়োজক প্রতিষ্ঠান গ্রিন ইউনিভার্সিটি সংশ্লিষ্টদের।
Discussion about this post