শিক্ষার আলো ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আবাসিক হলে বিবাহিতদের থাকতে না দেয়ার নিয়মটির কঠোর সমালোচনা করেছেন ছাত্রনেতারা। তারা বলেছেন, এ নিয়মটি চরম বৈষম্যমূলক ও নারীর শিক্ষার অগ্রগতির পরিপন্থী। অবিলম্বে প্রশাসন এ নিয়ম বাতিল না করলে কঠোর আন্দোলনের যাওয়ার কথা বলেছেন ছাত্র সংগঠনগুলো।
সম্প্রতি শামসুন নাহার হল ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলে বিবাহিত হওয়ায় দুই ছাত্রীর সিট নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি আলোচনায় আসে। আন্দোলনে নামে পাঁচটি হলের ছাত্রীরা। নিয়ম বাতিলসহ আরও চার দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দেয়া হয় ভিসিকে। আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শামসুন নাহার হলের সাবেক ভিপি শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি।
ভিসি অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেছেন, এখনই বিধানটি বাতিল করা সম্ভব নয়। হল কর্তৃপক্ষ ও ডিনস কমিটির সভায় আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কোনো পরিবর্তন না আসা পর্যন্ত এ নিয়মটিই বলবৎ থাকবে।
এদিকে, গত ১১ ডিসেম্বর বিবাহিত ছাত্রীদের ৩০ জানুয়ারির মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেয় মাওলানা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়ের আলেমা খাতুন ছাত্রীনিবাস। নির্দেশনাটি নিয়ে ক্যাম্পাসটিতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
ছাত্রীর আন্দোলনে একমত পোষণ করে এবার আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন ছাত্রসংগঠনগুলো।
ছাত্রদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রাকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, এটা সংবিধানবিরোধী একটা সিদ্ধান্ত। আমরা এ বিষয়ে গত ১৪ তারিখে একটা বিবৃতি দিয়েছি। আমরা চাই- অবশ্যই এই আইনটা পরিবর্তন করা হোক। তিনি জানান, শীঘ্রই ভিসির সঙ্গে দেখা করে এ নিয়ম বাতিলের দাবি জানাবে তার সংগঠন।
এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, বিবাহিত হওয়ার কারণে কেউ হলে থাকতে পারবেনা এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক একটি সিদ্ধান্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার প্রথম পরিচয় হচ্ছে শিক্ষার্থী। নাগরিক হিসেবে কে বিবাহিত, কে অবিবাহিত বা অন্য কোন পরিচয়ে আবদ্ধ কিনা এটা দেখার দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নয়। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে এই নিয়ম প্রত্যাহার করার জন্য বলেছি।
ছাত্র অধিকার পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন বলেন, একজন ছেলে বিয়ে করলে তাকে তো হল থেকে বের করে দেয়া হয় না। তাহলে একজন মেয়ের ক্ষেত্রে এরকম কেন। আমরা প্রশাসনকে ইতোমধ্যে নিয়মটি বাতিল করার দাবি জানিয়েছি। তারা যদি এটা প্রত্যাহার না করে তাহলে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (একাংশ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সালমান সিদ্দিকী বলেন, ছাত্রীদের এই আন্দোলনে একাত্মতা রয়েছে আমাদের। অবিলম্বে ছাত্রীদের দাবি মেনে না নিলে আমরাও সাংগঠনিকভাবে কর্মসূচি দেবো।
বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের শাখা সভাপতি আবু রায়হান বলেন, প্রশাসনের কাছে আমরা দাবি জানিয়েছি। নারী শিক্ষার অগ্রগতির পথে বাধা এই নিয়মসহ বাকী নিয়মগুলোও বাতিল করতে হবে।
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাগিব নাঈম বলেন, এটা আসলেই একটা উদ্ভট সিদ্ধান্ত। আমরা অলরেডি প্রশাসনকে এই বিষয়ে জানিয়েছি।
এদিকে ছাত্রীরা অভিযোগ করেছেন, আন্দোলন করার কারণে তাদের হয়রানি করছে হল প্রশাসন। কুয়েম মৈত্রী হলের পদ্ম নামে এক ছাত্রীর সিট বাতিল করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের পাঁচটি হলে আসন বণ্টনসম্পর্কিত নীতিমালার একটি ধারায় বলা আছে, ‘কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে অবিলম্বে কর্তৃপক্ষকে জানাতে হবে। অন্যথায় নিয়ম ভঙ্গের কারণে তাঁর সিট বাতিল হবে। শুধু বিশেষ ক্ষেত্রে বিবাহিত ছাত্রীকে চলতি সেশনে হলে থেকে অধ্যয়নের সুযোগ দেওয়া হবে। অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রী হলে থাকতে পারবেন না।
Discussion about this post