শিক্ষার আলো ডেস্ক
বছরের প্রথম দিন নতুন বই পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে শিক্ষার্থীরা। এর পাশাপাশি নতুন জামা, জুতা ও ব্যাগ কেনার ব্যবস্থা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। আর উপবৃত্তির টাকায় স্বাচ্ছন্দ্যে চলতে থাকে তাদের লেখাপড়া। কিন্তু গত দুটি বছর আনন্দ বঞ্চিত হয়েছে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের একাংশ। অভিভাবকের মধ্যেও রয়েছে অসন্তোষ।
শিশুদের জামা, জুতা ও ব্যাগ কেনার (কিটস অ্যালাউন্স) টাকা এবং ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ দুই অর্থ বছরের উপবৃত্তির ৮৬৪ কোটি ২০ লাখ ৩ হাজার ৫০০ টাকা বিতরণ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে এই ভাতা বিতরণ করা যায়নি।
আগামী জানুয়ারিতে নতুন বই বিতরণের সময় শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আবার প্রশ্নের মুখোমুখি হবেন শিক্ষকরা। অথচ ভাতা ও উপবৃত্তি বিতরণকারী সংস্থা হিসেবে ডাক বিভাগের মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস নগদ-এর সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ না বাড়ানোয় এটি বিতরণ করা সম্ভব হয়নি।
জানা গেছে, জুনে নগদ-এর সঙ্গে চুক্তির সময়ের মধ্যেই অর্থ ছাড় করে ইলেট্রনিক মানি হিসেবে সেটি বাংলাদেশ ব্যাংকেও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তারপর একটি চিঠি দিয়ে আবার সেটি আটকে রাখা হয়েছে।
চুক্তির সময়ের মধ্যে ডাক বিভাগ থেকে একাধিকবার এ বিষয়ে ডাক বিভাগের মহাপরিচালক চিঠি দিয়ে বিষয়টি সুরাহা করতে বলা হলেও করা হয়নি।।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, ‘চুক্তির মেয়াদ থাকাকালে শিক্ষার্থীদের কিটস্ অ্যালাউন্স ও উপবৃত্তির অর্থ দেওয়া হয়েছে। তবে মেয়াদ না থাকায় বাকিগুলো আটকে আছে। চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হলে টাকা বিতরণ করা হবে।’
গত ৩০ জুন প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এরপর গত ১৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় জানানো হয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে নগদ-এর চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। মেয়াদ বাড়ানো হলে এসব টাকা বিতরণ করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থ বছরের উপবৃত্তি ও কিটস্ অ্যালাউন্স বাবদ ৮৬৪ কোটি ২০ লাখ ৩ হাজার ৫০০ টাকা সুবিধাভোগীদের অ্যাকাউন্টে বিতরণ করা হয়নি চুক্তির মেয়াদ না থাকায়। চুক্তির মেয়াদ ছিল গত ৩০ জুন। চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে গত ১৩ অক্টোবর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চুক্তির খসড়া অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনও কোনও ব্যবস্থা হয়নি।
আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুনের মধ্যে সব অর্থ বিতরণ শেষ হয়নি, তবে এই কাজ শেষ করতে বাড়তি আর্থিক সংশ্লেষ ছাড়াই চুক্তির মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনপ্রাপ্তির পর চুক্তি সম্পাদন করে উল্লেখিত অবশিষ্ট কাজ সম্পাদন করা হবে। কিন্তু গত ৫ মাসেও কোনও ব্যবস্থায় নেয়নি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রসঙ্গত, অর্থের অভাবে শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপবৃত্তির দেওয়ার ব্যবস্থা নেন। প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকে বৃত্তির অর্থ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ রয়েছে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান করতে হবে। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গড়িমসির কারণে আজ অবধি চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। এমনকি এ নিয়ে কোনও উদ্যোগ এখনও দৃশ্যমান নয়।
Discussion about this post